ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ফলাফল নিয়ে জটিলতা কীভাবে আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:২৩, ৪ নভেম্বর ২০২০

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে এখন সারা বিশ্বের নজর। কিন্তু এখনও অনেক ভোট গোণা বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন এবং তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু এখনও বৈধভাবে দেয়া কয়েক লাখ ভোট গণনাই করা হয়নি।

এমনটা যে হতে পারে, বিরোধী শিবিরের অনেকেই সেটা আশংকা করেছিলেন। বাইডেন যখন দাবি করছেন যে তিনি জয়ের পথে রয়েছেন, তখন ট্রাম্প ভোট জালিয়াতি এবং ব্যালট চুরির এখনও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তদ্বির শুরু করেছেন যে তিনি এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন।

বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্টনি যুরকার বলছেন, যে দু:স্বপ্নের পরিস্থিতির আশঙ্কা অনেকেই করছিলেন, সেটিই এখন বাস্তবের দিকে এগুচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যা বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে এবং দেশ একটা দীর্ঘ ও তিক্ত আইনি লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যাবে।

প্রচারণার সময়ই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন, নির্বাচনী ফলের ব্যবধান যদি খুব কম হয়, তিনি তার বিজয় ছিনিয়ে নেবার লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনবেন।

বুধবার সকালে তিনি প্রমাণ করলেন তার সেই হুঁশিয়ারি শুধু মুখের কথা ছিল না, সেটা তিনি কাজে পরিণত করতে চান। কয়েক লাখ বৈধ ব্যালট গণনা বাকি থাকতেই তিনি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন।

"আমরা এই নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রস্তুতই ছিলাম। এবং সত্যি কথা বলতে কি, আমরা আসলেই জিতেছি," ট্রাম্প জানান। কোন তথ্য উপস্থাপন না করেই তিনি বলেন ভোটে "জালিয়াতি" হয়েছে।

"আমাদের জাতির জন্য এটা বিশাল এক জালিয়াতি। আমরা এখন যথাযথভাবে আইন ব্যবহার করতে চাই। কাজেই আমরা বিষয়টা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাই এবং আমরা সব ব্যালট গোণা বন্ধ করতে চাই।"

তার ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ জো বাইডেনও বলেন "প্রতিটি ভোট গোণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত" এই নির্বাচন শেষ হবে না। তিনিও জোর দিয়ে বলেন "ডেমোক্র্যাটরা জয়ের পথে রয়েছে।"

আমেরিকায় নির্বাচনী জালিয়াতি
দুই প্রার্থীই এখন ভোট পুনঃগণনার দাবি করতে পারেন, বিশেষ করে যেখানে ফলাফলের ব্যবধান খুবই কম হবে। এবছর যেহেতু অনেক বেশি ভোট পড়েছে ডাকযোগে, তাই এসব ডাকে পাঠানো ব্যালটের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলারও বিধান আমেরিকার আইনে রয়েছে।

দুই দলেরই প্রচারণা টিম থেকে জানানো হয়েছে নির্বাচনের পর আইনি লড়াইয়ের জন্য তারা ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। এবং দুই দলই আইনজীবীদের বড় দল তৈরি রেখেছে ভোট গণনা নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ লড়ার জন্য। এইসব আইনি চ্যালেঞ্জ শেষ পর্যন্ত আমেরিকার সর্বোচ্চ আইনি কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।

যেটা ঘটেছিল ২০০০ সালের নির্বাচনে, যখন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন রিপাবলিকান দলের জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং ডেমোক্র্যাট আল গোর এবং ফ্লোরিডায় ভোট পুনর্গণনার আবেদন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বুশকে।

তবে আমেরিকায় বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন আমেরিকায় অতীতের বিভিন্ন জাতীয় এবং রাজ্য ভিত্তিক নির্বাচন নিয়ে চালানো অসংখ্য জরিপে দেখা গেছে কখনও সখনও বিচ্ছিন্ন প্রতারণার ঘটনা ঘটলেও, নির্বাচনী জালিয়াতির ঘটনা আমেরিকায় বিরল ।

ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস নামে একটি সংস্থা ২০১৭ সালে চালানো তাদের এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় আমেরিকায় নির্বাচনে কারচুপির হার ০.০০০৯%এর চেয়েও কম।

দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান এলেন ওয়েইনট্রাউব এবারের নির্বাচনের আগে বলেন: "ডাকযোগে ভোটদানে জালিয়াতি বা প্রতারণার সুযোগ আছে বলে যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।"

কিন্তু ফলাফল নির্ধারণী ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে যদি ফলাফলের ব্যবধান খুবই কম হয়, তাহলে আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড বি ফলি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে বলেছেন, "পরাজিত প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করে না নেয়া পর্যন্ত এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন সমাধান আমরা দেখব না। পরাজিত প্রার্থী হার মেনে নিয়ে বিজয়ীকে যতক্ষণ না অভিনন্দন জানাচ্ছেন, ততক্ষণ ধরে নিতে হবে ফলাফল নিয়ে বিতর্কের নিষ্পত্তি হতে হবে আদালতের রায়ে।"

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই লড়াই শেষ পর্যন্ত যদি আদালতে গড়ায়, তাহলে সেটা বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে এবং নানাধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে।

আইনি চ্যালেঞ্জ যেভাবে হবে
আমেরিকান সংবিধান অনুযায়ী যে কোন ব্যালটকে দুই প্রার্থীই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। যেহেতু আমেরিকায় ভোট গ্রহণ ও নির্বাচন প্রশাসনের দায়িত্ব রাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষের অধীন তাই প্রাথমিক ভাবে ব্যালট নিয়ে কোন অভিযোগ মোকাবেলার দায়িত্ব থাকবে রাজ্য প্রশাসনের হাতে। কোন পক্ষ ব্যালটের ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলে তারা ভোট পুনঃগণনার আবেদন জানাতে পারবেন নির্বাচন প্রশাসনের কাছে, বা তাকে আইনি চ্যালেঞ্জও জানাতে পারবেন রাজ্যের আদালতে।

এই আবেদন প্রার্থীর পক্ষ থেকেও যেমন জানানো যায়, তেমনি রাজ্যের ইলেকটররাও গণনা নিয়ে বা ব্যালটের বৈধতা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। রাজ্য স্তরে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া আছে, সেটাও রাজ্য ভেদে আলাদা।

রাজ্যের আদালতে অভিযোগের সমাধান না হলে মামলা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়ার বিধান রয়েছে। এবং সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু আমেরিকার সর্বোচ্চ আইনি আদালত তাই এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিধানই চূড়ান্ত।

কী হয়েছিল আল গোর ও বুশ প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
আমরা জানি ২০০০ সালে নির্বাচনের ফলাফলে জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং আল গোরের মধ্যে জয় পরাজয় নির্ধারণের জন্য ইলেকটোরাল ভোটের ব্যবধান ছিল ২১টি ভোটের। ডেমোক্র্যাট আল গোর পেয়েছিলেন ২৬৭ ইলেকটোরাল ভোট আর রিপাবলিকান বুশ পেয়েছিলেন ২৪৬ভোট। শুধুমাত্র ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ২৫টি ভোট বাকি ছিল। সেখানে দুই প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ মানুষের দেয়া ভোটের ব্যবধান এতো কম ছিল, যে সপ্তাহের পর সপ্তাহ জুড়ে ভোট গণনা চলেছিল।

সেই সময় ফ্লোরিডার গভর্নর ছিলেন জর্জ বুশের ভাই জেব বুশ। ২৬শে নভেম্বর তিনি ঘোষণা দেন, ফ্লোরিডার ইলেকটোরাল ভোট জর্জ বুশের পক্ষে যাচ্ছে। পুনরায় গণনার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। তবে সুপ্রিম কোর্ট ৫-৪ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে ভোট পুনঃগণনা বন্ধের আদেশ দিয়ে বুশকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত করার রায় দেন।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি