আর্কটিক অঞ্চলে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় কাউন্সিলের উদ্বেগ
প্রকাশিত : ১৯:৫১, ২৮ অক্টোবর ২০২১
আর্কটিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অঞ্চলটির জোট 'আর্কটিক কাউন্সিল'।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অঞ্চলটির বরফ গলে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সুযোগ তৈরি হওয়া এবং গলে যাওয়া বরফের মধ্য দিয়ে নতুন নৌরুটের মাধ্যমে ইউরোপের সঙ্গে চীনের দুরুত্ব কমে আসায় অঞ্চলটিতে তৎপরতা বাড়াচ্ছে বেইজিং। এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।
দ্য হংকং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন 'আর্কটিক নীতি' ঘোষণা করেছে৷ তার মানে হলো- এই অঞ্চলে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ও সামরিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা করছে দেশটি। অধিকন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন-রাশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা শক্তিশালী হওয়ার ফলে চীন এই অঞ্চলে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার একটি ক্ষেত্র পেয়েছে।
আর্কটিকে চীনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ভালোভাবে দেখছে না অঞ্চলটির জোট। চীন এই অঞ্চলে বড় ভূমিকা পালনের চেষ্টা করায় তা নিয়ে জোটে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। কিছু দেশ সরাসরি এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমনকি রাশিয়াও এই অঞ্চলে চীনকে নিস্ক্রিয় করার ইঙ্গিত দিয়েছে।
দ্য হংকং পোস্ট আরও জানিয়েছে, আর্কটিক অঞ্চলের দেশ না হয়েও চীন নিজেকে অঞ্চলটির 'নিকটবর্তী দেশ' ঘোষণা করে সেখানে তাদের কৌশলগত অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলটিতে চীন পোলার সিল্ক রোড নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। যা বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর একটি সম্প্রসারণ রূপ। এর ফলে, ইউরোপ থেকে চীনের কাঁচামাল দ্রুত পরিবহন করা যাবে। পাশাপাশি চীনের উৎপাদিত পণ্য অল্প সময়ে ইউরোপে রপ্তানি করা যাবে।
'নর্থ আমেরিকান অ্যান্ড আর্কটিক ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক' -এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন তার ক্রমবর্ধমান শক্তি ও সম্পদে ভর করে নিজ ভূখণ্ডের বাইরে নজর দিচ্ছে। যদিও প্রাথমিকভাবে তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো ইউরেশিয়া অঞ্চল। এরপর বিআরআই প্রকল্পের ফলে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা। বর্তমানে তাদের দৃষ্টি আর্কটিকে। অঞ্চলটিতে নিজেদের উপস্থিতি ও প্রভাব বাড়ানোয় তৎপর বেইজিং।
দ্য হংকং পোস্ট জানিয়েছে, চীন আর্কটিকের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী ন্যাভিগেশন রুট স্থাপনে আগ্রহী। কারণ, মালাক্কা প্রণালী এবং সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে বিতর্কিত রুট ব্যবহারের পরিবর্তে নতুন রুটে সাংহাই এবং পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে দূরত্ব দুই সপ্তাহ কমবে। এ ছাড়া ভ্রমণের ৩০ শতাংশ সময় সাশ্রয় হবে।
আর এ বিষয়ে নরওয়েজিয়ান কনসালটেন্সি আকভাপ্লান নিভা-এর আর্কটিক ও চীন বিশেষজ্ঞ রুনু রাউটিও বলেন, 'আর্কটিক অঞ্চল নিয়ে চীনের আগ্রহ ব্যপক। কারণ, এটা তাদের ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বাণিজ্য পথের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিবে। ফলে অঞ্চলটিতে প্রভাব বিস্তারে তারা আমাদের চেয়ে বেশি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে।'
উল্লেখ্য, বর্তমানে আটটি দেশ নিয়ে আর্কটিক কাউন্সি গঠিত। দেশগুলো হলো- রাশিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্কটিক কাউন্সিলের সদস্য। এর বাইরে, ২০১৩ সাল থেকে কাউন্সিলের পর্যবেক্ষক হিসবে রয়েছে চীন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পর্যবেক্ষক থেকে সদস্য হতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। তবে কৌশলগত সুসম্পর্ক থাকলেও চীনের সদস্যপদ আটকাতে কাজ করছে মস্কো। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সূত্র: এএনআই
এসি
আরও পড়ুন