ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ধুলোয় মিশে গেল ছবির মতো সুন্দর যে শহর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:০৪, ১৯ এপ্রিল ২০২২

Ekushey Television Ltd.

প্রায় সাত সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকার পর ধুলোয় মিশে গেল মারিউপোল। যদিও ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে গেলেও পতন হয়নি এ শহরের।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর-শহর মারিউপোলের পতন হয়নি বটে। তবে সে শহরের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। তার কথায়, ‘‘এ শহরের আর কোনও অস্তিত্ব নেই।’’

রুশ বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণ এড়াতে মারিউপোলের একটি ইস্পাত কারখানায় হাজারখানেক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন। সোমবার সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন শহর কর্তৃপক্ষ।

মারিউপোলে বোমাবর্ষণের মাঝেই শিশু ও মহিলা-সহ শহরের ওই বাসিন্দারা আজোভস্টাল ইস্পাত কারখানায় আশ্রয় নেন। টেলিগ্রামে একটি বার্তায় এ দাবি শহর কর্তৃপক্ষের। তাতে আরও বলা হয়েছে, ‘আশ্রিতদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও মহিলা। এমনকি, বয়স্করাও তাতে ঠাঁই নিয়েছেন।’

আজোভস্টাল ইস্পাত কারখানায় আশ্রিতদের পাশাপাশি অন্তত আড়াই হাজার ইউক্রেনীয় সেনা রয়েছে বলে মনে করেছিল রাশিয়ার সেনা।

সংবাদমাধ্যমের দাবি, মারিউপোল ধ্বংসের আগে ওই বিশাল কারখানাই ছিল শহরের শেষ গড়। রবিবার পর্যন্ত মারিউপোলকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছিল ভ্লাদিমির পুতিন সরকার। তাতে রাজি হয়নি মারিউপোল। তার ফল যে ভাল হয়নি, তার চিহ্ন চোখে পড়ছে শহর জুড়ে।

সপ্তাহখানেক ধরে মারিউপোলে আক্রমণ ক্রমাগত বাড়িয়েই গিয়েছে রুশবাহিনী। তার পাল্টা হিসাবে ইউক্রেনীয় সেনাদের পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে আমজনতাও। শহর জুড়ে রুশ হামলার চিহ্ন বহন করছেন অট্টালিকার কঙ্কালগুলি। গায়ে বোমাবর্ষণের কালো দাগ। আশপাশের উঁচু গাছগুলির ডালপালায় সবুজের ছোঁয়া গায়েব।

রবিবারের আগে থেকেই রুশ আক্রমণে শহরের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছিল বলে দাবি মারিউপোলের মেয়র বাদিম বয়চেঙ্কোর। তার দাবি ছিল, মারিউপোলের পরিকাঠামোর ৯০ শতাংশ ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী।

রবিবারের হামলার পর ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল ঘোষণা করেছেন, ‘‘রুশ বাহিনীর বোমায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে মারিউপোল, কিন্তু পতন ঘটেনি!’’

একই প্রতিক্রিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার। আমেরিকান সংবাদ সংস্থার কাছে এক সাক্ষাৎকারে কুলেবা বলেছেন, ‘‘মারিউপোলের শোচনীয় অবস্থার মাঝেই স্বল্প সংখ্যক সেনা বেঁচে গিয়েছেন। সাধারণ মানুষদের অনেকেই অবশ্য প্রাণে বেঁচে রয়েছেন। কিন্তু তাঁদেরও চার দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রুশ সেনাবাহিনী।’’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ‘‘বাঁচার জন্য প্রতি দিন লড়াই করছে মারিউপোল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাশিয়ার আচরণে বোঝা যাচ্ছে, যে কোনও মূল্যে এ শহরকে গুঁড়িয়ে দিতে চায় রাশিয়া। সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’

ডনেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর পাবলো কিরিয়েঙ্কাও বলেছেন, ‘‘মারিউপোলকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে দিয়েছে রুশ ফেডারেশন।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, প্রাণ বাঁচাতে অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। তার বেশির ভাগই শিশু ও মহিলা। যাঁরা ইউক্রেনে রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ বয়স্ক। তবে দেশ বাঁচাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন তাঁরাও।

ওই বয়স্কদের মধ্যে রয়েছেন ডনবাস অঞ্চলের বাসিন্দা মিকোলা লুহিনেটসও। ৫৯ বছর বয়সি মিকোলা বলেন, ‘‘এ দেশে সারা জীবন কাটিয়েছি। আমি এখানেই থাকব। প্রয়োজনে লড়াইও করব।’’

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বোঝা চেপেছে। তৈরি হয়েছে রাজনৈচিক চাপও। ভেস্তে গিয়েছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের শান্তি বৈঠকও।

যুদ্ধ নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন, দু’পক্ষই। ইউক্রেন সাফ জানিয়েছে, তাদের দেশে হামলা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি বৈঠকে বসার প্রশ্ন নেই।

তবে রাশিয়ার পাল্টা দাবি, ইউক্রেনই কথার খেলাপ করেছে। তাই যুদ্ধ থামছে না। পুতিন সরকারের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভের দাবি, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ইউক্রেন বার বার নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।’’

সংবাদমাধ্যমের দাবি, মারিউপোল দখলে আসার পর ইউক্রেনের পূর্ব দিকে ডনেৎস্ক এবং লুহানেস্ক (যাকে একত্রে ডনবাস বলা হয়) দখলের জন্য সেনার আক্রমণ তীব্র করার পরিকল্পনা রয়েছে রাশিয়ার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

শুধুমাত্র ওই দু’দেশই নয়, এই যুদ্ধে বিশ্বের অগণিত বাসিন্দা বিপাকে পড়েছেন বলেও দাবি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস জানিয়েছেন, বিশ্বের প্রায় ৪৫টি কম উন্নত দেশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে। তার দাবি, যুদ্ধের ফলে এই সরবরাহের প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে পরোক্ষে হলেও ক্ষতিগ্রস্ত অগণিত সাধারণ মানুষ। সূত্র: আনন্দবাজার

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি