ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত চীনের টেক্সটাইল শিল্প

আউয়াল চৌধুরী

প্রকাশিত : ১৮:৪৩, ১৭ জুলাই ২০২২ | আপডেট: ১৯:৫৬, ১৯ জুলাই ২০২২

দেশীয় মন্দা, রপ্তানি হ্রাস আর ক্রমাগত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনের এক সময়ের বিকাশমান টেক্সটাইল শিল্প সমস্যায় পড়েছে। চীনের টেক্সটাইল শিল্প, যা বিশ্বের বৃহত্তম এবং দেশের জিডিপির ৭ শতাংশ, তা বর্তমানে নিম্নমুখী বলে জানিয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট।

কোভিড-১৯ মহামারী, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদা হ্রাসের কারণেই এমনটা হয়েছে। সামনে দেশটির টেক্সটাইল খাতের জন্য আরও খারাপ সময় আসছে, কারণ ভিয়েতনাম এবং ভারতের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশের কাছে টেক্সটাইল রপ্তানিতে চীন তার স্থান হারাচ্ছে।

ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট জানিয়েছে, চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের দিয়ে জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগে যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে তুলা আমদানি নিষিদ্ধ করার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে, এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই ধরণের পদক্ষেপের কথা ভাবছে।

২০২০ সাল থেকে চীনে টেক্সটাইল শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ২০২২ সালে চাহিদা গত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে।

উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএফএলপিএ) কার্যকর হওয়ার পর মার্কিন কোম্পানিগুলো চীন থেকে তুলা কেনা বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা অর্থনীতির জন্য বেশ বড় একটা ধাক্কা।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চীনের টেক্সটাইল শিল্পের সরবরাহ ব্যবস্থাকে অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। চীনে নতুন তুলার মৌসুম থাকা সত্ত্বেও জিনজিয়াংয়ে ৩ মিলিয়ন টন তুলা অবিক্রিত থেকে গেছে।

এ প্রসঙ্গে একজন চীনা তুলার মিল মালিক বলেছেন ‘জিনজিয়াং তুলা বিশ্বের সবচেয়ে দামি তুলা ছিল। এখন এটি সবচেয়ে সস্তা হয়ে উঠেছে, তাও কেউ এটা কিনছে না।’ 

এদিকে বিভিন্ন দেশ যেমন কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য প্রধান দেশগুলোর মানবাধিকার কর্মীরা তাদের সরকারের প্রতি চীনে জোরপূর্বক শ্রম দ্বারা উত্পাদিত পণ্য নিষিদ্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেছে ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট।

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হ্যালাম ইউনিভার্সিটির মানবাধিকারের অধ্যাপক লরা মারফি বলেন, ইইউকেও মানবাধিকার বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে জোরপূর্বক শ্রম এবং অন্যান্য অপব্যবহারের সমাধান নিশ্চিত করার জন্য এই সরকারের আরও ও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

চীনের মোট রপ্তানিতে টেক্সটাইল শিল্পের অবদান ১১ শতাংশের বেশি হওয়ায় এই ধরনের পণ্য বিশেষ করে তুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা চীনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এই সব কারণের প্রভাবে চীনে টেক্সটাইল শিল্পের ধস বেশ দৃশ্যমান। চায়না ন্যাশনাল কটন ইনফরমেশন সেন্টারের মতে, টেক্সটাইল কারখানায় মেশিন চালু হওয়ার হার ছিল ৭৯.৭ শতাংশ, যা বছরে ১৩.৩ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।

এছাড়াও, চীনের ক্ষতি হচ্ছে এশিয়ার অন্যান্য দেশের লাভ। ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া নতুন পোশাকের অর্ডার পাচ্ছে, যার মধ্যে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের টেক্সটাইল অর্ডার রয়েছে যা মূলত চীনের জন্য ছিল। চায়না চেম্বার অফ কমার্স ফর ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অফ টেক্সটাইল বলেছে, এক বছরের মধ্যে অর্ডারে চীনের ক্ষতি প্রায় ৭০ শতাংশ। পোশাক সামগ্রী রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে ভিয়েতনাম। ২০২২ সালের প্রথমার্ধে, এটি ২২ বিলিয়ন মূল্যের টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি