ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

মাহসা আমিনির মৃত্যুতে আফগানিস্তানে বিক্ষোভ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:২০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

কাবুলে ইরানি দূতাবাদের সামনে বিক্ষোভ করছেন আফগান নারীরা। ছবি: সংগৃহীত

কাবুলে ইরানি দূতাবাদের সামনে বিক্ষোভ করছেন আফগান নারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ইরানে মাহসা আমিনি মারা যাওয়ার পর যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা আফগানিস্তানেও ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকজন আফগান নারী অধিকারকর্মী তেহরানের নারীদের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়ে আফগানিস্তানের ইরানি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

টোলো নিউজ জানিয়েছে, আফগান সরকার ইসলামিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারীর অধিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- ইসলামিক আমিরাতের ডেপুটি মুখপাত্র বিলাল করিমি এমন মন্তব্য করার পর এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে শুকরিয়া নামে এক নারী বলেন, ‘আমরা ইরানের মাহসার মতো আমাদের আওয়াজ তুলছি কারণ মাহসার মতো অনেক নারী আফগানিস্তানে নিহত হয়েছে।’ সে সময় বিক্ষোভকারীরা‘নারী, জীবন এবং স্বাধীনতা’র নামে স্লোগান দিতে থাকে। 

এর আগে ইসলামিক আমিরাত বলেছিল, এটি ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করবে। টোলো নিউজ করিমির বক্তবকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘ইসলামী আমিরাত সকল নাগরিকের অধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা সে হোক শিশু বা কোন প্রাপ্তবয়স্ক।’

ইরানে মাহসা আমিরির মৃত্যু ইরানের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ইরানে, বেশ কয়েকজন নারী রাস্তায় নেমে এসে মাহসা আমিনির মৃত্যুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন।

প্রসঙ্গত, সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে মাহসাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়, পরে পুলিশের নির্যাতনে তিনি মারা যান। এদিকে, মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে নারীদের চুল কেটে, হিজাব পোড়াতে দেখা গেছে।

ইউরোনিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে মাহসা আমিনির সন্দেহজনক মৃত্যুর বিষয়ে শত শত মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং বিক্ষোভকারীরা ইরানি দূতাবাসের দিকে এগোলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বন্ধু সোগোলের সঙ্গে ট্রাফালগার স্কোয়ারে প্রতিবাদকারী সেপিদেহ এসকান্দারি ইউরোনিউজকে বলেন, মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে এবং নীরবে তাদের ক্ষতি করা হচ্ছে। আমরা এখানে তাদের কণ্ঠস্বর হতে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি, তারা যেখানেই থাকুক, সেই নারীদের পাশে দাঁড়াতে বলছি। মৌলিক অধিকার এমন একটা বিষয়, যা নারী এবং পুরুষ উভয়েরই পাওয়া উচিত।

এই দুই প্রতিবাদকারী জানান, এই বিক্ষোভগুলো আসলে ইরানে লিঙ্গবাদ এবং বৈষম্যের বিস্তৃত সমস্যাগুলো নিয়ে, যা আমিনির মৃত্যুর দ্বারা সবার সামনে এসেছে।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর, ইরানে আইন অনুসারে নারীদের অবশ্যই হিজাব পরতে হবে। এই নীতিটি মূলত অজনপ্রিয়, ইরানী নারীরা সাধারণত তাদের কানের চারপাশে ঢিলেঢালাভাবে হেড স্কার্ফ পরেন বা এটি ঘাড়ে ফেলে দেন।

ইউরোনিউজ জানায়, ১৯৮১ সালে যখন এই নিয়ম কার্যকর করা হয়, তখন এটি ব্যাপক বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছিল। সেই বিক্ষোভ এখনও বিক্ষিপ্তভাবে চলছে।

আল জাজিরা জানায়, নৈতিক পুলিশের আচরণ নিয়ে ইরানের ভিতরে এবং বাইরে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের মধ্যেই আমিনির মৃত্যু ঘটে, এই বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ (গাইডেন্স পেট্রোল) নামে পরিচিত। এরা নারীদের বাধ্যতামূলক পোষাক বিন্যাসের দিকে নজর রাখে। ইরানে শুধুমাত্র ইরানি মুসলমানদের নয়, বরং সমস্ত জাতীয়তা এবং ধর্মের নারীদের মাথার স্কার্ফ দিয়ে চুল এবং ঘাড় লুকিয়ে রাখতে হয়।

মাহসা আমিনির মৃত্যু এখন ইরানে কয়েক দশক ধরে নারীদের প্রতি সহিংস নিপীড়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কয়েক দশক ধরে, ইরানের বড় শহরগুলোতে চুল বের করে মাথার উপরে স্কার্ফ পরার জন্য নারীদের ক্রমবর্ধমানভাবে সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি