ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

উহান ল্যাব কর্মীদের পরীক্ষায় মার্কিন প্রস্তাব দুইবার ফিরিয়েছে চীন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩৬, ৮ জুন ২০২১

করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ মহামারীর একেবারের শুরুতেই ভাইরাসটির উৎপত্তি অনুসন্ধান ও এর ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে উহানে মার্কিন বিশেষজ্ঞ পাঠানোর প্রস্তাব দুইবার প্রত্যাখান করেছিলো চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) সাবেক প্রধান ড.রবার্ট রেডফিল্ড এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা জানান তিনি। 

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে সিডিসির প্রধান ড.রবার্ট রেডফিল্ডের সঙ্গে ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি চীনের রোগ নিরাময় সংস্থার প্রধান ড.জর্জ গাও নতুন অদ্ভুত ধরনের এক ভাইরাসের কথা জানান। এ কথা জানার পর ভাইরাসটির উৎপত্তি অনুসন্ধান, সংক্রমন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর তাৎক্ষণিক প্রস্তাব দেন রেডফিল্ড। কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়।  

পরবর্তীতে উহানের একটি বাজারের লোকেরা প্রায় সময়ই নতুন ধরনের রহস্যজনক নিওমোনিয়া আক্রান্ত হলে এ রোগটির ধরন জানতে রেডফিল্ডকে ডেকেছিলেন গাও। এই ভাইরাসটিই পরবর্তীতে কোভিড-১৯ এর রূপ ধারণ করে। রেডফিল্ড সেসময়ও অ্যান্টিবডির জন্য উহানের ল্যাব কর্মীদের পরীক্ষা করতে এবং বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে একদল বিশেষজ্ঞ পাঠানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু তখনও রেডফিল্ডের প্রস্তাব গ্রহন করে নি চীন।

এরপর রেডফিল্ড নিজেই অনুসন্ধান শুরু করেন এবং ভাইরাসটি একজন মানুষ থেকে আরেকজনের মধ্যে সংক্রমিত হয় না গাওয়ের এমন নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কারণ তিনি দেখেছিলেন ভাইরাসটির পারিবারিক গুচ্ছ রয়েছে। এরপর গাও রেডফিল্ডকে ফিরে আসতে বলেন এবং চীনের এই বিজ্ঞানী অশ্রুশিক্তভাবে জানান তারা এমন অনেক ঘটনা দেখতে পাচ্ছেন যেখানে বাজারের কোন সংযোগ নেই- যার অর্থ ভাইরাসটি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হচ্ছে। তখন রেডফিল্ড আবারো বিশেষজ্ঞদল পাঠানোর প্রস্তাব দেন। কারন তিনি জানতেন বিশ্বের যে তিনটি স্থানে করোনা ভাইরাস এবং এর সংক্রমন সক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করা হয় (এই গবেষণাটি গেইন অব ফাংশন নামে পরিচিত) তারমধ্যে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি অন্যতম। বাকি দুটি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা এবং টেক্সাসে অবস্থিত। 

ভ্যানিটি ফেয়ারকে রেডফিল্ড জানান, গবেষকদের পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসন্ধানকারীরা খুব সহজেই বলতে পারতেন উহান ল্যাব থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে কিনা। তিনি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেন কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয় নি।  

একটি টিভি সাক্ষাতকারে রেডফিল্ড বলেছিলেন তিনি বিশ্বাস করেন কোভিড-১৯ একটি ল্যাব থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। এই সাক্ষাতকার দেয়ার পর সহবিজ্ঞানীরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলো। 

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে এবং ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি দল উহান ল্যাব পরিদর্শন করেন এবং এখান থেকে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই সফর শেষে ডব্লিউএইচওর প্রধান জানান তাদের এ পরিদর্শন অসম্পূর্ণ কারণ তারা ল্যাবে মাত্র তিনঘন্টা থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেয়া হয় নি। 

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভাইরাসটির উৎস জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তার দলকে ‘ল্যাব থিওরি’ নিয়ে পুনরায় প্রতিবেদন তৈরি করতে ৯০ দিন সময় দিয়েছেন তিনি । 

ডব্লিউএইচও প্রধানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে হোয়াইট হাউসও চীনকে আরো স্বচ্ছ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং মহামরীর উৎস নিশ্চিতে দেশটিকে সহায়তা করতে বলেছে। তবে চীন এসব পরামর্শ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখান করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যদি ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানীরা চীনের ল্যাব পরিদর্শন করতে পারে; তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবেও বেইজিংয়ের বিজ্ঞানীদের প্রবেশাধিকার দিতে হবে।  

‘গেইন অব ফাংশন’ গবেষণা নিয়ে ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছিলো:

উহান ভাইরোলজি ল্যাবের প্রধান এবং ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার বিশেষজ্ঞদের ২০১৫ সালে লেখা এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছিলো, ‘গেইন অব ফাংশন’ গবেষণায় সমূহ বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর উৎস অনুসন্ধানকারীদের একটি ছোট দল এই কাগজটি উদ্ধার করেন। এই অনুসন্ধানকারী দলটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়াদে উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাথাও পটিংগার নের্তৃত্ব দিয়েছিলেন। 

উহান ‘ল্যাব লিক’ তত্ত্ব অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন তারা; এই অনুসন্ধান দলটি জানিয়েছিলেন প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি নয় বরং ভাইরাসটি মনুষ্যসৃষ্ট। বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যেই অনেকে এই তত্ত্ব মেনে নেন নি। তবে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এটি আন্তরিকভাবে গ্রহন করেন। 

গত বৃহস্পতিবার ভ্যানিটি ফেয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৫ সালের প্রতিবেদনটি আবিষ্কার করা হয়েছে। মোট ১৫ জন লেখক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন, এদের মধ্যে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির প্রধান করোনা ভাইরাস গবেষক শি ঝেংলি এবং ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার মহামারীবিদ রালফ বারিকও রয়েছেন। 

সূত্র: ডেইলি মেইল

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি