চীন বিশ্ব বিনিয়োগকারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে: আদানি
প্রকাশিত : ২০:০৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ২০:১১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২
চীনকে একসময় বিশ্বায়নের শীর্ষস্থানীয় চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দেখা হলেও দেশটি বর্তমানে তার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পথে কঠিন বাঁধার সম্মুখিন হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি।
তিনি জানান, চীন বিশ্ব বিনিয়োগকারীদের থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
আদানি মনে করছেন, চীনের ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদ, সরবরাহ চেইনের ঝুঁকি কমানো এবং প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ২০তম ফোর্বস গ্লোবাল সিইও সম্মেলনে মূল বক্তৃতা দেওয়ার সময় আদানি এসব কথা জানান।
সে সময় আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান চীনের হাউজিং এবং ক্রেডিট ঝুঁকির এই সময়টিকে জাপানের ‘হারানো দশক’র অর্থনীতির সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা ১৯৯০ এর দশকে জাপানের অর্থনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলেছিল।
আদানি জানান, তিনি আশা করেছিলেন, এই সমস্ত অর্থনীতি সময়ের সঙ্গে পুনরায় নিজস্ব গতিতে ফিরবে এবং আগের জায়গায় ফিরে আসবে। তবে এবার অর্থনীতিকে আবার আগের জায়গায় ফেরত আনা চীনের জন্য বেশ কঠিন বলেই মনে হচ্ছে।
আদানি বলেন, ‘আমার ধারণা যারা এক সময় বিশ্বায়নের সর্বাগ্রে চ্যাম্পিয়ন ছিল, তারা এবার একঘরে হয়ে পড়বে। ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদ, সরবরাহ শৃঙ্খল ঝুঁকি হ্রাস, এবং প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ তার বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি প্রদর্শন হবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু চীনের এখনকার অবস্থা এটিকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।’
সম্মেলনে গৌতম আদানি প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। সে সময় তিনি ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কেও কথা বলেছেন। ভারত সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ভারতের অর্থনীতি নিখুঁত নয়, তবে তার দেশের গণতন্ত্রের সারাংশ এর অপূর্ণতার মধ্যেই নিহিত।
তিনি আরও বলেন, ‘যা অনেকে ভারতের অসম্পূর্ণতা হিসেবে দেখেন, তা আসলে একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রময় গণতন্ত্রকে প্রতিফলিত করে। তারাই বৈচিত্রতা দেখাতে পারে, যাদের অপূর্ণতা দৃশ্যমান। এটাকে গুছাতে গেলে ভারতের বৈচিত্র্য প্রকাশের অনন্য ক্ষমতাকে ধ্বংস করা হবে।’
সম্প্রতি অ্যামাজন সিইও জেফ বেজোসকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন গৌতম আদানি। ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে ভারত।
তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রকৃত বৃদ্ধি সবেমাত্র শুরু হচ্ছে। এই বছর দেশটি স্বাধীনতার ৭৫তম বছর থেকে স্বাধীনতার শততম বছরের দিকে যাচ্ছে।’ এই সময়কে ‘অমৃত কাল’ উল্লেখ করে তিনি জানান, একটি দারুণ আগামীকাল শুরু করার জন্য এটি নিখুঁত সময়।
ভারতের পরবর্তী ২৫ বছরের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ আদানি বলেন, ‘ভারত খুব সহজেই শতভাগ স্বাক্ষরতার দেশ হয়ে উঠবে, ২০৫০ সালের আগেই দারিদ্র্যমুক্ত হবে।’
তিনি বলেন, ভারত এমন একটি দেশ হবে যেটি ১.৬ বিলিয়ন লোকের নিখুঁত মেধা ব্যবহারের কারণে বিদেশে সরাসরি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ স্তরকে আকর্ষণ করবে।
গৌতম আদানি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ হবে যেটি ৩ ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি থেকে ৩০ ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতিতে চলে যাবে, একটি দেশ যার স্টক মার্কেটের মূলধন ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং এমন একটি দেশ যা বিশ্বে তার অবস্থানের জন্য অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হবে।
ভারতে বৃদ্ধির সুযোগ সম্পর্কে আরও বিশদভাবে বর্ণনা করে আদানি বলেন, ‘ভারত অবিশ্বাস্য সুযোগে পরিপূর্ণ এবং এর প্রকৃত বৃদ্ধির গল্প মাত্র শুরু হচ্ছে।’
তিনি জানান, ভারতের পুনরুত্থান হওয়া অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে তরুণ গণতন্ত্রের দেওয়া সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য সেরা জায়গা।
এসি
আরও পড়ুন