বড় ফাটল পৃথিবীর ওজোন চাদরে!
প্রকাশিত : ০৯:১৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
বায়ুমণ্ডলের যে স্তর রুখে দেয় পৃথিবীর উপর ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির (আলট্রাভায়োলেট রে) হামলা, সেই ওজোনের চাদরে এন্টার্কটিকার চেয়েও আয়তনে বড় সুবিশাল একটি ফাটল তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের ওপর নিয়মিত নজরদারির দায়িত্ব যাদের কাঁধে, সেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোপারনিকাস এ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস ১৫ সেপ্টেম্বর এ খবর দিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, এই মৌসুমে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে এত বড় মাপের ফাটল খুবই অপ্রত্যাশিত। অত্যন্ত বিপজ্জনকও মানবসভ্যতার জন্য। ওজোন স্তরে এত বড় মাপের ফাটল শেষ দেখা গিয়েছিল আজ থেকে ৪২ বছর আগে, ১৯৭৯ সালে।
আরও শঙ্কার খবর দিয়েছে কোপারনিকাস এ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস। সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, ওজোন স্তরের ওই ফাটল খুব দ্রুত বড় হচ্ছে। বাড়ছে আকারে, আয়তনে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর (ভূপৃষ্ঠ ও তার কাছাকাছি)-কে বলা হয় ‘ট্রপোস্ফিয়ার’। তার উপরে রয়েছে আর একটি স্তর। যার নাম ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’। সেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের একেবারে উপরের স্তরে রয়েছে ওজোনের পুরু চাদর। নীলাভ গ্যাসের সেই চাদর ভূপৃষ্ঠের সাত থেকে ২৫ কিলোমিটার বা ১১ থেকে ৪০ কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত।
এই ওজোনের পুরু চাদর অতিবেগুনি রশ্মি, সৌরকণা, মহাজাগতিক রশ্মিসহ নানা ধরনের মহাজাগতিক বিকিরণের হাত থেকে বাঁচায় যাবতীয় প্রাণকে। কাজ করে ‘সানস্ক্রিন’-এর মতো।
প্রতিবছরই শীতের শেষের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধের ওপর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরে ফাটল দেখা দেয়। তার জন্য দায়ী মূলত সূর্য। সৌর বিকিরণই পৃথিবীর উপরে থাকা ওজোনের চাদর ফুটো করে দেয়। তার ফলে তৈরি হয় ক্লোরিন ও ব্রোমিনের মতো রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় বিষাক্ত গ্যাস।
কোপারনিকাস এ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের অধিকর্তা ভিনসেন্ট হেনরি পিউচ বলেছেন, এই মুহূর্তে নিখুঁতভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না, বায়ুমণ্ডলের ওজোনের চাদরের এই ফাটল আরও কতটা বড় হবে। আর সেটা আরও কতটা দ্রুত হারে হবে। তবে এটুকু বলা যায় যে, ১৯৭৯ সাল থেকে এই চাদরের ফাটলের আকার বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এই ফাটলকে গভীরতম বলাই যায়। এমনকি তা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। এই ফাটল আকারে, আয়তনে এন্টার্কটিকার চেয়েও বড়।
কোপারনিকাস এ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের দেয়া পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১৯৭৯ সালে ওজোনের চাদরে যে ফাটল দেখা গিয়েছিল, এ বছর তার চেয়েও আকারে ২৫ শতাংশ বড় ওজোনের স্তরের চাদরটি। এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, বায়ুমণ্ডলের ওজোনের স্তরে ফাটলের অন্যতম প্রধান কারণ একটি যৌগ, ‘ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি)’।
এই যৌগটি বাতাসে মিশে থাকা দূষণ কণা ‘এ্যারোসল’-কে অনেক দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থা চালু ও তার দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য গত শতাব্দীর তিনের দশক থেকে যার উৎপাদন শুরু হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি বিশ্বের ১৯৭টি দেশে এই সিএফসি-র উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ। সূত্র: বিবিসি
এমএম/এনএস//
আরও পড়ুন