ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাণিজ্য ইস্যুতে তাইওয়ান সফর করবেন জাপানি আইনপ্রণেতাগণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১৩, ১৫ জুলাই ২০২২

তাইওয়ানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই (মাঝে) টোকিওতে শিনজো আবের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান ত্যাগ করছেন।

তাইওয়ানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই (মাঝে) টোকিওতে শিনজো আবের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান ত্যাগ করছেন।

টোকিওতে তাইওয়ানের ডি ফ্যাক্টো অ্যাম্বাসেডর ফ্রাঙ্ক হিসিয়েহ জানিয়েছেন, জাপানের সাতজন আইনপ্রণেতা এই মাসের শেষের দিকে তাইওয়ান সফর করবেন, যা তাইওয়ানের প্রতি জাপানের একটি স্পষ্ট সমর্থন প্রদর্শন।

হিসিয়েহ মঙ্গলবার (১২ জুলাই) একটি ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যুর পর, নিরাপত্তা বিষয়ক একটি ক্রস-পার্টি সংসদীয় গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য তাইওয়ান সফর বিশেষভাবে অর্থবহ।

হিসিয়েহ জানিয়েছেন, আসন্ন এই সফর এটাই প্রমাণ করে যে আবের মৃত্যু সত্ত্বেও তাইওয়ানের জন্য ডায়েটের সমর্থন অব্যাহত থাকবে এবং জাপানি আইনপ্রণেতারা তাইওয়ানপন্থী শিবিরে যোগদান করবেন।

প্রসঙ্গত, ৬৭ বছর বয়সী জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী আবে শুক্রবার (৮ জুলাই) দক্ষিণাঞ্চলীয় নারা শহরের একটি প্রচার সমাবেশে গুলিবিদ্ধ হন।

এদিকে, তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসন্ন সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং জানিয়েছে সফররত প্রতিনিধিদের নাম এবং সফরের বিবরণ যথা সময়ে ঘোষণা করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাইওয়ান এবং জাপান বছরের পর বছর ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং এখন কোভিড-১৯ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়ায় উভয় পক্ষের জন্য এটি স্বাভাবিক যে তারা আগের ধারা বজায় রাখবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থকে বলা হয়েছে, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক এবং বাস্তব সম্পর্ক গভীর করার জন্য তাইওয়ানে ভ্রমণের আয়োজন করার জন্য বিভিন্ন জাপানি সেক্টরকে স্বাগত জানাচ্ছে।’

তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির একজন বিধায়ক হুয়াং শিহ-চিহ বলেছেন, সফরের সময় গ্রুপটি তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য বিষয়ে মতবিনিময় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে জাপানি আইনপ্রণেতারা তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে দেখা করবেন কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সাই মে মাসে তার অফিসে জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুব বিভাগের আইন প্রণেতাদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করেছিলেন। বৈঠকের সময়, তিনি তাইওয়ান প্রণালীতে নিরাপত্তা ইস্যুতে টোকিওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের জন্য ব্যাপক ও প্রগতিশীল চুক্তিতে যোগদানের জন্য তাইওয়ানের বিডের জন্য জাপানের সমর্থনের আহ্বান জানান।

আসন্ন সফরের খবর এমন সময় এসেছে যখন তাইওয়ানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদানের জন্য টোকিওতে একটি অঘোষিত সফর থেকে ফিরে এসেছেন। যদিও তাইওয়ান সরকার বলছে যে, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে এটি তার একটি ব্যক্তিগত ভ্রমণ ছিল।

এদিকে, ভাইস-প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই এর জাপান সফরের প্রতিবাদ জানিয়েছে বেইজিং। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বেইজিং জানিয়েছে, লাই-এর সফরের অনুমতি দেওয়া চীনের একত্ববাদ নীতির বিরুদ্ধ।
বেইজিং, তাইওয়ানকে তার ভূখণ্ডের অংশ হিসাবে দেখে এবং তাইওয়ানের কর্মকর্তাদের সফরসহ দ্বীপ এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের বিরোধিতাও করে আসছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বলেছেন, লাইয়ের টোকিও সফর একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা যা কখনওই সফল হবে না।

তবে মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তাইওয়ানে ফিরে আসা লাই তার ভ্রমণের কথা উল্লেখ করেননি। তিনি কয়েক দশকের মধ্যে জাপান সফরকারী তাইওয়ান সরকারের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

লাইকে টোকিও টাওয়ারের কাছে জোজোজি মন্দিরে আবের ব্যক্তিগত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় দেখা গিয়েছে। সেখানে পরিবারের সদস্যরা, বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সহ প্রাক্তন জাপানি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ পরিচিতরা উপস্থিত ছিলেন।

তাইওয়ানের ফ্রেন্ডস অফ আবে শিনজো অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মার্ক চেন বলেছেন, এটা অসম্ভাব্য যে কিশিদা আবের রাজনৈতিক লাইন থেকে বিচ্যুত হবেন, যা তিনি অফিস ছাড়ার পরে ক্রমশ বেইজিং-বিরোধী হয়ে উঠেছে।

তাইওয়ানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী চেন জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন এলডিপি ডায়েটের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হওয়ায়, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা আবের রাজনৈতিক লাইন মেনে চলবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের মিত্রতা বাড়বে এবং তা চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, এলডিপির বিজয় জাপানি ভোটারদের আবের রাজনৈতিক অবস্থানের সমর্থনকে প্রতিনিধিত্ব করে।

এদিকে, তাইপেই-ভিত্তিক তাইওয়ান থিঙ্কট্যাঙ্কের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তুং লি-ওয়েন বলছেন, জাপান যে লাইকে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে তা এটাই প্রমাণ করে যে, তাইওয়ানের প্রতি আবের রাজনৈতিক অবস্থানকে সমর্থন করছেন কিশিদা।

তুং বলেন, লাইকে ভ্রমণের অনুমতি দিয়ে, কিশিদা তাইওয়ানকে এটাই বলতে চেয়েছেন যে, বন্ধুত্বপূর্ণ তাইওয়ান-জাপান সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হবে না। তুং মনে করেন এই সফরটি বেইজিংকে এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে জাপান তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল পরিবর্তন করবে না।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি