কাজাখস্তানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারায় রুশ সৈন্যরা
প্রকাশিত : ১৮:৩২, ৯ জানুয়ারি ২০২২
প্রায় আড়াই হাজার রুশ সৈন্য সাময়িকভাবে কাজাখস্তানে থাকবে বলে জানিয়েছেন রুশ কর্মকর্তারা।
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্টের দফতর জানিয়েছে, দেশটির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখন রুশ সৈন্যরা পাহারা দিচ্ছে। গত ছ'দিন ধরে চলা সহিংসতার পর সেখানে শৃঙ্খলা পুন-প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে রুশ সৈন্যরা কোন কোন স্থাপনা পাহারা দিচ্ছে বা তারা কতদিন থাকবে, তার বিস্তারিত জানায়নি প্রেসিডেন্টের দফতর।
কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ক'দিনের অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের দফতর বলছে, গ্রেফতার হওয়া লোকজনের মধ্যে অনেক বিদেশিও আছে, তবে এই বিদেশিরা কারা, তার বিস্তারিত জানানো হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, "দেশের সব অঞ্চলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, যদিও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।"
তবে গত ক'দিনের সহিংসতায় কত মানুষ নিহত হয়েছে, তার কোন তথ্য সরকারি ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়নি। কাজাখস্তানে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর। কিন্তু পরবর্তীকালে এটি দেশটির ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রূপ নেয় বলে মনে করা হচ্ছে।
কাজাখস্তানের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী করিম মাসিমভকে দেশ এবং সরকারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে গতকাল আটক করা হয়।
কাজাখস্তানে ক'দিন ধরে যে তীব্র সরকারবিরোধী সহিংসতা চলছে, তার সঙ্গে সরকারের ভেতরেই দ্বন্দ্বের সম্পর্ক আছে বলে এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে।
করিম মাসিমভকে গ্রেফতারের খবর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ঘোষণা করে কাজাখস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। মাত্র গত সপ্তাহেই মিস্টার মাসিমভ এই কমিটির প্রধান ছিলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ তাকে সেই পদ থেকে বরখাস্ত করেন।
মাসিমভ শুধু গোয়েন্দা সংস্থারই প্রধান ছিলেন না, এর আগে তিনি দুই দুইবার প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। তাকে সাবেক প্রেসিডেন্ট নুর সুলতান নাযারবায়েভের খুব ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
তাকে অপসারণের মাধ্যমে নাযারবায়েভের অবশিষ্ট ক্ষমতাও খর্ব করা হলো বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নাযারবায়েভ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে যে গুজব, তা নাকচ করে দিয়েছেন তার এক মুখপাত্র।
এদিকে গতকাল ক্রেমলিন বলেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট তোকায়েভের এক দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ হয়েছে। তোকায়েভ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
রুশ সৈন্য কাজাখস্তানে কেন?
প্রেসিডেন্ট তোকায়েভকে সাহায্য করতে রাশিয়া দেশটিতে সৈন্য পাঠিয়েছে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা চুক্তি, সিএসটিওর অধীনে। রাশিয়া বলছে, কাজাখস্তানে তাদের মিশনের লক্ষ্য সীমিত।
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট তোকায়েভও বলেছেন, রুশ সৈন্যরা সেখানে থাকবে সাময়িক কালের জন্য।
কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেন এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন, কাজাখস্তান নিজেই যেখানে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতো, সেখানে রুশ সৈন্য পাঠানোর উদ্দেশ্য নিয়ে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, একবার যদি রাশিয়া কোনো দেশে ঢুকে পড়ে, সেখান থেকে তাদের বের করা কঠিন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাজাখস্তানে সৈন্য পাঠানোর মাধ্যমে রাশিয়া একটি শক্ত বার্তা দিতে চেয়েছে।
সাবেক এই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে কোন ধরনের অস্থিরতা রাশিয়া দেখতে চায় না, এবং প্রয়োজনে তারা সেখানে শক্তি প্রয়োগে দ্বিধা করবে না। অন্যদিকে, কাজাখস্তানের তেল ও গ্যাস খাতে পশ্চিমা দেশগুলোর বিপুল বিনিয়োগ আছে। কাজেই তারা উদ্বেগের সঙ্গে কাজাখস্তানের ওপর নজর রাখছে।
রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক কালে যে ধরণের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর তেমনটি আর দেখা যায়নি। রাশিয়া তার প্রতিবেশী ইউক্রেনে অভিযান চালাতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সৈন্য সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে- এমন খবর গত কিছুদিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছে।
এরকম এক পরিস্থিতিতে সোমবার জেনেভায় রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। রাশিয়া এরই মধ্যে এই আলোচনায় কোন ছাড় দেয়ার কথা নাকচ করে দিয়েছে।
রুশ ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, "আমরা কোন ছাড় দিতে রাজী হবো না। এই আলোচনায় এরকম ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই।" সূত্র: বিবিসি
এসি
আরও পড়ুন