জন্মহার বাড়াতে জাপানের নতুন পরিকল্পনা সফল হবে কী?
প্রকাশিত : ১৯:৩৯, ২১ জানুয়ারি ২০২৩
জাপানে জন্মহার উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। তাই দেশটির দম্পতিরা বাচ্চা নিলেই বিপুল অর্থ দেবে জাপান সরকার। দম্পতিকে পাঁচ লাখ ইয়েন দেবে জাপান সরকার। এত দিন চার লাখ ২০ হাজার ইয়েন করে দেওয়া হতো। এবার ৮০ হাজার ইয়েন বাড়তি দেবে সরকার।
এভাবে সন্তান জন্মদানে দম্পতিদের উৎসাহ দিতে চাইছে সরকার। কিন্তু তাতে কী জন্মহার বাড়াতে পারবে জাপান?
আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই নতুন প্রস্তাব চালু হওয়ার কথা।
সমালোচকেরা বলছেন, জাপানে যে হারে জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে এবং আয় একই জায়গায় থমকে আছে বা কমেছে, তাতে জাপানিরা সন্তানের খরচের ধাক্কা সামলাতে চাইছে না।
অনেকে বলছেন, কিছু অর্থ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। অতীতেও এই ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এবং এবারও হতে পারে।
জাপানের জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৫৭ লাখে। করোনার আগে একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, এই শতকের শেষে জাপানের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে পাঁচ কোটি ৩০ লাখে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জাপানে মানুষ বেশি বয়সে বিয়ে করছে। তাদের সন্তানাদিও হচ্ছে কম। এর প্রধান কারণই হলো আর্থিক চিন্তা। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতির ফলে সমস্যা বেড়েছে, বৈ কমেনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা সংখ্যাতত্ত্বে দেখা গেছে, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৯৪২টি শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কম। মন্ত্রণালয় মনে করছে, গোটা বছরে শিশুর জন্মের সংখ্যা ৮ লাখের কম হবে। ১৮৯৯ সালের পর থেকে যেমনটা কখনো হয়নি।
সন্তানকে বড় করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ লাগে, তা বিপুল বলে মনে করছেন জাপানিরা। টোকিওর গৃহবধূ আয়াকো জানিয়েছেন, সরকারের দেওয়া অর্থ তিনি পেয়েছেন। তার একটি ছেলে আছে। কিন্তু সরকারের দেওয়া টাকায় তিনি হাসপাতালের খরচ পুরোপুরি মেটাতে পারেননি।
সংবাদপত্র মাইনিছি জানিয়েছে, জাপানে সিজারিয়ান বাচ্চার জন্ম দিতে গেলে গড়ে চার লাখ ৭৩ হাজার ইয়েন খরচ হয়।
আয়াকো বলেছেন, 'আমরা আরেকটি বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু আমি ও আমার স্বামী মিলে আলোচনা করে দেখলাম, আর্থিক দিক দিয়ে তা সম্ভব নয়। ৮০ হাজার ইয়েন বাড়তি দিলে সুবিধা হবে ঠিকই, কিন্তু তাতেও খরচ মিটবে না। তাই আমরা বাস্তবতাকে মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটা বাচ্চাকে বড় করতে প্রচুর খরচ হয়।'
আয়াকো জানিয়েছেন, করোনার পর তার পরিবারের আয় কমেছে। খরচ বেড়েছে। খাবার ও গাড়ির তেলের দাম খুবই বেড়ে গেছে। ফলে তারা আর খরচ বাড়াতে চাইছেন না।
এই অবস্থায় জাপান সরকারের নতুন উদ্যোগ সফল হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অভিবাসনে কড়াকড়ি এবং পরিবার ছোট রাখার প্রবণতা ইত্যাদি কারণে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। এ সবের ফলে পূর্বানুমানের চেয়ে দ্রুত হারে কমছে জাপানের জন্মহার। এমনই জানাল সে দেশের সংবাদমাধ্যম আশাহি শিমবানের একটি সমীক্ষার রিপোর্ট।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গণনার সূত্র এবং প্রাথমিক সব তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০২১-এ সে দেশের জন্মহার আট লক্ষ পাঁচ হাজার। এই পরিসংখ্যান ২০২৮-র আগে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ২০২০ সালে দেশটিতে জন্মহার ছিল আট লাখ ৪০ হাজার ৭৩২, যা কি না ২০১৯ সালের চেয়ে ২.৮ শতাংশ কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের তুলনায় করোনাকালে জাপানে বিয়ের সংখ্যা কমেছে। জন্মহার তাই আরও কমে যেতে থাকবে, যদি না যুবসমাজ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে উদ্যোগী হয়।
শুধু জাপানই নয়, বিশ্বজুড়েই কমছে জন্মহার। ২০২১-এর সমীক্ষা অনুযায়ী চীন এবং তাইওয়ানের প্রজননের হার সবচেয়ে কম। নারী-পিছু শিশু জন্মের সংখ্যা ১.০৭।
করোনা মহামারির শুরুতে মজার ছলে প্রচার করা হয়েছিল যে, বিভিন্ন দেশে লকডাউনের ফলে প্রতিটি দেশে প্রচুর শিশুর জন্ম হবে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা জন্মের হারের ওপর বিপরীত প্রভাব ফেলে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের অনুমান, এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন লাখ শিশুর জন্মই হয়নি। জন্মহার পতনের ফলেই চীন গত বছর তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনে ঘোষণা করে, যে কোনো দম্পতি তিনটি সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন।
২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার তাদের জন্মহারে পতন লক্ষ করে।
এনএস//
আরও পড়ুন