ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানে গোপন রোগে বৈষম্যের শিকার নারী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৪, ২৩ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৫:৪৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

মাতৃত্ব হচ্ছে একজন নারীর পূর্ণতা ও তার জীবনের সবচেয়ে মধুর অভিজ্ঞতা। একজন নারীর গর্ভাবস্থার সময়টা আশা ও আনন্দে পরিপূর্ণ থাকে। তবে বিশ্বের হাজারও নারী নিরাপদ মাতৃত্বের প্রতিশ্রুতি ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রসবকালীন জটিলতায় সবচেয়ে গুরুতর ও বেদনাদায়ক যেসব ক্ষতি নারীর হয়ে থাকে, সেগুলোর একটি হলো প্রসবজনিত অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা।

পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা পান না। বরং নানা রকমের কুসংস্কার ও হেনস্তার শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

দেশটির সিন্ধু প্রদেশের ছোট শহর ঘোটকির আলি মেহের গ্রামের বাসিন্দা রেহানা কাদির দাদ। ত্রিশ বছর বয়সী এই নারী চেয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করে নিজের পছন্দের কোনও কাজ করতে। কিন্তু তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা নামে জটিল এক রোগে। তাতেই ভেস্তে যেতে শুরু করে তার স্বপ্ন।

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা রেহানা ২০১২ সালে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু রাতারাতি তার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। প্রায়ই মারধর করতেন তার স্বামী। তারপরও পরিবারের সম্মানের কারণে সবকিছু মেনে নিয়েছিলেন মুখ বুজে। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে।

গণমাধ্যমমকে তিনি জানান, প্রসবের সময় তার অস্ত্রোপচার বেশ জটিল ছিল। একজন নার্সের ভুলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময় মারাত্মক যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তিনি। বারবার স্বামীকে বলছিলেন, তার নিশ্চয়ই কোনো সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু এ কথা শুনে স্বামী তাকে উল্টো মারধর করেন। লাথি মারেন রেহানার পেটে। এ কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রেহানা। তিনি জানতেন না অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা আসলে কী, কিন্তু তার গ্রামের অন্য নারীদেরও এমন সমস্যা ছিল।

সেখানকার এন্ডোস্কোপিক শল্য চিকিৎসক এবং নারী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ সানা আশফাক বলেন, ‘‘রেহানার মতো একাধিক পাকিস্তানি নারী প্রতিনিয়ত এমন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা হওয়ার পর বেশিরভাগ নারীই তাদের পরিবার, বিশেষ করে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হন। বাসচালকরা পর্যন্ত বাস থেকে নামিয়ে দেন এই নারীদের। তাই রাস্তাঘাটে যাতায়াত করাও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে তাদের জন্যে।’’

করাচির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক শাহিন জাফর জানান, অনেকে এই রোগকে সৃষ্টকর্তার অভিশাপ বলেন, কেউ বা বলেন দুষ্ট আত্মা ভর করেছে ওই নারীদের শরীরে। 

ভুক্তভোগী বেশিরভাগ নারী পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা। হাসপাতালে আসার সামান্য অর্থটুকুও তাদের নেই। দেশটিতে এই রোগের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেই পাকিস্তানি মুদ্রায় ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার রুপি খরচ হয়। জটিল অস্ত্রোপচারে খরচ আরও বেশি।

গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্সরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত নন। এর ফলে প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। এই রোগ নিয়ে গবেষণা চলছে বলেও জানান জাফর। তিনি আরো জানান, প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার নারী অবস্টেট্রিক ফিস্টুলায় আক্রান্ত হন পাকিস্তানে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এমএম/এসবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি