ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ট্রাম্পের মুখোমুখি বাইডেন ও হ্যারিস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১০, ১৩ আগস্ট ২০২০

হ্যারিসকে রানিং মেট ঘোষণার পরে বাইডেন-হ্যারিস এক সাথে ছবি প্রকাশ করেন- সংগৃহীত

হ্যারিসকে রানিং মেট ঘোষণার পরে বাইডেন-হ্যারিস এক সাথে ছবি প্রকাশ করেন- সংগৃহীত

ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন এবং তার সদ্য ঘোষিত রানিং মেট কমালা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন অযোগ্য নেতা হিসাবে উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করে রেখেছেন। তারা দুজনই তাদের নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম অনুষ্ঠানটি এক সাথে করেন। এর আগে বাইডেন তার রানিং মেট হিসেবে মিস হ্যারিসকে প্রথম সামনে আনেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, যে হ্যারিস তার নিজের নির্বাচনী লড়াইয়ে ‘নুড়ি পাথরের মতো নীচে গড়িয়ে পড়ে যাবেন’। বাইডেন নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান ট্রাম্পের মুখোমুখি হবেন। খবর বিবিসি’র। 

বাইডেন কী বলেছেন?
ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে বুধবারের এই নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন। উভয় প্রার্থী মুখে মাস্ক পরে মঞ্চে উপস্থিত হন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরা এক দল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা। সংবাদ সংস্থা বলছে, দুই জন প্রার্থীকে এক ঝলক দেখতে প্রচারণা অনুষ্ঠান শুরুর আগে হালকা বৃষ্টির মধ্যে প্রায় ৭৫ জন লোক বাইরে জড়ো হয়েছিল। যদিও এই ভিড়ে থাকা কয়েকজন বাইডেনের সমালোচক ছিলেন।

অ্যালেক্সিস আই ডুপন্ট হাই স্কুলের জিমনেশিয়াম থেকে বক্তব্য রাখার সময় বাইডেন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর,হ্যারিস হলেন প্রথম কোন বর্ণের নারী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান একটি দলের হয়ে প্রেসিডেন্টের রানিং মেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বাইডেন বলেন, আমরা এই নভেম্বরে যাকে বেছে নেব। তিনি নির্ধারণ করবেন আমেরিকার দীর্ঘ সময়ের ভবিষ্যৎ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে এসব বক্তব্যের জবাব দিতে শুরু করেছেন। কমালাকে জঘন্য বলে সম্বোধন করেছেন এবং কমালা তার নিয়োগকারীর দৃষ্টিতে কেমন, সেটা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। 

তেশরা নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প- সংগৃহীত

বাইডেন বলেন, এটি অবাক হওয়ার কিছু নয় কারণ আমেরিকার ইতিহাসে যে কোনও প্রেসিডেন্টের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি ঘ্যানঘ্যান করেন। একজন নারী অথবা কোন একটি বোর্ড জুড়ে থাকা শক্তিশালী নারীদের নিয়ে যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমস্যা আছে, এতে কি কেউ অবাক হয়েছেন?

তিনি ট্রাম্পের করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্বের হার সামাল দেয়ার ব্যর্থতা এবং তাঁর বর্ণবাদী বক্তব্য ও বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে আক্রমণ করেন।

হ্যারিস কি বলেছেন?
বাইডেনের পর হ্যারিস মঞ্চে এসে বলেন, আমি কাজ করতে প্রস্তুত আছি। ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এই আইনপ্রণেতা সাংবাদিকদের বলেন, আমেরিকার সাথে কী হবে, সেটা নির্ধারণ হতে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের শিশুরা, আমরা যে ধরণের দেশে বাস করছি তার সবকিছুই এর সঙ্গে যুক্ত। হ্যারিস, যিনি কিনা ভারতীয় এবং জ্যামাইকান অভিবাসীর সন্তান- তিনি আরও বলেন, আমেরিকা সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য হাহাকার করছে, অথচ আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আছেন তিনি শুধু নিজের চিন্তায় আছেন। যারা তাকে নির্বাচিত করেছে তাদের দিকে খেয়াল নেই।।

তিনি আরও বলেন, তিনি (ট্রাম্প), বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের কাছ থেকে ইতিহাসের দীর্ঘতম অর্থনৈতিক প্রসার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। এরপর তিনি, তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্ত কিছু সরাসরি মাটিতে ছুঁড়ে নষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, এমনটা তখনই হয়, যখন আমরা এমন একজনকে বেছে নিই যিনি এই কাজের জন্য উপযুক্ত নন- আমাদের দেশকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে আমাদের খ্যাতিও বিনষ্ট হয়েছে।

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সরঞ্জামাদি- সংগৃহীত

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া:
বুধবার হোয়াইট হাউসের একটি সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, কমালা হ্যারিস যখন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন তখন তিনি বাইডেনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। আমি দেখেছি তার জরিপের সংখ্যাগুলো বুম, বুম, বুম, করে নামতে নামতে প্রায় শূন্যে পৌঁছে যায়, এবং তিনি রাগে পাগল হয়ে যান। তিনি (কমালা) বাইডেনের সম্পর্কে ভয়ংকর সব কথা বলেছেন। এমনকি একজন নারী যখন বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তখন তার কথাও হ্যারিস বিশ্বাস করেছিলেন বলে আমার ধারণা। এখন সেই তিনিই বাইডেনের রানিং মেট হয়ে গেলেন। আবার বাইডেন সম্পর্কে ভালো ভালো কথাও বলছেন।

বাইডেনের বিরুদ্ধে এর আগে কয়েকজন নারী অযাচিত ব্যবহার যেমন স্পর্শ এবং চুম্বন করার অভিযোগ তুলেছিলেন। হ্যারিস এসব অভিযোগের বিষয়ে ২০১২ সালের এপ্রিলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি ঐ নারীদের বিশ্বাস করি।
 
বাইডেন সেই সময়ে স্বীকার করেছিলেন যে তাকে অবশ্যই ব্যক্তিগত বিষয়ের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। বাইডেনের বিরুদ্ধে এই বছর আরও গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন সাবেক এক সেনেটের সহযোগী। ১৯৯৩ সালে কংগ্রেসের হলে বাইডেন তাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। এই অভিযোগ অস্বীকার করেন বাইডেন। এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বাদ পড়ে যাওয়া মিস হ্যারিস বলেছেন, মিসেস রিডের ‘তার গল্প বলার অধিকার আছে’।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকজন নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল, যার সবই ট্রাম্প অস্বীকার করেন। বাইডেন-হ্যারিসের এই প্রচারণা অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগেই, ট্রাম্প এই লকডাউনের মধ্যে বাইডেনকে টিটকারির স্বরে বাড়িতে থাকতে বলেন। হোয়াইট হাউসের ইভেন্টে প্রেসিডেন্ট একদল শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেন, ঘরে বসে বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করা স্বাস্থ্যকর কিনা। তারপরে তিনি বলেন, তাহলে আপনি যদি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন এবং আপনি একটি বেসমেন্টে বসে থাকেন এবং আপনি একটি কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকেন, এটি কি ভালো বিষয় নয়?

তারপরে তিনি বাইডেন হ্যারিসের প্রচারণাতে কটাক্ষ করে টুইট করেন, তারা কোরি বুকার, যিনি কিনা একজন কৃষ্ণাঙ্গ, তাকে শহরতলিতে স্বল্প আয়ের আবাসনের দায়িত্বে রাখবেন। এই টুইটকে বর্ণবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন সমালোচকরা।

হোয়াইট হাউস- এবিসি নিউজ

এরপরে কি হবে?
বাইডেন পরের সপ্তাহের দলীয় সম্মেলনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের মনোনয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবেন, যা করোন ভাইরাস মহামারীর কারণে মূলত ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হবে। এক সপ্তাহ পরে রিপাবলিকানদের সম্মেলনে ট্রাম্প তার সহকর্মীদের সমর্থনে হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় দফায় চার বছরের মেয়াদে মনোনীত হবেন। তেশরা নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা তাদের রায় দেওয়ার আগে ১০ সপ্তাহ ধরে প্রচারণা চলবে।

ট্রাম্প এবং বাইডেন ২৯ সেপ্টেম্বর ওহাইও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ড, ১৫ ই অক্টোবর ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি, এবং ২২ অক্টোবর টেনেসির ন্যাশভিলে, তিনটি বিতর্কে অংশ নেবেন। হ্যারিস অক্টোবরে উটাহর সল্টলেক সিটিতে ট্রাম্পের রানিং মেট, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাথে একটি বিতর্কে অংশ নেবেন।

প্রতিবেদক অ্যান্থনি জার্চার যা বললেন:
গত মঙ্গলবার বিকেলে জো বাইডেন তার রানিং মেট হিসেবে কমালা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করেছেন। এরপর তাদের মধ্যে থাকা নানা পার্থক্যের বিষয় সামনে আসে। হ্যারিসের চাইতে বাইডেন প্রায় ২০ বছরের বড়। তিনি একজন শ্বেতাঙ্গ, পেনসিলভেনিয়ার শ্রমজীবী পিতামাতার ছেলে। অন্যদিকে হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ায় জামাইকা এবং ভারতীয় অভিবাসী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। বুধবার তারা প্রথম যৌথ প্রচারণায় অংশ নিয়ে তাদের মধ্যে কী কী বিষয়ে মিল রয়েছে সেগুলো নিয়ে কথা বলেন।

বাইডেন বলেন, তার গল্প হল আমেরিকার গল্প। অনেক ক্ষেত্রে আমার থেকে তিনি আলাদা, তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোয় আমাদের কোন পার্থক্য নেই।

হ্যারিসের কণ্ঠেও ধ্বনিত হয় যে, ‘আমরা দুই প্রার্থী একই কাপড় থেকে কেটে নেয়া দুটো টুকরো’। এটি এমন এক জাতীয় নিরাময় এবং ঐক্যের বার্তা যা আপনি এসব প্রচারনা থেকে আসবে বলে আশা করেন। যদিও এটা প্রার্থীদেরকে সাধারণ নির্বাচনে তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখবে না। একে হোয়াইট হাউজের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ধাপের যুদ্ধ বলে জানিয়েছেন জার্চার। 

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি