আফগান নারীদের একা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
প্রকাশিত : ২২:০২, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১
আফগান নারী
আফগানিস্তানের নারীদের একা ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল তালেবান সরকার। তাঁদের মতে, আফগান নারীরা যদি সড়কে বেশি দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে চান, সঙ্গে পুরুষ আত্মীয় থাকলে তবেই তাঁদেরকে পরিবহন সেবা দেয়া হবে।
গত অগাস্টে দেশটির ক্ষমতা হাতে নেবার পর তালেবান নারীদের অধিকার খর্ব করে সবশেষ এই নির্দেশ ঘোষণা করেছে রোববার।
আফগানিস্তানে মেয়েদের বেশিরভাগ সেকেন্ডারি স্কুল এখনও বন্ধ রয়েছে এবং অধিকাংশ নারীর জন্য এখনও কাজে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর এই নিষেধাজ্ঞা নারীদের ঘরে বন্দি করার পথে আরও একটি পদক্ষেপ বলেই মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
নারী অধিকার বিষয়ে সংগঠনের সহকারী পরিচালক হেদার বার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, এই নির্দেশ "নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ বন্ধ করে দেবে, অথবা ঘরে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হলে তাদের পালিয়ে যাবার পথও বন্ধ হয়ে যাবে"।
কী আছে তালেবানের নির্দেশে-
সর্বশেষ এই নির্দেশটি জারি করা হয়েছে তালেবানের নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে। যাতে বলা হয়, কোনও নারী যদি সড়কপথে ৪৫ মাইল (৭২ কিলোমিটার) দূরত্ব পাড়ি দেয়, তাহলে তাদের সাথে পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন পুরুষ আত্মীয়কে থাকতে হবে।
এই নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় কাবুলের বাসিন্দা ধাত্রী ফাতিমা বিবিসিকে বলেন, "আমার খুবই খারাপ লাগছে"। তিনি বলেন, "এর অর্থ- আমি স্বাধীনভাবে কোথাও যেতে পারব না। আমি বা আমার সন্তান যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর স্বামী যদি সে সময় কাছে না থাকেন, তখন আমি কী করব?"
ফাতিমা আরও বলেন, "তালেবান আমাদের কাছ থেকে সুখ কেড়ে নিয়েছে...আমি আমার স্বাধীনতা আর সুখ দুটোই হারিয়েছি।"
এদিকে, এই নির্দেশে গাড়ির মালিকদের বলা হয়েছে, তারা যেন হিজাবহীন নারীদের গাড়িতে না তোলেন। তবে ঠিক কীভাবে মাথা ঢাকতে হবে- সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে বেশিরভাগ আফগান নারীই সাধারণত মাথা ঢাকেন।
এছাড়াও গাড়ির ভেতরে গান-বাজনা চালানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান ও মিত্র বাহিনী চলে যাবার পর ক্ষমতা গ্রহণ করে তালেবান বেশিরভাগ কর্মজীবী নারীকে ঘরে থাকতে বলে এবং শুধু পুরুষ শিক্ষক ও ছেলেদের জন্য মাধ্যমিক স্কুলগুলো খোলা রাখা হয়।
তবে তালেবান জানায়, এইসব বিধিনিষেধ 'সাময়িক' এবং নারী ও কন্যা শিশুদের জন্য সব কর্মস্থল ও শিক্ষাঙ্গণের "নিরাপত্তা" নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ জারি রাখা হবে। ১৯৯০-এর দশকে তালেবানের পূর্ববর্তী শাসনামলে নারীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মস্থলে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
গতমাসে, তালেবান নারীদের টেলিভিশন নাটকে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে এবং নারী সাংবাদিক ও নারী উপস্থাপকদের টিভি অনুষ্ঠানে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করে।
আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তা বন্ধ করে দেয়ায় দেশটি চরম মানবিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে।
দাতা দেশগুলো তালেবান শাসকদের বলেছে, আর্থিক সহায়তা আবার উন্মুক্ত করার আগে তাদের দেশটিতে নারীর অধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। সূত্র-বিবিসি বাংলা।
এনএস//
আরও পড়ুন