চীনে ফের বাড়ছে করোনার প্রাদুর্ভাব
প্রকাশিত : ২৩:১২, ১৬ নভেম্বর ২০২১
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের মাধ্যমে করোনার ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।
সংক্রমণ রোধে চীন ব্যাপক লকডাউন, গণপরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন ও নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ কোনো ব্যাপারেই ছাড় দেয়নি। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ সত্ত্বেও দেশটির সীমান্ত এলাকার শহরগুলো পুনরায় সংক্রমণ বেড়েছে।
উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশে করোনা উপসর্গযুক্ত ৬৮টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ ছাড়া উপসর্গবিহীন ২২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ হয়েছে। বেইজিং সংলগ্ন হেবেইর প্রদেশটিতে ৬ নভেম্বর ২১ জনের শরীরে নতুন সংক্রমণ হয়েছে। প্রত্যন্ত রুইলি শহরের অবস্থাও একই রকম। মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইউনান প্রদেশের। এখানে এ বছর ১ হাজার ৫০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ রুইলি শহর থেকে ছড়িয়েছে।
চীনের মূল ভূখণ্ডের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ২০টিরও বেশি প্রদেশে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ৮ শতাধিক সংক্রমণ হয়েছে। ২০১৯-২০ সালে উহানে বিশ্বের প্রথম কোভিড প্রাদুর্ভাবের পরে এটি সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব বলা যায়। এই সংখ্যা করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় কম মনে হলেও এবার ভয়ানক হলো করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট, যা অত্যন্ত সংক্রামক ও বেশি ছড়ায়।
চীন সরকার ভাইরাসের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং চীনে আসা লোকদের জন্য কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই ধরনের চেষ্টা সত্ত্বেও, কোভিড-১৯’র ডেল্টা ভেরিয়েন্ট চীনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মিউনিসিপ্যাল সরকার ও ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (এনআইএ) অনেক সরকারি কর্তৃপক্ষ তার নাগরিকদের বাড়িতে থাকতে এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
চীনা কর্তৃপক্ষের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রদেশগুলোর স্থানীয় অর্থনীতির পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে লকডাউন এবং বিধিনিষেধের দীর্ঘায়িত প্রভাব। ঘনঘন লকডাউন এবং বিধিনিষেধ স্থানীয় ব্যবসাকে ব্যাপক ব্যাহত করছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রুলির মতো এলাকায় গত সাত মাসে চারটি লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। তবুও করোনা সংক্রমণে রোধের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি।
শহরটির সাবেক মেয়র দাই রঙ্গির মতে, দীর্ঘ লকডাউন রুইলিকে একটি অচলাবস্থায় ফেলেছে। ফলে রুইলির স্থানীয় অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। স্থানীয় ও জাতীয় স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষায় উৎপাদন ও প্রয়োজনীয় ব্যবসা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সীমান্ত শহরগুলোর বাসিন্দারা সমস্যাটি মোকাবেলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। ২০২১ সালের জুলাইয়ের মধ্যে রুইলির জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশেরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়। তবে মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া চীনে সাম্প্রতিক সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে মনে হচ্ছে। যেহেতু এই শহরগুলো মূলত সীমান্ত বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল, ঘনঘন লকডাউন ও বিধিনিষেধ তাদের মানুষের শারীরিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আর্থিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। রুইলির বাসিন্দারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরে সমর্থন পেয়েছেন।
এভাবে রুইলির মতো সীমান্ত শহরগুলোর দুর্দশা থেকে এটি স্পষ্ট যে সরকারকে করোনভাইরাস মোকাবেলায় তার কৌশলগুলো পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে। কারণ আগের পদক্ষেপগুলো চীনের জাতীয় ও স্থানীয় অর্থনীতির পাশাপাশি জাতীয় প্রতিরক্ষার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এই নতুন চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে চীন সরকার নিরাপত্তা জোরদার করছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিককে সামনে রেখে সরকার চীনা লোকজন, বিদেশি ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চেক বাড়াচ্ছে। বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকও রয়েছে। এ জন্য সরকার রাজধানী শহরটিকে প্রাদুর্ভাব থেকে নিরাপদ রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সরকার শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ, এনআইএ নাগরিক ও বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, মানুষের যাওয়া আসা পরীক্ষা করা, পণ্যবাহী মালামাল পরীক্ষা করা, আংশিক ও সম্পূর্ণ টিকা দেওয়া ব্যক্তিদেরসহ বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন। যেহেতু চীনের পর্যটন শিল্প ২০২০ সাল থেকে বছরে ২৫৫ বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে, তাই সরকার দেশের পর্যটনকে আকৃষ্ট করতে শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনে উঠেপড়ে লেগেছে।
এসি
আরও পড়ুন