ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪

গাজা যুদ্ধ: বিশ্বের কাছে স্পষ্ট পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি

দুলি মল্লিক

প্রকাশিত : ১৩:৪০, ২০ জানুয়ারি ২০২৪

ইউক্রেনের পর গাজা যুদ্ধ। বিশ্ববাসীর কাছে এখন স্পষ্ট পশ্চিমাবিশ্বের দ্বিমুখী নীতি। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর পরও জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে নিজেদের চালু করা কথিত উদার বিশ্বব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে পশ্চিমারা। যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা ইস্যুতে এখন আস্থার সংকটে মার্কিন নেতৃত্ব। খোদ পশ্চিমা জোটেই স্পষ্ট হচ্ছে বিভেদ। এ অবস্থায় বিশ্ব বহুমেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে এগুচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের। 

২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর বক্তব্য দেয়ার সময় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের যোগাযোগ সমন্বয়ক জন কিরবির আবেগি চেহারা দেখা যায়। 

ইউক্রেনে পুতিন ও তার বাহিনী যা করছে তা তাকিয়ে দেখা কঠিন, কোনো নৈতিকতায় এর ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। 
অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর শুরুর পর এই জন কিরবি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন-
এটা যুদ্ধ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, এই যুদ্ধ আরও খারাপ হবে, সাধারণ মানুষ এর শিকার হবে।

একই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন দ্বিমুখী নীতি আরও স্পষ্ট হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। গাজায় বিপর্যস্ত মানবিক পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্ব যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে তা বাতিল হয়। এ নিয়ে খোদ জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ভূকৌশলগত বিভাজনে পক্ষাঘাতগ্রস্ত নিরাপত্তা পরিষদ। 

গত কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলকে এমন ব্ল্যাংক চেক দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মিত্র দেশের প্রতি পশ্চিমাবিশ্বের এমন পক্ষপাতিত্ব দীর্ঘ দিনের। 

তাদের সমস্যা বিশ্বের সমস্যা কিন্তু বিশ্বের সমস্যা তাদের সমস্যা নয়- ইউরোপকে এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলেন এস জয়শংকর।

এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে- কেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থায় আস্থা রাখবে মানুষ? বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবর্তন আসছে। খোদ ইউরোপেই এখন বিভেদ স্পষ্ট। অনেকেই মনে করে ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের উচ্চ দ্রব্যমূল্য ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাবে ১৪০ দেশ সমর্থন দিলেও নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে এই সংখ্যা কমে ৯০ এ নেমে আসে।

গাজা ইস্যুতে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ইউরোপ। অবস্থান পরিবর্তন করেছে ফ্রান্স। ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর সঙ্গে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্ক। এমনকি মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই সামরিক জোট ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকাও দেখা দিয়েছে। 

জার্মানির কূটনীতিক হ্যানস ভন স্পোনেক বলেছেন, একের পর এক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন ভেঙ্গে যাচ্ছে, জবাবদিহিতির মুখোমুখি হচ্ছে না। আমি ভীত, ইউরোপীয় সরকার যথেষ্ট করছে না, তারা সঠিক পথে নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এককেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে অনেকেই যে সরে আসছে- ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধে এর প্রমাণ মিলেছে। 

বহুমেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে এগুচ্ছে বিশ্ব।

ইতিহাসবিদ ও লেখক নোয়া হারিরি বলেন, অনেক দিন ধরেই আমরা আসলে বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে আছি। নতুন সুপার পাওয়ার হিসেবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন-রাশিয়ার মতো দেশের আর্বিভাব লক্ষ্যণীয়।

তবে ভূরাজনীতি কতটা পুনর্বিন্যস্ত হবে সেটা স্পষ্ট হবে গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত থামলে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি