মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
প্রকাশিত : ০৮:৫১, ২৫ মে ২০২২
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আফ্রিকার বাইরে যেসব দেশে সাধারণত মাংকিপক্স রোগ দেখা যায় না, সেখানে এর বিস্তার ঠেকানো সম্ভব।
ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় এপর্যন্ত একশোর বেশি মাংকিপক্স আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে। মাংকিপক্সে আক্রান্তদের শরীরে গুটি দেখা দেয়, জ্বরও আসে।
তবে এসব দেশে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়লেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা কম।
মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে মাংকিপক্সের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশ দেখা যায়।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজ বিষয়ক প্রধান ভ্যান কেরখোভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "পরিস্থিতি এখনো আয়ত্তের মধ্যে রাখা সম্ভব।"
আফ্রিকার বাইরে এই ভাইরাস এ পর্যন্ত ১৬টির বেশি দেশে শনাক্ত করা হয়েছে। গত ৫০ বছরের মধ্যে আফ্রিকার বাইরে এই ভাইরাস আর এতটা ব্যাপকভাবে ছড়ায়নি।
যুক্তরাজ্যে এপর্যন্ত ৫৭ জনের মাংকিপক্স ধরা পড়েছে। মাংকিপক্স আক্রান্ত কারও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে এসেছেন এমন যে কাউকে ২১ দিন পর্যন্ত আলাদা থাকার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
জার্মানি বলছে, মাংকিপক্স আরও বেশি ছড়াতে পারে এমন আশংকায় তারা ৪০ হাজার ডোজ টিকা প্রস্তুত রাখতে বলেছে।
চেক প্রজাতন্ত্র হচ্ছে সর্বশেষ দেশ যেখানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে।
তবে মাংকিপক্স সাধারণত মানুষ থেকে মানুষে সহজে ছড়ায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাংকিপক্সের হুমকিকে করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না।
"সংক্রমণ আসলে ঘটছে একজনের চামড়ার সঙ্গে আরেকজনের শরীরের চামড়ার সংস্পর্শ থেকে। আর এপর্যন্ত যাদের এই সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের বেশ মৃদু রোগই হয়েছে বলতে হবে," বলছেন মিজ ভ্যান কেরখোভ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকজন কর্মকর্তা জানান, এরকম প্রমাণ এখনো নেই যে এই ভাইরাসের কোন মিউটেশন হয়েছে। এর আগে এবার কেন মাংকিপক্স এতটা ছড়ালো তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুটিবসন্ত দফতরের প্রধান রোজামন্ড লুইজ বলেন, "এই গ্রুপের ভাইরাসগুলোতে সাধারণত মিউটেশন বা ধরণ পরিবর্তন হতে দেখা যায় না, এগুলো মোটামুটি একই রকম থাকে।"
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষ হয়তো অন্যান্যদের চাইতে বেশি ঝুঁকিতে আছেন মাংকিপক্সের কারণে।
"বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা খুবই কম", বলছেন ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোলের ডঃ অ্যান্ড্রিয়া অ্যামন।
"তবে খুব ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এই রোগ আরও ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশ আছে। বিশেষ করে যেসব মানুষ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হন, তাদের মধ্যে", বলছেন তিনি।
মাংকিপক্সকে এর আগে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগ বলে বর্ণনা করা হয়নি, তবে যৌনকর্মের সময় সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে।
ডঃ অ্যামন বলেন, বিভিন্ন দেশের উচিৎ গুটি বসন্তের টিকা পাওয়া যাচ্ছে কীনা তা পর্যালোচনা করে দেখা, কারণ মাংকিপক্সের বিরুদ্ধেও গুটি বসন্তের টিকা কাজ করে।
মাংকিপক্সে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সঙ্গে একই বাড়িতে আছেন বা আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান না করে যদি আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানার চাদর বদলে থাকেন, তারাও বেশ ঝুঁকিতে থাকবেন।
মাংকিপক্সে আক্রান্ত হলে বেশ জ্বর হয়, শরীরে লাল গুটি দেখা দেয়, যেগুলো পরে ফোঁড়ায় রূপ নেয়। তবে এই রোগ সাধারণ মৃদু, এবং বেশিরভাগ মানুষ দুই হতে চার সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/
আরও পড়ুন