গরমে চাপের মুখে ফ্রান্সের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো
প্রকাশিত : ১৬:৩৩, ১৬ আগস্ট ২০২২
ফ্রান্সের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে৷ বিশ্বের আর কোনো দেশ পরমাণু বিদ্যুতের উপর এতটা নির্ভরশীল নয়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের টানা গরম পরমাণু চুল্লিগুলোর উপর চাপ তৈরি করছে৷
ফ্রান্সে মোট ৫৬টি পরমাণু চুল্লি আছে৷ এসব চুল্লি ঠাণ্ডা করতে সাধারণত নদীর পানি ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে নদীর পানির তাপমাত্রা যেন নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম না করে, সে বিষয়ে আইন রয়েছে৷ তবে অন্তত আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই আইন প্রয়োগ স্থগিত করেছে সরকার৷
ফলে নদীর পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে৷ যেমন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গলফ্যাশ এলাকার গ্যারন নদীর পানির তাপমাত্রা প্রায় ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় পরিবেশকর্মী জ্য-পিয়ের ডেলফু৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ফ্রান্সে গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে৷ সে কারণে গ্যারন নদীর পানি অনেক কমে গেছে৷ এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে গলফ্যাশের পরমাণু চুল্লি৷ কারণ চুল্লি ঠাণ্ডা করতে আট ঘনমিটার পানি দরকার৷ কিন্তু শীতলীকরণ প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ছয় ঘনমিটার পানি নদীতে ছাড়া হচ্ছে৷ বাকিটা বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে৷
ডেলফু বলেন, পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যচক্রের উপর প্রভাব পড়ছে৷ ‘‘উষ্ণ পানি মাইক্রোঅ্যালজি ধ্বংস করে দেয়৷ এই অ্যালজিগুলো ছোট মাছের খাবার৷ আবার ছোট মাছ হচ্ছে বড় মাছের খাবার৷ এছাড়া উষ্ণ পানিতে বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে৷ ফলে এই পানিকে পানযোগ্য করতে বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয়,’’ ডয়চে ভেলেকে জানান তিনি৷
এ ব্যাপারে ফ্রান্সের সব পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা ইডিএফ-এর যোগাযোগ করা হলে সংস্থার মুখপাত্র ইমেলে ডয়চে ভেলেকে জানান, এখন পর্যন্ত চালানো তদন্তে পরমাণু চুল্লির কারণে আশেপাশের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷
প্যারিস ইউনিভার্সিটি ডোফার ক্লাইমেট ইকোনমি ডাইরেক্টর আনা ক্রেটি জানান, বর্তমান পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সংস্কার ও নতুন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ফ্রান্স দেড়শ বিলিয়ন ইউরো বা ১৪ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে৷
নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য এমন বরাদ্দ না করলেও এই খাতের উন্নয়নে লাল ফিতার দৌরাত্ম কমাতে নতুন আইন করছে ফ্রান্স৷
ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সই একমাত্র দেশ যারা ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ইইউ ঠিক করেছিল সেটিতে পৌঁছতে পারেনি৷ ২০২০ সালের মধ্যে একটি দেশের জ্বালানি চাহিদার ২৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছিল ইইউ৷ ফ্রান্স করেছে মাত্র ১৯ শতাংশ৷
এসবি/
আরও পড়ুন