ইরানে বিক্ষোভের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলকে দুষছেন খামেনি
প্রকাশিত : ১৩:৩০, ৪ অক্টোবর ২০২২ | আপডেট: ১৩:৩৫, ৪ অক্টোবর ২০২২
ইরানে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক নারীর মৃত্যুর জেরে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন ইরান। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি অভিযোগ করেছেন, চলতি বিক্ষোভের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হাত রয়েছে। তার মতে, মাশা আমিনির মৃত্যু না হলেও ইরানকে অস্থিতিশীল করার অন্য অজুহাত তৈরি করা হতো। এদিকে, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৯২ জন।
চলমান অস্থিরতার বিষয়ে তার প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন এই "দাঙ্গা" ইরানের চিরশত্রু এবং তাদের মিত্রদের দ্বারা প্ররোচিত।
তার শাসনের সময়কালে এরকম বিক্ষোভ গত এক দশকের মধ্যে তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে এই বিক্ষোভের প্রতি সহিংস প্রতিক্রিয়ায় তারা "শঙ্কিত"।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন যে "শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর তীব্র সহিংস দমনপীড়নের" খবরে তিনি "গভীরভাবে উদ্বিগ্ন"।
তিনি বলেন, এই বিক্ষোভকারীরা "ন্যায়বিচারের" জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "ইরানি নারীদের পাশে রয়েছে" যারা "তাদের সাহসিকতা দিয়ে বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করছে"।
যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়ায় এই একই মনোভাব প্রতিধ্বনিতে হয়েছে। সোমবার লন্ডনে ইরানের সবচেয়ে সিনিয়র কূটনীতিককে তলব করেছে দেশটি, তেহরানে তাদের নেতাদের এই বলতে যে "অস্থিরতার জন্য দেশের বাইরের লোকজনকে দোষারোপ করার পরিবর্তে, কৃতকর্মের জন্য তাদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত এবং তাদের জনগণের উদ্বেগের কথা শোনা উচিত"।
দেশটি নারীদের হিজাব পরার কঠোর আইন ভঙ্গ করার অভিযোগে ১৩ই সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী দ্বারা আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাইশ বছর বয়সী মাহসা আমিনি নামে এক নারী কোমায় চলে যান এবং এর তিনদিন পর তার মৃত্যু হয়। এরপর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছেন ইরানের নারীরা।
তার পরিবার অভিযোগ করে যে পুলিশ তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে এবং তাদের একটি গাড়ির সাথে তার মাথা ধাক্কা দেয়া হয়েছে। পুলিশ বলেছে যে তার প্রতি কোন খারাপ আচরণের প্রমাণ নেই এবং তিনি "হঠাৎ হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হন"।
মাহসা আমিনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। "নারী, জীবন, স্বাধীনতা" এবং আয়াতুল্লাহ খামেনির দিকে ইঙ্গিত করে "স্বৈরশাসকের মৃত্যু" এরকম স্লোগানের সাথে সাথে তারা তাদের মাথার স্কার্ফ বাতাসে নেড়েছেন, তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
সোমবার পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাডেটদের একটি গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন মিজ আমিনির মৃত্যুতে "আমরা মর্মাহত"।
"কিন্তু যেটা স্বাভাবিক নয় তা হল কিছু লোক কোনরকম প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়াই রাস্তাঘাটকে বিপজ্জনক করে তুলেছে, কুরআন পুড়িয়েছেন, পর্দানশীন নারীদের হিজাব খুলে দিয়েছেন এবং মসজিদ ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন," যোগ করেছেন খামেনি।
ইরানের সমস্ত রাষ্ট্রীয় বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী আয়াতুল্লাহ খামেনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ইরানের "সকল ক্ষেত্রে শক্তি অর্জনকে" সহ্য করতে না পেরে বিদেশী শক্তিগুলি "দাঙ্গার" পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন, "আমি স্পষ্টভাবে বলছি যে এই দাঙ্গা এবং নিরাপত্তাহীনতার নীলনকশা এঁকেছে আমেরিকা ও তার দখলদার মিথ্যা ইহুদিবাদী শাসক (ইসরায়েল) এবং সেইসাথে ছিল তাদের অর্থ প্রদানকারী দালালেরা, আর বিদেশে থাকা কিছু বিশ্বাসঘাতক ইরানীদের সহায়তা।"
তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে তার পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন এই বলে যে তারা এই অস্থিরতার সময় "অবিচারের" মুখোমুখি হয়েছেন।
নরওয়ে ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান, ইরান হিউম্যান রাইটস রবিবার বলেছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৩৩ জন নিহত হয়েছে। জাতিগত বেলুচ অ্যাক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন যে তাদের মধ্যে ৪১ জন বিক্ষোভকারী শুক্রবার জাহেদানে এক সংঘর্ষে মারা গেছেন।
তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে নিরাপত্তা কর্মীসহ ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইরানের নৈতিকতা পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তার সর্বশেষ বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকারীদের উপর আমেরিকা এই সপ্তাহে "আরও অবরোধ আরোপ করবে"।
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমন করার একদিন পর আয়াতুল্লাহ খামেনির মন্তব্য এসেছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/
আরও পড়ুন