ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কাঁঠাল আর নারকেল গাছগুলোই আমার কাছে বাপমায়ের মত...

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৫, ৯ জুলাই ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

বছরখানেক আগে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে শ্রীলংকা। এখনও দারিদ্রে ধুঁকছে দেশটি। খাবার জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির বড় একটা জন গোষ্ঠি। সেই জনগোষ্ঠীরই একজন কারুপ্পাইয়া কুমার। যিনি গাছ থেকে নারিকেল আর কাঁঠাল পাড়ার কাজ করেন। বিনিময়ে টাকা নয় কাঁঠাল আর নারিকেল নিয়ে যান বাড়িতে। তাই দিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তানের খাদ্যের চাহিদা মেটাচ্ছেন এই দিনমজুর। 

কারুপ্পাইয়া বলেন, “কাঁঠাল খেয়ে আমরা লাখ লাখ মানুষ প্রাণে বেঁচে আছি। অনাহারের হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে এই কাঁঠাল।” 

বর্ষা মরশুমে কাজ করতে পারেন না কারুপ্পাইয়ার স্ত্রী, ফলে সংসারের সকলের ভরনপোষণের সব দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয় তাকেই।

রবার আর চা বাগানের সবুজে ঢাকা পাহাড়গুলোর মাঝখানে রত্নাপুরা শহর, কলম্বোর প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) দক্ষিণে। সেখানেই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কারুপ্পাইয়ার বাস। 

কারুপ্পাইয়া কুমার জীবিকার তাগিদে নারিকেল গাছে উঠে নারিকেল পাড়েন। প্রতিবার ওঠায় তার আয় হয় ২০০ শ্রীলংকান রুপিা (৬৫ সেন্টের সম পরিমাণ)।

তিনি বলেন, “জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও টানতে হয়। কাজেই খাবার কেনার জন্য খুবই কম পয়সা হাতে থাকে।”

কারুপ্পাইয়ার স্ত্রী রবার চাষের কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। রবার গাছের কাণ্ডে খাঁজ কাটার কাজ করেন তিনি, যেখান থেকে বেরিয়ে আসা রবার সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্ষার মৌশুমে সে কাজ এখন বন্ধ।

কারুপ্পাইয়া বলেন “বৃষ্টি হলেও ঘরে বসে থাকার উপায় আমার নেই। বৃষ্টির মধ্যেই আমাকে নারিকেল গাছে উঠে নারিকেল পাড়তে হয়। পরিবারের ভরনপোষণ তো করতে হবে। ” 

কাঁঠালগুলো “মাঠে পড়েই পচত” বলছিলেন কারুপ্পাইয়া। আর এখন এক পাত্র সেদ্ধ করা কাঁঠাল তার পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে সারাদিন খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট।

প্রতিবেশিদের সাথে একটা অভিনব “চুক্তি” করেছেন কারুপ্পাইয়া। কারণ তার জমিতে কোন কাঁঠাল গাছ নেই।

তিনি বলেন, “আমি প্রতিবেশিদের কাঁঠাল গাছে উঠে তাদের জন্য কাঁঠাল পেড়ে দিই- তার জন্য কোন পয়সা নিই না- তারা দিতে চাইলেও নিই না। আমি বরং বিনিময়ে তাদের গাছ থেকে একটা করে কাঁঠাল বাসায় নিয়ে যাই।”

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর এই দিনমজুরের আস্থা নেই- কিন্তু আস্থা আছে প্রকৃতির ওপর।

“কাঁঠাল আর নারকেল গাছগুলোই আমার কাছে বাপমায়ের মত,” আক্ষেপের সুরে বলেন কারুপ্পাইয়া।

একসময় ফল হিসাবে সবচেয়ে অবজ্ঞা করা হতো যে কাঁঠালকে সেটাই এখন মানুষের প্রাণ রক্ষাকারী আহার হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রীলংকায়। ১৫ কেজি কাঁঠাল পাওয়া যায় প্রায় এক ডলার সমমূল্যে।

অর্থনৈতিক সঙ্কটের আগে দেশটির প্রতিটি মানুষের ভাত বা পাউরুটি কেনার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু এখন খাবারের দাম এতটাই নাগালের বাইরে চলে গেছে যে বহু মানুষ প্রায় প্রতিদিন কাঁঠাল খেয়ে দিন পার করছেন। 

শ্রীলংকার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে রয়েছে। এখন প্রতি দুটি পরিবারের মধ্যে একটিকে বাধ্য হয়ে তাদের আয়ের ৭০% এর বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে খাবারদাবারের ওপর।

যে কারণে সংসারের খরচখরচা, খাদ্য সংস্থান এবং বাচ্চাদের স্কুলের ফি জোগাড় করতে নাভিশ্বাস উঠছে বেশিরভাগ মানুষের। 

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও এতটাই দুঃসহ যে শুধু গরীব মানুষই নন সব শ্রেণি পেশার মানুষই এখন কাঁঠাল কিনতে আসছেন। কারুপ্পাইয়ার পরিবারের মত শ্রীলংকার লাখো পরিবারকে এখন বেঁচে থাকার জন্য ভরসা করতে হচ্ছে কাঁঠালের ওপরেই।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি