ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

গ্যাস সঙ্কটে ইউরোপ, জার্মানির জরুরি পরিকল্পনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:২৩, ৩১ মার্চ ২০২২

রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনার বিনিময় মুদ্রা রুবল করায় বিপাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। মহাদেশটির সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি ইতোমধ্যে এই ইস্যুতে ‘আগাম সতর্কতা’ জারি করেছে। সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোয় নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশগুলোকে রুবলের বিনিময়ে তাদের গ্যাস কিনতে হবে বলে গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

প্রতিবেশী ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে পশ্চিমা বিভিন্ন রাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এতে রুশ মুদ্রা রুবলের মান পড়ে গেছে। প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেন ও তার মিত্র দেশগুলোর ওপর এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন পুতিন।

রাশিয়া যদি তার গ্যাসের মূল্য রুবলে পায়, সেক্ষেত্রে দেশটি পশ্চিমাদের দেওয়া বেশকিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটাতে পারবে। কিন্তু রুবলে গ্যাসের দাম পরিশোধের নির্দেশনার পরই জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যদেশগুলো নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

গ্রিস গ্যাস সরবরাহকারীদের জরুরি সভা ডেকেছে। নেদারল্যান্ডস সরকার বলেছে, গ্রাহকদের তারা কম গ্যাস ব্যবহারের আহ্বান জানাবে। ফ্রান্সের জ্বালানি নিয়ন্ত্রকরা ব্যবহারকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক গ্যাস সরবরাহে বিদ্যমান একটি পরিকল্পনার ‘প্রাথমিক সতর্কীকরণ পর্যায়’ বাস্তবায়ন করেছেন। এই পর্যায়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি সংকট মোকাবিলা টিম, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বেসরকারি খাত আমদানি ও মজুদ পর্যবেক্ষণ করবে।

বুধবার সাংবাদিকদের হাবেক বলেন, জার্মানির গ্যাস সরবরাহ আপাতত নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে গ্রাহক ও কোম্পানিগুলোকে ‘প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা’ হিসাবে গ্যাসের ব্যবহার কমাতে বলা হয়েছে।

যদি সরবরাহে ঘাটতি হয়, তবে জার্মানির নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্যাস বণ্টন বরাদ্দ করে দেবে। এক্ষেত্রে প্রথমে শিল্পক্ষেত্রগুলোর গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গ্যাসের ঘাটতির হুমকি ছাড়াই জার্মানি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে। কারণ জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ইস্পাত ও রাসায়নিক প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে।

জার্মানির ৪ কোটি ঘরবাড়ির অর্ধেকের বেশি  গরম রাখার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে। জাতীয় চাহিদার এক তৃতীয়াংশ গ্যাস শিল্পে লাগে। রাশিয়া জার্মানির শীর্ষ গ্যাস রপ্তানিকারী; দেশটি থেকে ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৪০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করেছে জার্মানি।

রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বার্লিন, কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝির আগে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন হাবেক।

ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি সংকটে ভুগছে ইউরোপ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাসের লেভেল মোট ধারণক্ষমতার ২৬ শতাংশে রয়েছে, যা এই সময়ের স্বাভাবিক স্তরের চেয়ে নিচে পড়ে আছে।

ইউরোপীয়ান কমিশন বুধবার বলেছে, তারা গ্যাসের ঘাটতি পূরণে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করবে। সংস্থাটি প্রস্তাব করেছে, নভেম্বরের মধ্যে গ্যাসের স্তর ৮০ শতাংশে উন্নীত করবে। কিন্তু রাশিয়ার গ্যাসের সরবরাহ ছাড়া তা অসম্ভব।

ইউরোপ তার গ্যাসের ৪০ শতাংশই নেয় রাশিয়ার কাছ থেকে। এতদিন তারা ইউরো বা ডলারে ওই গ্যাসের মূল্য দিয়ে আসছিল। কিন্তু ইউক্রেইনে হামলার জেরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এরই মধ্যে মস্কোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জ্বালানি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে; ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) মস্কোর ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।

আর এই নিষেধাজ্ঞার জবাবে এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া গ্যাসের মুল্য রুবলে নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মস্কোর নতুন এ পদক্ষেপে মূলত ক্রেতা ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোই বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে।

রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে জি৭ ভুক্ত দেশ কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালি।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাশিয়ার সর্বজ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা বুধবার বলেছেন, রাশিয়া তেল, শস্য, সার, কয়লা এবং ধাতুসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যও রুবলে পরিশোধের দাবি করতে পারে, যা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মস্কো বৃহস্পতিবার রুবলে মূল্য পরিশোধের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে পারে। তবে তারা বলেছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে এই মুদ্রায় গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করার দাবি করছে না।

জার্মানির এক মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার ফোনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে বলেছেন, ‘ইউরোপীয় অংশীদারদের জন্য কিছুই পরিবর্তন হবে না’ আর মূল্য পরিশোধ এখনও ইউরোতে করা যাবে এবং গ্যাজপ্রম ব্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে।

অন্যদিকে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, পুতিন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘিকে ফোনে রুবল পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন।

রাশিয়ার দুই কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই পরিবর্তনের একটি বিকল্প ‍হিসেবে রাশিয়া তার ‘অবন্ধু’ দেশগুলোতে গ্যাস রপ্তানিতে চুক্তি অনুযায়ী মূল্য বজায় রাখার পরিকল্পনা করেছে কিন্তু রুবলের সমতুল্য অর্থ পূর্ব-সম্মত স্যাটেলমেন্ট ডে-তেই পরিশোধ করতে হবে।

পশ্চিমা দেশগুলো বলেছে, রুবলে অর্থ পরিশোধ করলে চুক্তি লঙ্ঘন হবে। ফলে পুনরায় আলোচনায় বসতে কয়েক মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। এই আশঙ্কাতেই ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেছে।

এটি মস্কোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকেও ভোঁতা করবে এবং রুবলকে শক্তিশালী করবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধে মস্কোর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে তাদের সুযোগ অনুযায়ী ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইইউ।

গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ না করলে মস্কো সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে, এমন সম্ভাবানাকে সামনে রেখে ইইউ প্রস্তুতি নিচ্ছে, বার্লিনের নজিরবিহীন পদক্ষেপেই তার পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এমন আশঙ্কার মধ্যে ইতালি ও লাটভিয়া সতর্কতা জারি করেছে।

সূত্র: রয়টার্স
এমএম/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি