আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার বিষয় পুনর্বিবেচনার আহ্বান
প্রকাশিত : ১৭:৫৯, ১৮ এপ্রিল ২০২২
আফগানিস্তানে মেয়েদের স্কুলগুলো পুনরায় চালুর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে তালেবান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য হান্না নিউম্যান।
তিনি বলেছেন, এই কঠোর বিধিনিষেধের কারণে মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা কার্যত তাদের মৌলিক অধিকার।
এমন সময়ে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন, যখন তালেবান শাসকগোষ্ঠী আফগান নতুন বছরের শুরুর দিকে, অর্থাৎ চলতি বছরের মার্চের শেষ নাগাদ সারা দেশে মেয়েদের স্কুল বন্ধের বিষয়টি আরও দীর্ঘায়িত করেছে। এই সময়টিতে প্রধানত দেশটির বেসরকারি এবং সরকারি উভয় ক্ষেত্রেই নতুন করে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
টলোনিউজ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হান্না নিউম্যান বলেছেন, দেশটির নারী শিক্ষার্থীরা এই আশা নিয়েই বসে ছিল যে ২৩ মার্চ থেকে আবারও তারা স্কুলে যেতে পারবে। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি, মেয়েরা আশাহত হয়ে, চোখে জল নিয়েই বাড়ি ফিরে গেছে। কোন কোন পরিবার তাদের শেষ সম্বল দিয়ে মেয়েদের জন্য স্কুলের ব্যাগ আর বই কিনেছিল বলেও উল্লেখ করেছেন হান্না।
সঙ্গত, মার্চ মাসে তালেবান শাসকগোষ্ঠী এক আনুষ্ঠানিক ডিক্রিতে ষষ্ঠ এবং তার ঊর্ধ্বের শ্রেণিতে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে যোগদান নিষিদ্ধ করেছে।
এই সিদ্ধান্তের পর কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছে, সেইসঙ্গে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে অবিলম্বে ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
বুধবার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিউম্যান আফগানিস্তানে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশটিতে বর্তমানে প্রতিবাদকারী, সাংবাদিক এবং মৌলিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা চলছে তার খবর বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে ।
সংবাদ সম্মেলনে হান্না জানান, তিনি এখানকার সহিংসতা সম্পর্কে জেনেছেন। প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কে এমনকি জোরপূর্বক গুমের বিষয়েও জেনেছেন তিনি। এছাড়াও যারা সরকারিভাবে তাদের কাজ করেছেন, কিন্তু নতুন শাসকগণ দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের আর প্রয়োজন হয়নি, এমন মানুষদেরও গুম করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আফগানিস্তানে গোষ্ঠী নেতৃত্বের সমালোচনা করে নিউম্যান বলেছেন, একটি দেশ সঠিকভাবে চালাতে গেলে সঠিক জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, একটি দেশ দখল করতে পারার কারণে আপাতদৃষ্টিতে তালেবানদের ভালো যোদ্ধা মনে হলেও দেশকে শাসন করার জন্য একটি ভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন। বিশেষ করে এমন নেতাদের প্রয়োজন যারা দেশের নাগরিকদের কথা মন দিয়ে শুনবেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিউম্যান একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের আশা করেছেন, যেখানে নারী এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশে একটি বৃহত্তর পরিবর্তন আসবে। তিনি জানান, দেশে ক্রমবর্ধমান হতাশা এবং সহিংসতা এড়াতে এটা একটা ভালো উপায় হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি শীঘ্রই আফগানিস্তানের জনগণ ও সরকারের মধ্যে এমন কিছু সংলাপ দেখতে পাব যাতে আফগানিস্তানের নারী ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ আগস্ট তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর নারীর অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আবারও স্থবির হয়ে পড়ে, যা ছিল ২০০১ সাল পরবর্তী আফগানিস্তান পুনর্গঠন প্রচেষ্টার প্রধান দুইটি অর্জন।
এসি
আরও পড়ুন