ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

যুদ্ধের হুমকির মধ্যে ইউক্রেনে কেমন আছেন বাংলাদেশিরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৮:১২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ইউক্রেনের খারকিভের বাসিন্দা খালেদা নাসরিন নীলিমা দেশটিতে রয়েছেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। সোভিয়েত আমল থেকে শুরু করে ইউক্রেনের স্বাধীনতা, বর্তমান যুদ্ধাবস্থা-সবই তার চোখের সামনে ঘটেছে।

কিন্তু এতদিন পর ইউক্রেনে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেছেন বাংলাদেশি এই চিকিৎসক।

''এতদিন ধরে যত্ন করে যে বাসা সাজিয়েছিলাম, এখন সেটা ছেড়ে যেতে হবে। আপাতত ওয়েস্টে, পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে কিছুদিন থাকবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেবো ইউক্রেনেই থাকবো, বাংলাদেশে যাবো নাকি অন্য কোথাও যাবো,'' বলছিলেন ডা. খালেদা নাসরিন।

তিনি যে শহরে থাকেন, সেই খারকিভ থেকে রাশিয়ার সীমান্তের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। এটিও পূর্ব ইউক্রেনের একটি শহর। বিমান, ট্যাঙ্ক, ট্রাক্টর ইত্যাদি ভারী যানবাহন তৈরির জন্য এই শহরের পরিচিতি রয়েছে।

''খু্বই উদ্বেগে আছি, তাই অন্য শহরে চলে যাচ্ছি। আগামীকালই চলে যাবো। এই বাসায় বিশ বছর ধরে থাকি, একেবারেই যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আমি এখানে থাকা এখন একেবারেই নিরাপদ বোধ করছি না,'' বলছিলেন ডাঃ নাসরিন।

দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেয়ার পর যুদ্ধ ভীতির ছায়া পড়তে শুরু করেছে এই শহরের ওপরেও। খালেদা নাসরিন আশঙ্কা করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের পুরাদস্তুর যুদ্ধ বেধে গেলে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরের ওপরে প্রথমদিকে তার প্রভাব পড়বে। তাই এর মধ্যেই শহরের অনেক বাসিন্দা শহর ছাড়তে শুরু করেছেন।

''শহরের অবস্থা থমথমে, মানুষজনের চলাফেরা অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে তরুণ বয়সীদের একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। গাড়িতে, পথে আগের মতো মানুষের দেখা মেলে না। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। দোকানপাট খোলা আছে, তবে খাবার, সবজির দাম এক সপ্তাহের মধ্যেই ২০/৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে,'' বলছেন তিনি।

ডাঃ নীলিমা জানান, শহরের অনেক বাসিন্দা গোপনে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তার সন্তান যে স্কুলে পড়ে, সেখানেও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে।

ইউক্রেনে আনুমানিক হিসাবে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বলেছেন, "তারা পুরো ইউক্রেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং ইস্টার্ন ইউক্রেনের যেসব এলাকায় সমস্যা রয়েছে, সেখানেও অনেক বাংলাদেশি আছেন, স্টুডেন্ট আছেন।"

ইউক্রেনে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় পোল্যান্ড দূতাবাস থেকে সেখানকার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বলছেন, যদিও শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন কারণে ইউক্রেন ছাড়ার ব্যবহারিক নানা অসুবিধা আছে, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে ইউক্রেন ছাড়ার কথা ভাবছেন এবং ছাড়ছেনও।

''যারা শিক্ষার্থী বা ব্যবসায়ী হিসাবে এসেছেন, বা চাকরি করেন, তারা চাইছেন সেখানে থেকে যেতে। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে হয়তো তাদের সরে আসতে হবে। অনেকে এর মধ্যেই অন্যত্র সরে যাচ্ছেন,'' বলছেন সুলতানা লায়লা হোসেন।

তবে ইউক্রেনে থাকা বেশিরভাগ বাংলাদেশি এখনি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান না বলে তিনি জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের অবস্থা অবশ্য খারকিভের তুলনায় অনেক স্বাভাবিক রয়েছে।

এই শহরের বাসিন্দা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাহবুব আলম বলছেন, ''সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা আছে, তবে জীবনযাত্রা স্বাভাবিকই বলা চলে। কনসার্ট হচ্ছে, অফিস-আদালত, যানবাহন চলছে। কিন্তু সবার মধ্যেই রাশিয়া নিয়ে একটা আলোচনা আছে।''

তবে রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি যেসব শহরে বাংলাদেশিরা থাকেন, তারা বেশ উদ্বেগে রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

''অনেকের সঙ্গেই আমার নিয়মিত কথা হচ্ছে, যোগাযোগ হচ্ছে। তারা একটু ভয়ে আছেন। তারা অনেকেই ডর্মে বা বাসা থাকছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে তারা হয়তো কিয়েভে চলে আসবেন বা পোল্যান্ডে চলে যাবেন,'' তিনি বলছেন।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বলছেন, ''দুইটি গ্রুপের মাধ্যমে ইউক্রেনে থাকা পাঁচশোর বেশি বাংলাদেশির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের আমরা সহযোগিতার সবরকম আশ্বাস দিয়েছি। তারা পোল্যান্ডে আসলে এখানে সাময়িকভাবে থাকা বা আশ্রয়ের সব ব্যবস্থা করা হবে।''

তিনি জানান, তাদের হিসাবে ইউক্রেনে এখন এক হাজার থেকে ১৫০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। পূর্ব ইউক্রেনের যে অংশে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেখানেও অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে তিনি জানান।

ডা. খালেদা নাসরিন খারকিভের একটি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করেন। সরকারি ভবনে তিনি পরিবার নিয়েই বসবাস করেন। তিনি জানাচ্ছেন, এক সপ্তাহ আগেও খারকিভের স্কুল বা শহর কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যুদ্ধের কোন সম্ভাবনাই নেই।

কিন্তু গতকাল থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, সুযোগ থাকলে তারা যেন অন্য কোন জায়গায় চলে যান। খারকিভে থাকলে সাইরেন বাজতে শুরু করলে যেন তারা ভবনের নীচে থাকা বাঙ্কারে গিয়ে আশ্রয় নেন।

২০১৪ সালের ঘটনাগুলোও তার চোখের সামনেই ঘটেছে। তিনি বলছেন, সেই সময় সব কিছু একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ঘটেছে। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে যেন সবকিছুই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটছে।

খারকিভের বাসিন্দাদের মধ্যে বড় একটি রুশ ভাষাভাষী। তাদের মধ্যে রাশিয়ার হামলা নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ তিনি দেখতে পাননি। তাদের অনেকে ভাবে মনে হয় যেন, কিছু আসে যায় না।

তিনি বলছেন, ''যুদ্ধ না বাধলেও আমি হয় দেশে ফিরে যাবো, না হয় অন্য দেশে চলে যাবো। কারণ এখানে যেসব গভীর সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর আর সমাধান হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।'' সূত্র: বিবিসি

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি