ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ
প্রকাশিত : ১৭:৪৮, ২০ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৮:০৫, ২০ জুলাই ২০১৭
ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি হলেন দলিত সম্প্রদায়ের রামনাথ কোবিন্দ। আগামী ২৫ জুলাই শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বিদায় নেবেন।
বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলেকটোরাল কলেজের ৬৫.৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ভারতের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন রামনাথ কোবিন্দ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মীনা কুমার পান ৩৪.৩৫ শতাংশ ভোট।
কোবিন্দ মোট ৫২২ জন এমপির ভোট পান, যেখানে মীনা কুমার পান ২২৫ এমপির ভোট। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৭৭১ জন নির্বাচিত এমপি ভোট দেওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া পার্লামেন্ট সদস্য ও ১১টি রাজ্যের ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে বিজেপির এই প্রার্থী মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা অনুপ মিশরা এনডিটিভিকে জানান, কোবিন্দের কাছে হেরে যাওয়া কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ প্রার্থী মীরা কুমার পেয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৫৯৪ ভোট।
গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত ভোট দেন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভার সাংসদ এবং রাজ্যের বিধানসভাগুলোর বিধায়করা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ভোটের আনুষ্ঠানিকতা। ওইদিন ভোট গ্রহণ শেষে বাকি থাকে ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশের কানপুরের কাছে পারাউখে কোবিন্দের বাড়িতে শুরু হয়ে গেছে আনন্দ উৎসব।
ভারতের সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ নির্বাচনে একটি ভোটের মূল্য এক। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদাতাদের ভোটের মূল্য এক জটিল পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয়। লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যদের একেকজনের ভোটের মূল্য ৭০৮, রাজ্য বিধানসভার সদস্যদের ভোটের মূল্য নির্ধারিত হয় সেই রাজ্যের বিধানসভার মোট আসন ও জনসংখ্যার নিরিখে। সবচেয়ে বেশি ভোট মূল্য উত্তর প্রদেশের বিধায়কদের, ২০৮। সবচেয়ে কম সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশের বিধায়কদের, ৮।
এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাংসদেরা ভোট দেন সবুজ ব্যালটে আর বিধায়কেরা গোলাপি ব্যালটে। রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্যরা এই ভোটে অংশ নিতে পারেন না। এবারের ভোটে অংশ নেন লোকসভার ৫৪৩ ও রাজ্যসভার ২৩৩ জন সদস্য এবং দেশের মোট ২৯টি রাজ্য এবং দিল্লি ও পদুচেরি দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৪ হাজার ১২০ জন বিধায়ক।
সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে মোট ভোট মূল্য ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৯০৩। এর মধ্যে সাংসদদের ভোট মূল্য ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৮, বিধায়কদের ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৫।
দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ রামনাথ কৃষকের সন্তান। ১৯৪৫ সালে উত্তর প্রদেশের কানপুর দেহাতে তাঁর জন্ম । ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট বিহারের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন রামনাথ। কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাণিজ্য ও আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে এই দলিত নেতা উত্তর প্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সদস্য হন। ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত দুই মেয়াদে ১২ বছর তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন।
রামনাথ পেশায় আইনজীবী। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লি হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালের আগ পর্যন্ত তিনি দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে ১৬ বছর ওকলাতি করেন।
রামনাথ দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করা বিজেপির ইউনিট ‘বিজেপি দলিত মোর্চা’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি অল ইন্ডিয়া সমাজের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি দলের জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের শীর্ষ সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন রামনাথ।
তিনি জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ২০০২ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন