ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র: পাল্টে দিতে পারে শক্তির ভারসাম্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৫৫, ২১ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ২১:৫৯, ২১ এপ্রিল ২০২২

বুধবার ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য উৎক্ষেপণ করা হয়।

বুধবার ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য উৎক্ষেপণ করা হয়।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, সারমাত নামের পরমাণু বোমা বহনকারী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের সবচেয়ে সেরা এবং রাশিয়াকে যারা হুমকি দেয় এখন থেকে সেই শত্রুদের দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল পরীক্ষার পর ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, সারমাত বিশ্বের যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

তার ভাষায়, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্রের সমকক্ষ আর একটিও এখন পৃথিবীতে নেই এবং আসছে বহু বছরেও তা হবে না। এটি আসলেই একটি অদ্বিতীয় অস্ত্র। এটি রাশিয়ার যুদ্ধের সক্ষমতা অনেক শক্তিশালী করবে। যারা ক্ষিপ্তভাবে উগ্র ও আগ্রাসী কথাবার্তা বলে রাশিয়াকে হুমকি দেবার চেষ্টা করছে তাদের এখন থেকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হবে।’

বহু বছর ধরে চলছে ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরির কাজ। বেশ কবার এর উৎক্ষেপণ পেছানোর পর এমন সময় এটির সফল পরীক্ষা চালানো হল যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার দুই মাস হতে যাচ্ছে।

ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে রাশিয়া পেশি শক্তি প্রদর্শনের উপযুক্ত সময় বেছে নিয়েছে, বলছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। তবে বহু বছর চেষ্টার পর ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণ রাশিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

যা বলছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের খবর, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশটির উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত প্লেসেত্স্ক মহাকাশ বন্দর থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য উৎক্ষেপণ করা হয় ২০ এপ্রিল বিকেলে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এটি উৎক্ষেপণের পর আকাশে থাকা অবস্থায় পুরো সময় তার যেসব বৈশিষ্ট্য থাকার কথা সেই অনুযায়ী কাজ করেছে। ছয় হাজার কিলোমিটার দুরে কামচাটকা উপদ্বীপে গিয়ে সেটি সফলভাবে তার টার্গেটে আঘাত হেনেছে।"

ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের বিভিন্ন দিক থেকে তোলা ভিডিও প্রকাশ করেছে রাশিয়া। বিবিসি নিউজে প্রকাশিত এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিকট শব্দ করে মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্রটি। তীব্র বেগে আগুন ও ধোঁয়া বের হয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্রটির নিচের অংশ থেকে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "এটি চলার পথ পরিবর্তন করে তার লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। এটি উৎক্ষেপণ করতে যে যানটি সাহায্য করে সেটি শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে চলে। এর ওয়ারহেডগুলো আলাদা আলাদা লক্ষে আঘাত হানতে পারে। এতে যে কটি ওয়ারহেড রয়েছে, যে গতিতে এটি যাত্রা করে তাতে সারমাত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ক্ষেপণাস্ত্র। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। রাশিয়ার মিসাইল রেজিমেন্টকে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করার কাজ চলমান।"

সারমাত সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
বার্তা সংস্থা তাস এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।

প্রাচীন কালে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং কাজাখস্তান অঞ্চলে বাস করা সারমাতিয়ান নামে একটি যাযাবর গোত্রের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। সেই বাইশ বছর আগে দুই হাজার সালে এটির কাজ শুরু হয়।

দফায় দফায় এর নকশা ও কৌশল পরিবর্তন করা হয়। এটি তৈরির খরচও বেড়েছে অনেকবার। ২০১৪ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন সারমাত দক্ষিণ থেকে উত্তর মেরু উড়ে যেতে সক্ষম।

তাস লিখেছে সারমাত যে কটি পরমাণু 'ওয়ারহেড' বহন করতে পারে তার ওজন ১০ টনের মতো। ক্ষেপণাস্ত্রটির নিজের ওজন দুইশ টন। এটি চলার পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম তাই এটিকে কোন ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী অস্ত্র দ্বারা আঘাত করা কঠিন।

২০১৫ সালে এটি তৈরির কাজ শেষ হয় তবে এটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের দিনক্ষণ বারবার পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর একটি 'প্রোটোটাইপ' উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

২০১৮ সালে এর ব্যাবহার শুরু করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল। সোভিয়েত আমলের ভয়েভোদো ক্ষেপণাস্ত্র যেটি ১৯৮৮ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটির স্থলাভিষিক্ত হবে সারমাত। এটি ব্যাবহারে রাশিয়াতেই প্রস্তুত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, বলেছেন মি.পুতিন।

রাশিয়ার মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা রসকসমসের মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে এই বছরের অক্টোবরের দিকে তারা রাশিয়ার মিসাইল রেজিমেন্টকে ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রেরণের কাজ শুরু করবে।

পশ্চিমের প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমা গণমাধ্যমে সারমাত ক্ষেপণাস্ত্রটিকে "সেটান টু" বা শয়তান দুই নামে অভিহিত করা হচ্ছে। যদিও এটির সফল উৎক্ষেপণে তারা উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে না।

বরং রাশিয়ার মানুষের নজর ঘোরানোর জন্য এটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোষ্টের মতো গণমাধ্যমে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এমন মত দিয়েছেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কার্বি বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এই অস্ত্রটিকে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের অথবা বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য কোন হুমকি হিসেবে দেখছে না।

তিনি বলেছেন, ২০১১ সালের পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি মোতাবেক সারমাত উৎক্ষেপণের আগে মস্কো সময়মত যুক্তরাষ্ট্রকে সে সম্পর্কে অবহিত করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কত পরমাণু অস্ত্র রাখতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর কয়েকদিন পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পারমাণবিক শক্তিকে "বিশেষ সতর্কাবস্থায়" রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জন কার্বি বলেছেন, "(অস্ত্র) পরীক্ষা একটা নিয়মিত ব্যাপার। এই উৎক্ষেপণ সম্পর্কে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে কোন উস্কানি ছাড়াই ইউক্রেনে রাশিয়ার অবৈধ, আগ্রাসী কার্যকলাপ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই নজর রাখছে।" সূত্র: বিবিসি

এসি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি