অর্থনৈতিক সঙ্কটে জটিল বাঁকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি
প্রকাশিত : ১৬:০০, ১৪ জুলাই ২০২২
বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি আর ব্যালান্স অব পেমেন্ট সমস্যা কাটাতে কোনো পথ পাচ্ছে না পাকিস্তান। সঙ্কট কাটাতে কোনো দেশ থেকেই মিলছে না সহায়তা। এমন পরিস্থিতি দেশটির পররাষ্ট্রনীতিও পার করছে কঠিন সময়।
অস্ট্রেলিয়া স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউটে (এএসপিআই) লেখক এবং মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিজিয়ার কনসালটিংয়ের প্রেসিডেন্ট আরিফ রফিকের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত চীনও এক ধরনের চাপের মধ্যে আছে।
গত এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের ইমরান খানের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে তার সমালোচকরা বলেছিলেন, সরকার পরিবর্তনের ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো বাড়বে এবং দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটও কেটে যাবে।
সমালোচকদের অভিযোগ, ইউক্রেন পরিস্থিতি যখন যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে, সেই অস্থির সময়ে ইমরানের রাশিয়া সফর পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
শুধু তাই নয়, ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের মিত্র চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করারও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের সঙ্গে যুক্ত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও আছে।
এপ্রিলের শেষদিকে করাচীতে এক সন্ত্রাসী হামলায় বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে। এরপর চীনা নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ইসলামাবাদের সক্ষমতার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে বেইজিং। এরপর থেকে চীন দেশটিতে তাদের বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করে আসছে।
জোট সরকারের সমর্থকরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তবে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করার চেষ্টা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে খুব একটা চোখে পড়েনি এখনও।
ইসলামাবাদ যাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, কর আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি বাজেট ব্যাপক কাটছাট করে সেজন্য শক্ত অবস্থান নিয়ে রেখেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, পাকিস্তানের বেপরোয়া অভিজাত সামষ্টিক অর্থনীতিতে আর ভর্তুকি দেওয়ার ইচ্ছা খুব কমই আছে তার উন্নয়ন সহযোগীদের।
প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স কর্তৃক তৈরি করা দুর্নীতিবাজদের তালিকা দেশটির অর্থনৈতিক সক্ষমতার কার্যকারিতা প্রমাণ করে বলে জানিয়েছে এএসপিআই।
অন্যদিকে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেইজিংয়ের আধিপত্য খর্ব করতে কৌশলগত দিক থেকে নয়াদিল্লির অবস্থান যে গুরুত্বপূর্ণ, তা যুক্তরাষ্ট্রের ভারতপ্রীতিই প্রমাণ করে। ভারতের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকে পড়া মানেই ইসলামাবাদের সঙ্গে পশ্চিমা দেশটি সম্পর্কের একটি মাত্রা টেনে দিচ্ছে। পাকিস্তান যে এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র নয়, তা বোঝাই যাচ্ছে।
ছাড়া পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব খুব সাধারণ একটি বিষয় এবং এটি সেখানকার নির্বাচনী রাজনীতিতে বেশ বড় ধরনের প্রভাবও ফেলে। গ্যালপ পাকিস্তানের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উৎখাতে বেশিরভাগ পাকিস্তানী ক্ষুব্ধ। ইমরানের অধিকাংশ সমর্থকই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন’ পরিকল্পনাই ইমরানের ক্ষমতা হারানোর অন্যতম কারণ।
এএইচএস
আরও পড়ুন