ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

পুতিন-বাহিনীকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৫০, ৩ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ২১:২৭, ৩ এপ্রিল ২০২২

আগ্নেয়াস্ত্র চালিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারেন না বটে। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিনিও যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। তার হাতিয়ার— কিবোর্ড আর মাউস! মাতৃভূমি ইউক্রেনের দুর্দশায় হ্যাকারদের বিরুদ্ধে পাল্টা হ্যাকিংকেই অস্ত্র করে যুদ্ধে শামিল তিনি।

রাশিয়ার মতো শত্রুপক্ষের সঙ্গে ‘যোগসাজস’ রয়েছে, এমন সাইবার অপরাধীদের একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের কম্পিউটার সিস্টেমে বার বার অন্তর্ঘাতী হামলা চালাচ্ছেন ইউক্রেনের এক সাইবার বিশেষজ্ঞ। নিরাপত্তার খাতিরে যিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের পরিচয় গোপন রেখেছেন।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের চার দিনের মধ্যেই রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের সাইবার অপরাধীদের অন্যতম সিন্ডিকেট কন্টির কম্পিউটার সার্ভার থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ ফাইল, তথ্য-সহ গোপন কথোপকথন ফাঁস হয়ে যায়। এর পিছনে ওই সাইবার বিশেষজ্ঞের হাত রয়েছে বলে দাবি আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর।

দীর্ঘ দিন ধরেই এফবিআইয়ের নজরে রয়েছে সাইবার অপরাধীদের কুখ্যাত গোষ্ঠী কন্টির সদস্যরা। অভিযোগ, আমেরিকার শত শত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোয় আঘাত হেনে লক্ষ লক্ষ ডলারের লোকসান করেছে কন্টি। ইউরোপের বহু ক্ষেত্রের কম্পিউটার সার্ভারে ভাইরাস ঢুকিয়ে সেগুলির পরিষেবাও সাময়িক ভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছিল তারা।

কন্টি আদতে এক ধরনের র‍্যানসমওয়্যারের নাম। বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর কম্পিউটার সিস্টেমে ওই ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে তা ব্লক করে দেওয়াই কন্টির লক্ষ্য। এতে ওই সিস্টেমের পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে গেলে তা চালুর জন্য মোট অঙ্কের অর্থ আদায় করে কন্টি। র‌্যানসময়ওয়্যারের নামেই নিজেদের গ্যাংয়ের নাম রেখেছে এর সদস্যরা। ট্রিকবটের মতো হ্যাকিং টুলও ব্যবহার করে কন্টি।

সাইবার দুনিয়ায় এই অপরাধীদের মুনাফাও বড় একটা কম নয়। ক্রিপটোকারেন্সির লেনদেন করে এমন সংস্থা এলিপ্টিক-এর দাবি, র‌্যানসমওয়্যারের মাধ্যমে ২০২১ সালে মাত্র চার মাসেই কন্টি আয় করেছিল ২.৫৫ কোটি ডলার।

আমেরিকার দাবি, কন্টির মদতদাতাদের মধ্যে রয়েছে ভ্লাদিমির পুতিন সরকার। ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে কৌশলগত সুবিধা নেওয়ার জন্যই এ পদক্ষেপ ক্রেমলিনের। যদি সে দাবি বরাবরই অগ্রাহ্য করেছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরের দিনই রাশিয়াকে নিজেদের সমর্থনের কথা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল কন্টি। এর পরই কন্টির বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী হামলার সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি ওই ইউক্রেনীয় সাইবার বিশেষজ্ঞের।

পরিচয় গোপন রাখলেও ওই বিশেষজ্ঞের সুরক্ষা বজায় রাখতে তাঁকে ড্যানিলো ছদ্মনামে সম্বোধন করতে রাজি হয়েছে সিএনএন। কেন এই যুদ্ধে শামিল হলেন ড্যানিলো? তাঁর দাবি, রাশিয়ার হামলায় ধ্বস্ত নিজের দেশকে আর চিনতেই পারছেন না।

পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনে জন্ম হলেও দীর্ঘকাল দেশের বাইরে ছিলেন ড্যানিলোর। নিজের দেশের দখল রাশিয়ার হাতে চলে যাক, তা কোনও ভাবেই চান না তিনি। ফলে এই যুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁর দক্ষতাকেই হাতিয়ার করেছেন ড্যানিলো। ইউরোপের আন্ডারগ্রাইন্ড সাইবার ক্রিমিনাল ইকনমি নিয়ে পড়াশোনাকেও কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।

ড্যানিলোর দাবি, ২০১৬ সালে প্রথম বার কন্টির কম্পিউটার সার্ভারে হ্যাকিং করতে পেরেছিলেন তিনি। তার পর থেকে চুপচাপ তাঁদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতেন তিনি। কন্টির সার্ভারে ঢুকে ওত পেতে অপেক্ষা করতেন, কখন অপরাধীরা ভুল করে।

সিএনএন-এর কাছে ড্যানিলো বলেন, ‘‘কখনওসখনও ওরা ভুল করে ফেলে। সে সময়ই তাদের ধরে ফেলার সেরা সময়। আমি ওদের গতিবিধির উপর নজর রাখছিলাম। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকায় এ সব করতে পেরেছি।’’

এর আগেও কন্টির কুকীর্তির বহু তথ্যপ্রমাণ ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন দাবি ড্যানিলোর। তবে এ বার তার লড়াই মাতৃভূমির খাতিরে। দেশে ফেরার পর তার প্রিয়জনের ঘরবাড়ির আশপাশে মুহূর্মুহু বোমাবর্ষণ দেখেছেন তিনি। শুনেছেন, অসংখ্য নিরীহ নাগরিকের প্রাণহানির খবর। তাতেই তেতে উঠেছেন বলে দাবি ড্যানিলোর। এর পর অনলাইনে কন্টির তথ্য ফাঁস করে দিতে থাকেন তিনি। ড্যানিলো বলেন, ‘‘আমি গুলি করে লক্ষ্যভেদ করতে পারি না। তবে কিবোর্ড আর মাউস দিয়েই লড়াই চালাতে পারি।’’

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকেই ইউক্রেনের বহু সরকারি ওয়েবসাইটে হানা দিয়েছে অপরাধীরাও। তাতে মদত দিচ্ছে রাশিয়ার সামরিক গুপ্তচর সংস্থা জিআরইউ। যদিও এ দাবি অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। অন্য দিকে, রাশিয়ার বহু সংস্থায় হ্যাকিংয়ের জন্যও ভোলোদিমির জোলেনস্কি সরকার ‘সাইবারযোদ্ধাদের’ উৎসাহ দিয়েছেন বলে দাবি।

বস্তুত, এই যুদ্ধে যেন পার্শ্বযোদ্ধা হিসাবে কাজ করছেন হ্যাকারেরা। ড্যানিলোর মতো বহু ‘সাইবারযোদ্ধা’ই রাশিয়া অথবা ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে নেমেছেন। তবে কন্টির মতো কুখ্যাত গোষ্ঠীর সার্ভারে হানা দেওয়ায় এফবিআইয়ের নজরে পড়ে গিয়েছেন ড্যানিলো। তার সঙ্গে যোগাযোগও করেছে এফবিআই। যদিও তারা কন্টির গোপন তথ্য প্রকাশ্যে না আনার অনুরোধ করেছে ড্যানিলোকে। এফবিআইয়ের আশঙ্কা, এতে সতর্ক হয়ে গিয়ে সার্ভার বদলে ফেলবে কন্টি। তখন তাদের ধরা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

রাশিয়ার হামলা থেকে বাঁচার জন্য বাঙ্কারে আশ্রয় নেওয়ার সময়ও ড্যানিলোর তাঁর ল্যাপটপটি হাতছাড়া করেননি। সেখানে বসেও কন্টির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন তিনি। কেন? ড্যানিলো বলেন, ‘‘এটাই আমার কাজ। এই কাজটা করতে পারি বলেই করছি।’’

মহাশক্তিশালী রাশিয়াকে ধরাশায়ী করার জন্য হ্যাকিংকেই সম্বল করেছেন ড্যানিলো। বলেছেন, ‘‘এ আমার দেশ। যদি ওরা (ইউক্রেন সরকার) আমাকে অস্ত্রের জোগান দেয়, তবে যুদ্ধে যাব। কিন্তু আমি (ল্যাপটপে) টাইপিং করতে ভাল পারি।’’ সূত্র: আনন্দবাজার

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি