ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

জন্মহার বাড়াতে গলদঘর্ম চীন, প্রণোদনাতেও মিলছে না সুফল!

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১২:২১, ১২ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১২:২৩, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর একটি চীন। একসময় জনসংখ্যা কমাতে দেশটিতে ‘এক সন্তান নীতি’ চালু করা হয়েছিল। তবে দীর্ঘ সময় ধরে এই নীতি মেনে চলায় তা যেন হিতে বিপরীত হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তরুণদের তুলনায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ফলে পাওয়া যাচ্ছে না কর্মক্ষম লোক।

এই কর্মী সংকট কাটাতেই নাগরিকদের বেশি সন্তান নিতে পরামর্শ দিচ্ছে চীনা সরকার। দেশটিতে দুই সন্তান নীতি পরিবর্তন করে তিন সন্তানে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু অনেক দম্পতি তাদের পরিবার বড় করা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন। 

আর এ কারণে কিছু কিছু জায়গায় জন্মহার বাড়াতে দেওয়া হচ্ছে আর্থিক প্রণোদনা। থেমে নেই লোভনীয় অফারও। কয়েকবছর ধরেই বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে তারা।

এমনকি সংকট কাটাতে দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দাবেই নং টেকনোলজি গ্রুপ ঘোষণা করে এক অবিশ্বাস্য অফার! তা হলো- তিনটি সন্তানের জন্ম দিলে কর্মীদের বেতনসহ এক বছর ছুটি দেওয়া হবে। সঙ্গে বোনাস হিসেবে মিলবে আরও ১২ লাখ টাকা।

একটি সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন তাং হুয়াজুন। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বাস করেন বেইজিংয়ের উপকণ্ঠে একটি অ্যাপার্টমেন্টে। তার দুই বছরের একটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু আর কোনো সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাং দম্পতির। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, চীনে এ রকম মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু নতুন করে জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ছে না। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন চীন জন্মহার বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে।

জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বরেই বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছেছে। যার মধ্যে চীনের জনসংখ্যাই ১৪১ কোটি। 

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনের জনসংখ্যা ১.৪১২১২ বিলিয়ন থেকে ২০২১ সালে মাত্র ৪ লাখ ৮০ হাজার বেড়ে ১.৪১২৬০ বিলিয়ন হয়েছে, যা রেকর্ড কম বৃদ্ধি। 

এক দশক আগে এটি ৮০ লাখ বা তার বেশি সাধারণ বৃদ্ধির একটি ভগ্নাংশ মাত্র। কঠোর অ্যান্টি-কোভিড ব্যবস্থার মুখে সন্তান নেয়ার অনিচ্ছা হয়তো জন্মের ধীরগতিতে অবদান রাখতে পারে, তবে এমনটা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে।

চীনের মোট ফার্টিলিটি হার (নারী প্রতি জন্ম) ১৯৮০-এর দশকের শেষভাগে ছিল ২.৬ - মৃত্যু প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ২.১-এর থেকেও বেশি। এটি ১৯৯৪ সাল থেকে ১.৬ থেকে ১.৭ এর মধ্যে ছিল এবং ২০২০ সালে ১.৩ এবং ২০২১ সালে মাত্র ১.১৫-এ নেমে এসেছে। 

তুলনামূলকভাবে, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট ফার্টিলিটি হার প্রতি মহিলায় ১.৬ জন। জাপানে এটি ১.৩। 

এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালে চীন তার এক সন্তান নীতি পরিত্যাগ করে এবং ২০২১ সালে ট্যাক্স এবং অন্যান্য প্রণোদনা সহকারে তিন সন্তান নীতি প্রবর্তন করে। তা সত্ত্বেও এর উন্নতি ঘটছে না।

এর অন্যতম কারণ হিসেবে, ৩৯ বছর বয়সী তাং হুয়াজুন বলেন, তার অনেক বিবাহিত বন্ধুর একটি মাত্র সন্তান। তারা আর সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনাও করছে না। এমনকি অবিবাহিত চীনা তরুণ-তরুণীরা বিয়ে করতেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে জন্মহার কমে যাচ্ছে।

চীনে শিশু লালনপালনের খরচ অনেক বেশি। সন্তান গ্রহণ না করার এটাও একটি কারণ। তাছাড়া চীনে এখন বেশিরভাগ পরিবার স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে না। চাকরি বা কাজকর্মের প্রয়োজনে অহরহ স্থান বদল করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সন্তান লালনপালনের জন্য দাদা-দাদীর ওপরেও নির্ভর করতে পারে না দম্পতিরা।

তাং হুয়াজুন আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেই দেরিতে বিয়ে করি। আর দেরিতে বিয়ে করার কারণে অনেক মেয়ের পক্ষেই গর্ভধারণে জটিলতা দেখা যাচ্ছে। আমি মনে করি, দেরিতে বিয়ে করা চীনের জন্মহারের ওপর প্রভাব ফেলছে।’

চীনে এখন ৬৫ বছর বয়সী জনসংখ্যার অনুপাত প্রায় ১৩ শতাংশ। এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের অধ্যাপক শেন জিয়ানফা বলেছেন, ‘আরও কয়েক বছর ধরে চীনে বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। এটি একটি সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলায় চীনকে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’

চীন সরকার তাই এই বয়স্ক জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশটির সরকার চেষ্টা করছে, বিবাহিত দম্পতিদের নানাভাবে সন্তান গ্রহণে উৎসাহী করতে। এ জন্য দম্পতিদের কর মওকুফ, নগদ অর্থ প্রণোদনা, মাতৃত্বকালীন ছুটির সহজলভ্যতা, আবাসন ভর্তুকি ইত্যাদি নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। 

তবে চীন সরকারের এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, বলে মনে করেন জনসংখ্যাবিদরা। তারা জন্মহার না বাড়ার পেছনে উচ্চশিক্ষার উচ্চ ব্যয়, কর্মক্ষেত্রে কম মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, করোনা মহামারি ও বর্তমান অর্থনৈতিক নাজুক অবস্থাকেও দায়ী করেছেন। 

হংকংয়ের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গিটেল বাস্টেন বলেছেন, ‘তরুণদের কাছে কর্মসংস্থান একটি প্রধান বিষয়। এ ব্যাপারে সরকারকে গভীরভাবে নজর দেওয়া উচিৎ। আপনি কেন আরও সন্তান নেবেন, যখন আপনার কোনো চাকরির নিশ্চয়তাই নেই?’

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি