মস্কোর ক্রোকাস হলে হামলায় নিহত বেড়ে ১৩৩ জন
প্রকাশিত : ০৮:৫৪, ২৪ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ০৯:০০, ২৪ মার্চ ২০২৪
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলের কনসার্টে অতর্কিত হামলায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১শ’ ৩৩ জনে।
মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গুলির আঘাতে এবং রাসায়নিকের বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় আজ একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে হামলায় জড়িত সবাইকে শাস্তির কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পুতিন বলেন, হামলাকারীরা ভেবেছিল তারা খুব সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে পালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সীমান্ত অতিক্রম করার আগেই চার বন্দুকধারীকে গ্রেফতার করে আমাদের ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)।
এফএসবি’র দাবি, এ হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের সঙ্গে ইউক্রেনের যোগাযোগ ছিল। এরই মধ্যে হামলায় জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, আটকদের মধ্যে চারজন সরাসরি হামলায় জড়িত ছিলেন।
এ সপ্তাহের ছুটিতে মস্কোতে যেসব অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ছিল সেগুলো সবই বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে মস্কোর চারটি প্রধান বিমানবন্দরের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।
এরআগে, হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র জানায়, মস্কোতে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার তথ্য ছিল তাদের কাছে। বিষয়টি তারা মস্কোকে এ মাসের শুরুর দিকে জানিয়েছিল।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২২ মার্চ) রাত ৮টার দিকে একটি ক্রোকাস সিটি হলের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় একদল অস্ত্রধারী। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, পাঁচজন বন্দুকধারী এ হামলা চালায়। প্রথমে গুলিবর্ষণের পর সেখানে গ্রেনেড বা বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
তাতে হলটিতে আগুন ধরে যায়। আর তাতেই ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, এই কাপুরুষোচিত হামলার বিশ্বজুড়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিন্দা, সমবেদনা এবং সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। ভয়ঙ্কর এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে বলেছেন, শুক্রবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সবচেয়ে জোরালো ভাষায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করেছেন। গুতেরেস ‘শোকসন্তপ্ত পরিবার ও জনগণ এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের সরকারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও শোক প্রকাশ করেছে এবং ‘সন্ত্রাসবাদের এই নিন্দনীয় কর্মকা-ের অপরাধীদের এবং মদদদাতাদের জবাবদিহি করতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য’ রাশিয়ান সরকার এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে ‘সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা’ করার জন্য বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের চিন্তাভাবনা এই ভয়ানক বন্দুক হামলার শিকারদের প্রতি রয়েছে। হোয়াইট হাউস আরও বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্চের শুরুতে মস্কোতে ‘বড় সমাবেশ’ লক্ষ্য করে একটি ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা’ সম্পর্কে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই হামলার ‘কঠোর নিন্দা’ করেছেন এবং পুতিনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, শি ‘জোর দিয়েছিলেন, চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করে এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য রুশ সরকারের প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, মস্কোর হামলায় তারা ‘মর্মাহত ও আতঙ্কিত।’ ইইউ’র একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইইউ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে কোনও হামলার নিন্দা করে। আমাদের চিন্তাভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত রাশিয়ান নাগরিকদের প্রতি রয়েছে।’
এলিসি প্রাসাদ জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ‘ইসলামিক স্টেট কর্তৃক দাবি করা সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেন। প্রাসাদ বলেছে, ‘ফ্রান্স ক্ষতিগ্রস্তদের, তাদের প্রিয়জনদের এবং সমস্ত রাশিয়ান জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে।’
জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তর এক্স-এ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনার পাশাপাশি বলেছে, ‘মস্কোর কাছে ক্রোকাস সিটি হলে নিরপরাধ মানুষের উপর ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনা দ্রুত তদন্ত করা উচিত।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদের জঘন্য কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। মেলোনি এক বিবৃতিতে ‘ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে বলেছেন ‘মস্কোতে নিরপরাধ বেসামরিক গণহত্যার ভয়াবহতা অগ্রহণযোগ্য।’
স্পেন বলেছে, তারা এই হামলায় ‘মর্মাহত’ হয়েছে এবং বলেছে তারা ‘যে কোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা করে।’ স্প্যানিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ লিখেছে,‘ভুক্তভোগী, তাদের পরিবার এবং রাশিয়ান জনগণের সাথে আমাদের সংহতি।’
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক্স-এ পোস্ট করেছেন, ‘মস্কোতে শুক্রবার রাতের মর্মান্তিক ঘটনার জন্য মর্মাহত। নিহতদের পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি আমাদের হৃদয় শোকাহত।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্সি এই হামলার নিন্দা করেছেন এবং ‘বন্ধুত্বপূর্ণ রাশিয়ান ফেডারেশনে স্থিতিশীলতার প্রতি তার আগ্রহের উপর জোর দিয়ে রাশিয়ান নেতৃত্ব এবং রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণের প্রতি তার সংহতি ও সমর্থন নিশ্চিত করেছেন।’
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এক্সে একপোস্ট বলেছেন, আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি আমাদের সমর্থন প্রকাশ করি এবং যে কোনো সহিংসতাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমাদের সমর্থন থাকবে।
মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ‘বেসামরিক মানুষের জীবনের বিরুদ্ধে সহিংসতার যে কোনো কাজ প্রত্যাখ্যান করে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ বলেছেন, ‘দুঃখের এই সময়ে ভারত সরকার এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।’ ভারত এই ‘জঘন্য সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা করে।
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস সেক্রেটারি কোবায়াশি মাকির এক বিবৃতিতে বলেছেন, জাপান হামলার নিন্দা করেছে। শোকাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে এবং যারা আহত হয়েছে তাদের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।
এএইচ
আরও পড়ুন