‘ঘুমের মাঝে বিস্ফোরণের শব্দ, কাছ থেকে মৃত্যু দেখেছি’
প্রকাশিত : ১১:১২, ২ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ১১:২৩, ২ মার্চ ২০২২
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন সেখানকার নাগরিকসহ বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এমন পরিস্থিতিতে নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে ইউক্রেন পেরিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে প্রবেশ করছেন বাংলাদেশিরা। তাদেরই একজন আরিফ চৌধুরী, যিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ যাত্রা ছিল। আমার নতুন জন্ম হয়েছে। মৃত্যু যে কত কাছ থেকে দেখেছি, মৃত্যু যে কত প্রকার হতে পারে, সেটা এই পরিস্থিতিতে না গেলে বলে বোঝানো সম্ভব না। আমরা ঠিক এমন পরিস্থিতি দেখে এসেছি যে, ঘুমিয়ে পড়েছি এর মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি।... রাশিয়ার বাড়ি ঘরে হামলা শুরু করেছে। বাড়িতে ঢুকে গুলি করছে। যার জন্যই সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।’’
আরিফ জানান, পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছ থেকে তারা সহায়তা পাচ্ছেন। ইউক্রেনে বাংলাদেশের কনস্যুলারও তাদেরকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ইউক্রেন সীমান্তে নানা সংকট হলেও পোল্যান্ডে ঢুকতে তাদের কোনও সমস্যা হয়নি।
দেশটি সীমান্ত অঞ্চল থেকে বিনা টিকেটে অভিবাসীদের গণপরিবহণে যাতায়াতের সুযোগ দিচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও নানাভাবে অভিবাসীদের সহায়তা দিচ্ছেন। এমনকী স্থানীয় অনেকে অভিবাসীদের থাকার জায়গাও দিচ্ছেন।
সীমান্তে অবস্থান করা অপর এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ‘‘আমি কিয়েভে থাকতাম। কিয়েভের পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। আমরা জীবনের নিরাপত্তার জন্য দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমার পাসপোর্টসহ সব ডকুমেন্টে সই আছে। তখন ওরা (পোল্যান্ড) আমাদের ১৫ দিনের ট্র্যাভেলিং ভিসা দিয়ে দিয়েছে।’’
এদিকে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের ঢলের কারণে দেশটির বিভিন্ন সীমান্তে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে৷। যার কারণে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হেঁটে পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদেরকে।
মেডিকা সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে আসা বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেনও এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ অভিবাসীর সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় সীমান্ত অতিক্রম করেন বলে জানান।
অপর এক বাংলাদেশি শেখ নাসেরউদ্দিন তার যাত্রার ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে বলেন,‘‘ইউক্রেনীয়দের আলাদা লাইনে ইমিগ্রেশনে নেওয়া হয়। সেখানে ওদের ডকুমেন্টও পরীক্ষা করা হয় না। আমরা যারা বিদেশি আছি, তাদের আলাদাভাবে ডকুমেন্ট পরীক্ষা করা হয়। সীমান্তে খুবই ভোগান্তি। আমি ছয় দিন ছয় রাত থেকে..খাওয়া দাওয়া ঘুম নাই, ঠাণ্ডার মধ্যে থেকে এসেছি। এই ছয়দিন রাস্তাতেই ছিলাম। উন্মুক্ত জায়গায় ছিলাম৷’’
শুধু বাংলাদেশি নন এমন দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন মেডিকায় পৌঁছানো ভারতীয় এক শিক্ষার্থীও। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্ত অতিক্রমে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। ভারীব্যাগ নিয়ে আসাটা ছিল খুবই কষ্টকর। আমি হাঁটতেও পারছিলাম না ঠিকমতো।’’
সীমান্তে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে কয়েকজন ভারতীয় মারধরের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভারতীয় ওই শিক্ষার্থী জানান অভিবাসীরা অধৈর্য হয়ে ওঠার কারণে এক পর্যায়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমন অবস্থায় নিরাপত্তকর্মীরাও তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন আচরণ করছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এমএম/এসবি
আরও পড়ুন