ক্ষুধার্ত আফগানের মাঝে কতটুকু আনন্দ নিয়ে এল ঈদ?
প্রকাশিত : ১৩:০৮, ২ মে ২০২২ | আপডেট: ১৩:১৭, ২ মে ২০২২
ক্ষুধার কষ্ট নিয়েই রোববার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে আফগানিস্তানের মানুষ। দীর্ঘ দুই বছর করোনাভাইরাসের তাণ্ডবের পর এবারেও সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ইদুল ফিতর আফগানদের মাঝে খুব একটা আনন্দ ফেরাতে পারেনি। কারণ তালেবান নিয়ন্ত্রণের পর থেকে আর্থিক সঙ্কটে দেশটি। দেশটির ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ খাদ্যসংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
৩৮ বছর বয়সী জামাল (ছদ্মনাম) সরকারি চাকরি করতেন। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি সেই চাকরি হারিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, এবারের ঈদ তার জীবনে খুব সামান্য আনন্দ নিয়ে এসেছে।
কেননা, তার পরিবারের সদস্যদের সেহরি ও ইফতারে খাদ্য যোগান দিতে তিনি কাজ বা সহায়তা খুঁজছিলেন। ইসলামের এই পবিত্র মাসের বেশিরভাগ দিন উপবাসের পর তাদের ইফতার করতে হয়েছে রুটি ও পানি দিয়ে।
জামাল বলছিলেন, গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে শুরু হয়েছে একটি ‘মানবিক সংকট’। এরপর থেকে তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য লড়াই করছেন, যাতে পরিবারের ১৭ সদ্যসের জন্য কয়েক টুকরো রুটি সংগ্রহ করতে পারেন। সেই সামান্য খাবারের জন্যও তাদের অনেক সময় প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সহায়তার জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
পাকিস্তানে শরণার্থী শিবিরে বড় হওয়া জামাল বলেন, ‘কে আমাকে টাকা বা খাবার দেবে? পুরো শহর দারিদ্র্যের নিচে বাস করছে। আমি যে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বড় হয়েছি, সেখানেও আমি এমন কিছু দেখিনি।’
এর আগের রমজানে তাদের অবস্থা এতটা ভয়াবহ ছিল না বলে জানান জামাল। তিনি বলেন, ‘প্রতি রমজান ও ঈদে আমরা পরিবার ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ইবাদত করি। রমজান ও ঈদ সবসময়ই আমাদের কাছে একতা ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।’
আফগানিস্তানে মসজিদে সাম্প্রতিক হামলার কথা উল্লেখ করে জামাল বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে রমজান। আমরা শুধু ক্ষুধার্তই নই, ঐক্যও নেই, শান্তিতে উপাসনাও করতে পারছি না।’
গত মার্চে আফগানিস্তান সম্মেলনে জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি আফগানের (দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি) বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
দেশটির নানগারহার প্রদেশের সমাজকর্মী আব্দুল মানান মোমান্দ বলেন, ‘পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে খাদ্য অনুদানের জন্য আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এই রমজানেও তা করেছি। তবে এই বছরটি সবচেয়ে খারাপ গেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা একটি প্রদেশের প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছি। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত আমরা ১২ হাজারের বেশি পরিবারকে সহায়তা প্রদান করেছি।‘
তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটির অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে এই এনজিওকর্মী বলেন, নতুন যেসব পরিবার তাদের কাছে সহায়তা চাচ্ছে, তাদের অনেকের অবস্থা আগে ভালো ছিল। কিন্তু তালেবান ক্ষমতা দখলের পর তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে।
আরও পড়ুন