ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৬ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সাপ ধরে দাঁত ফুটিয়ে স্ত্রীকে খুন স্বামীর! ধরা খেলেন যেভাবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৯, ২২ নভেম্বর ২০২১

Ekushey Television Ltd.

বিছানার উপর যেন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন উথরা। শুধু বাঁ হাতে রক্তের দাগ লেগেছিল। সেটা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল তার মায়ের। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে জানতে পারেন, সাপের কামড়ে অনেক আগেই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতে সাপের কামড়ে মৃত্যু খুব সাধারণ বিষয়। কিন্তু মাত্র ২৫ বছরের উথরার এই অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না পরিবার। পুলিশে অভিযোগ করেন তারা।

তদন্তে যা উঠে আসে তা জানতে পেরে হতভম্ব হয়ে যায় উথরার গোটা পরিবার। উথরার মৃত্যুর পিছনে আসল কারণ জেনে হকচকিয়ে যাবেন আপনিও। সাপের কামড়েই মৃত্যু হয়েছিল তার কিন্তু আসল খুনি ছিলেন তারই স্বামী! সম্প্রতি কেরলের এই ঘটনা সামনে আসার পর সারা দেশে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

স্বামী সূর্য কুমারের সঙ্গে উথরার পরিচয় হয়েছিল একটি পাত্র-পাত্রীর ওয়েবসাইটেই। সেখান থেকেই মেলামেশা। একে অপরের প্রেমে হাবুডুবুও খেতে শুরু করেন দু’জনে। শেষে ২০১৮ সালে তারা বিয়ে করেন। অন্য মেয়েদের থেকে একটু আলাদা ছিলেন উথরা। ঠিক মতো কথা বলতে পারতেন না তিনি। বোধ বুদ্ধিও তুলনামূলক কম ছিল। তার জন্য এমন একজনের খোঁজে ছিল পরিবার, যিনি উথরাকে সত্যি ভালবাসবেন। উথরার খেয়াল রাখবেন।

সূর্যের বয়স তখন ২৭। ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল। তার বাবা অটো চালিয়ে রোজগার করতেন। উথরার বাড়ির লোক মনে করেছিলেন, সূর্যই উথরার উপযুক্ত স্বামী হয়ে উঠবেন। মেয়ের সঙ্গে ঘটা করে তার বিয়ে দিয়ে দেন। পরবর্তীকালে তারা জানতে পেরেছিলেন, শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভেই উথরাকে বিয়ে করেছিলেন সূর্য। বিয়ের সময় তাই ৭২০ গ্রাম সোনা, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং একটি গাড়ি পণ নিয়েছিলেন।

বিয়ের প্রথম কয়েক মাস সব কিছু মসৃণ ভাবেই চলছিল। তাদের একটি ছেলেও হয়। কিন্তু তার পরই শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা স্বমূর্তি ধারণ করতে শুরু করেন। উথরার পরিবারের কাছে আরও অনেক টাকা দাবি করতে শুরু করেন। সে সমস্ত দাবিও মেনে নেন উথরার বাবা। 

উল্টে মেয়ের দেখাশোনার জন্য প্রতি মাসে জামাইকে আট হাজার টাকা করে দিতে থাকেন। কিন্তু তাতেও সাধ মেটেনি সূর্যের। উথরার শুনতে এবং বলতে পারার সমস্যার কারণে আর তার সঙ্গে সংসার করতে চাইছিলেন না। অথচ বিচ্ছেদের কোনও অজুহাতও দেখানোর ছিল না তার কাছে। সে কারণেই খুনের ছক কষে ফেলেন।

২০১৯ সাল থেকেই বিষধর সাপের সম্বন্ধে জানার কৌতূহল জন্মায় সূর্যের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি ইন্টারনেটে সাপের ভিডিয়ো দেখতেন। ইউটিউবে বিভিন্ন সাপ বিশেষজ্ঞদের চ্যানেল দেখতেন। ওই বছরই ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সাপুড়ের থেকে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপ কিনেছিলেন তিনি। সিঁড়িতে সেই সাপ রেখে উথরাকে দোতলা থেকে মোবাইল ফোন আনার অনুরোধ করেছিলেন। ভেবেছিলেন সিঁড়িতে পা দিলেই চন্দ্রবোড়ার কামড় খাবেন স্ত্রী। কিন্তু তার আগেই সিঁড়িতে সাপটিকে দেখতে পেয়ে গিয়েছিলেন উথরা।

সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। বুঝতেও পারেননি স্বামী তাকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এর কয়েক মাস পর ফের ওই একই সাপ বিছানায় ছেড়ে ঘুমের মধ্যে উথরাকে মারার চেষ্টা করেছিলেন। সাপের কামড় খেয়েও সে বার প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তৃতীয় বার ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি তার। এ বার কেউটে সাপের কামড়ে মৃত্যু হল তার।

সাপ কামড়ানোর পর সে বার অন্তত ৫২ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। এ রকম অবস্থাতেই তার বিছানায় এ বার একটি কেউটে সাপ ছেড়ে দেন স্বামী সূর্য। ঘুমের মধ্যে সাপের কামড় খেয়ে যাতে স্ত্রীর ঘুম ভেঙে না যায়, তাই শোওয়ার আগে ফলের রসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছিলেন উথরাকে।

নিথর শরীরে উপরে ঘোরাফেরা করে বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার উপক্রম করতেই সাপটির মাথা চেপে ধরে উথরার বাঁ হাতে তার বিষদাঁত নিজে বসিয়ে দেন সূর্য। এই ভাবে দু’বার সাপের দাঁত বসিয়ে দেন তিনি। উথরার ময়নাতদন্তের পর একই জায়গায় দু’বার সাপের ছোবল দেখেই সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। কারণ সাপ সাধারণত অকারণে দু’বার কামড়ে বিষ নষ্ট করতে চাইবে না। পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় তদন্তকারীদের ভাবিয়ে তুলেছিল।

গভীর রাতে উথরাকে সাপ কামড়েছিল। সর্প বিশারদদের মতে, সাধারণত রাত আটটার পর কেউটে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর দোতলার যে ঘরে উথরা ছিলেন, সেখানে বাইরে থেকে সাপ ঢোকার কোনও রাস্তাও ছিল না। তার উপর যে সাপটি কামড়েছিল, তাকে পরে ঘরের মধ্যে দেখতে পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলেন উথরার ভাই। সেই সাপ পরীক্ষার পর জানা যায়, গত সাত দিন ধরে সাপটি সম্পূর্ণ না খেয়ে রয়েছে। বন্য সাপ দিনে দু’বার খায়। তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, সাপটি তার মানে এই সাত দিন ধরে কোথাও বন্দি ছিল। এ ছাড়া সাপের কামড় খাওয়ার পর যন্ত্রণায় উথরার ঘুম ভেঙে যাওয়াও উচিত ছিল।

যার কাছ থেকে সূর্য সাপটি কিনেছিলেন, তদন্তে তার সন্ধানও পাওয়া যায়। তাকে গ্রেফতারের পরই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয় তদন্তকারীদের সামনে। খুন করে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিতে দিনের পর দিন ছক কষেছিলেন সূর্য। সাপ ধরাও শিখে নেন তিনি। তাও শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তার। সূত্র: আনন্দবাজার

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি