সংক্রমণের শীর্ষে তবুও শিথিলতার পথে ভারত
প্রকাশিত : ১০:১১, ৩০ আগস্ট ২০২০
ভারতে ঊর্ধ্বমুখী নমুনা পরীক্ষায় বেড়েই চলেছে করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সংক্রমণের তালিকায় তিনে থাকলেও গত দুই সপ্তাহ থেকে বিশ্বে একদিনে আক্রান্তের হারে শীর্ষে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। এমন অবস্থায় আগামী মাস থেকে মেট্রো রেল পরিষেবাসহ অনুমতি মিলেছে খেলার আয়োজন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশের।
একইসঙ্গে চতুর্থ পর্বের আনলক প্রক্রিয়ায় দেশটির রাজ্যেগুলোর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনে কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে লকডাউন ঘোষণা করতে হলে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে রাজ্যকে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, লকডাউনকে কেন্দ্র করে নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আনলক-৪ পর্ব। এই পর্বে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে মেট্রো পরিষেবা চালু করতে পারবে রাজ্যগুলো। দিল্লি মেট্রো ধাপে ধাপে ওই তারিখ থেকেই চলাচল শুরু করবে। তবে লোকাল ট্রেন চালানোর প্রশ্নে কিছু জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে, আগের মতোই বন্ধ থাকছে যাবতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদিও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ও উচ্চতর শ্রেণির পড়ুয়া, যাদের গবেষণাগারে কাজের প্রয়োজন হয়, তাদের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুমতিসাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বাসস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে হতে হবে। কারণ, কন্টেনমেন্ট জ়োনে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লকডাউন বহাল থাকবে।
এখন পর্যন্ত গোটা রাজ্য বা রাজ্যের কোনও একটি অংশে যে কোনও দিন লকডাউন ঘোষণা করার ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের। কিন্তু নতুন নির্দেশিকায় কেন্দ্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা না-করে কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে কোনও এলাকায় (রাজ্য/জেলা/সাবডিভিশন/শহর পর্যায়ে) লকডাউনের এতকরফা ঘোষণা করতে পারবে না সংশ্লিষ্ট রাজ্য।
ইতিমধ্যেই সেপ্টেম্বর মাসে কোন দিনগুলিতে লকডাউন হবে, তা ঘোষণা করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের প্রশাসন। কিন্তু আজকের পরে রাজ্যে লকডাউন কার্যকর করতে গেলে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে নবান্নের। ফলে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আবহ তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তুনু সেন বলেছেন, ‘প্রত্যেক রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি আলাদা। তাই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের হাতেই থাকা উচিত ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে নির্দেশিকার নামে কেন্দ্রের নির্দেশ ফের রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হল।’
পশ্চিমবঙ্গের মতো পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলিও করোনা পরিস্থিতি বুঝে এত দিন নিজেরাই রাজ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে। আজকের নির্দেশিকায় সমস্যায় পড়তে চলেছে তারাও।
নতুন আনলক-পর্বে একমাত্র ‘ওপেন থিয়েটার’ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকবে অন্যান্য সিনেমা হল, সুইমিং পুল, প্রমোদ উদ্যান, থিয়েটার। তবে ২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে খেলার আয়োজন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। জমায়েতে উপস্থিতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে একশোতে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিহার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এ ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে মোদি সরকার।
অর্থনীতিতে গতি আনতে এ যাবৎ একাধিক গতিবিধি ও কর্মকাণ্ডে ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্র। এ দফায় প্রশ্ন ছিল মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চলাচলের প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত আসে কী-না। দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়া সরকার দীর্ঘ দিন ধরেই রাজধানীতে মেট্রো চালানোর জন্য সরব। একইভাবে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চালানোর প্রশ্নে নীতিগতভাবে রাজি পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রও। কিন্তু দেশে যেখানে প্রতিদিনই ৭০ হাজারের বেশি করোনাক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হচ্ছেন, তখন মেট্রো ও লোকাল ট্রেন একসঙ্গে খুলে দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের মতে, আংশিক ঝুঁকি নিয়েই ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেট্রো সম্পর্কিত সুরক্ষাবিধি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করবে কেন্দ্র। পরিস্থিতির উন্নতি হলে লোকাল ট্রেনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এআই/এসএ/
আরও পড়ুন