আফ্রিকা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে চীন!
প্রকাশিত : ১৯:৪৩, ২৪ জুন ২০২১ | আপডেট: ১৯:৪৫, ২৪ জুন ২০২১
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আফ্রিকায় ‘নমনীয় ক্ষমতা’ বিস্তারের দাবি করে আসছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মহাদেশটিতে কৌশলী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া এখানে ইতিবাচক ভাবমূর্তি স্থাপনের তীব্র উদ্দেশ্যেসহ আগ্রাসি প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এখানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে।
ন্যাশনাল রিভিউতে জিয়ানলি ইয়াং লিখেছেন আফ্রিকায় চীন শোষণমূলক কৌশল অনুসরণ করছে বলে সমালোচনা সত্ত্বেও সেখানে নমনীয় শক্তি বৃদ্ধি চলছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সরবরাহ, চীনকে ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করতে নানা ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়ানো এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশীদার হওয়া।
গণমাধ্যমগুলোয় ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের (চীনের কলেজ ও ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অন্যদেশের কলেজ ও ইউনিভার্সিটির মধ্যে শিক্ষামূলক অংশীদারিত্ব) সংখ্যা বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং বিপুল পরিমান স্কলারশিপ প্রদানের মাধ্যমে এ মহাদেশে শক্ত পদক্ষেপের সূচনা করেছে চীন।
তবে এ অঞ্চলে চীনের এই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সেখানকার জনসাধারণ মোটেও খুশী নয়; আফ্রিকার মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তুষ দানা বাঁধছে। চীনের গুয়াংঝুতে আফ্রিকানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ তাদের এ অসন্তুষকে উসকে দিয়েছে। এছাড়া দু’পক্ষের মধ্যে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক শক্তিশালী বন্ধন না থাকার কারণে চীন ও আফ্রিকার মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এখনো সীমাবদ্ধ।
ন্যাশনাল রিভিওটিতে আরো বলা হয়, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো যখন আফ্রিকার পটভূমি থেকে অনেকটাই সরে এসেছে তখন চীনের গণমাধ্যমগুলো এখানে তাদের উপস্থিতি আরো বাড়িয়েছে। এছাড়া এখানকার স্থানীয় ক্রীড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করার যে স্বপ্ন দেখে আসছিল তা পূরণেও যথেষ্ট সক্রিয় বেইজিং। আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ সব খেলার আয়োজন চীনের হাত ধরেই হয়। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও অর্থনীতি এ দুটি দিক বিবেচনা করেই আফ্রিকার খেলার জগতে নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে চীন। আন্তর্জাতিক ব্রান্ডগুলোর সঙ্গে চীনেও তাল মেলাতে সক্ষম তা প্রমাণ করতে আফ্রিকার বাজারগুলোয় নিজেদের দেশে তৈরি নিম্নমানের পণ্য প্রবেশ করাচ্ছে বেইজিং।
আর এসব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য আফ্রিকার যেসব দরিদ্র দেশে খেলার অবকাঠামোর অভাব রয়েছে সেখানে স্টেডিয়াম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো স্পোর্টস ফ্যাসিলিটিস নির্মাণ করছে চীনা কর্তৃপক্ষ। জিয়ানলি ইয়াং এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘আফ্রিকার দেশগুলোর এখন বোঝার সময় হয়েছে যে ঋণজালে জড়ানোই চীনের পদ্ধতি। অর্থনৈতিকভাবে আঘাত করার পরিবর্তে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তারা দাসত্ব তৈরি করতে সক্ষম।’
এই লেখক আরো বলেছেন আফ্রিকায় ‘নমনীয় শক্তি’ প্রয়োগের দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে বেইজিং মূলত এখানে ‘তীক্ষ্ণ শক্তির’ প্রয়োগ করছে। যেখানে অন্যান্য দেশগুলোয় প্রভাব বিস্তারের জন্য কর্তৃত্ববাদী শাসকরা এখানে উদ্দেশ্যমূলক ও ধ্বংসাত্বক পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
অর্থনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে চীন আফ্রিকায় বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে এবং মিডিয়া হাউসগুলো কিনে নিচ্ছে অথবা অর্থায়ন করছে। এ অবস্থায় আফ্রিকার গণমাধ্যমগুলোর স্বায়ত্বশাসনের বিষয়টি এখন প্রশ্নের সম্মুখিন। এছাড়া চীনের অর্থায়নে আফ্রিকায় ডজনখানেক প্রকল্পের কাজ করছে, যার বেশিরভাগই বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরই) অংশ। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে তেল, ধাতব ও কাঠের মতো পণ্যগুলো আহরণ করে ডেভেলপররা বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করছে বলে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও পরিবেশবাদীরা অব্যাহতভাবে অভিযোগ করে আসছেন।
অনেকেই অভিযোগ করছেন ‘ঋণ-জাল’ কূটনীতির মাধ্যমে চীন মূলত বিভিন্ন দেশকে ফাঁদে ফেলছে। এ অবস্থায় আফ্রিকায় চীনের বিনিয়োগ এখন অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আফ্রিকা ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর চীন থেকে নেয়া পাহাড়সম ঋণের বিষয়ে সতর্ক করছে। সংস্থাটি বলছে চীনের ঋণদাতারা কিছুক্ষেত্রে অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সূত্র: এএনআই
এসি
আরও পড়ুন