‘আপাদমস্তক বোরকা’ না পরলে কঠিন শাস্তি দেবে তালেবান
প্রকাশিত : ২১:৪৪, ১২ মে ২০২২
আফগান নারীদের জনসমক্ষে বোরকা পরা বাধ্যতামূলক- মর্মে আদেশ জারি করেছে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। এই আদেশ লঙ্ঘন করলে ওই নারীর পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে তিন দিনের জন্য বন্দি করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
নির্দেশ অনুযায়ী, কোনো নারী হিজাব না পরলে প্রথমেই তার অভিভাবককে সতর্ক করা হবে, যদি সে আবার দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে তার অভিভাবককে তলব করা হবে। পরে যদি এর পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে অভিভাবককে তিন দিনের জন্য কারাবন্দি করা হবে। কয়েকটি টুইট বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে টলো নিউজ।
অভিভাবকের কারবাসের পরেও যদি ওই নারী আবার দোষী সাব্যস্ত হয়, তখন তার অভিভাবককে আরও শাস্তির জন্য আদালতে পাঠানো হবে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, কোন নারী সরকারি কর্মচারীরা হিজাব না পরলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে। সেইসঙ্গে পুরুষ সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের নারী সদস্যরা হিজাব না পরলে ওই পুরুষ সদস্যকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, তালেবান শাসকগোষ্ঠী শনিবার একটি সরকারি আদেশ জারি করে আফগান নারীদের জনসমক্ষে বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছে। ডিক্রিটি নতুন হলেও তালেবানরা গত বছরের আগস্টে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে নারীদের নিজেদের বোরকায় ঢেকে রাখতে বাধ্য করছে। এর আগে, তালেবানের ধর্মীয় পুলিশ রাজধানী কাবুলের চারপাশে পোস্টার লাগিয়েছিল, যাতে আফগান নারীদের নিজেদের বোরকায় ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দেশটির ‘মিনিস্ট্রি ফর প্রমোশন অব ভার্চ্যু অ্যান্ড প্রিভেনশান অব ভাইস’ ক্যাফে এবং দোকানগুলোতে ওই পোস্টার সাঁটিয়েছিল। ওই পোস্টারে মুখ ঢাকা বোরকার ছবির পাশাপাশি লেখা ছিল, ‘শরিয়া আইন অনুযায়ী, মুসলিম নারীদের অবশ্যই হিজাব পরতে হবে।’
এর আগে ১৯৯০ এর দশকে তালেবান তাদের শাসনামলে নারীদের জন্য বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করেছিল। এখন কাবুলের অনেক নারীই মাথার স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে রাখে, যদিও কেউ কেউ শালীন পশ্চিমা পোশাক পরে। তবে কাবুলের বাইরে বোরকাই প্রচলিত ছিল।
তবে এখন তালেবান এই নতুন ডিক্রির মাধ্যমে আফগানিস্তানের প্রতিটি নারীকে আপাদমস্তক ঢাকা বোরকা পরতে বাধ্য করছে। এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে, তালেবান এই মর্মে নির্দেশ জারি করেছিল যে আফগান নারী, যারা সড়কপথে দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করতে চান, তারা কেবলমাত্র একজন পুরুষ আত্মীয় সঙ্গে থাকলেই যাতায়াত করতে পারবেন।
তবে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিশ্বব্যাপী নিন্দা আরও বেড়ে যায় যখন তালেবান মেয়েদের জন্য সমস্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও বেশ কিছু মানবাধিকারকর্মী এবং বিদেশি রাজনৈতিক দল মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য তালেবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ষষ্ঠ শ্রেণির উপরে আফগান নারী শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ায়, তারা ইতোমধ্যেই মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এইচআরডব্লিউ-এর মতে, দেশটিতে নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা পেতেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতার সম্মুখীন নারী ও মেয়েদের পালানোর কোনও পথই নেই।
এসি
আরও পড়ুন