গরমে ঠাণ্ডা থাকতে গিয়ে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা
প্রকাশিত : ১১:৫৬, ২০ জুন ২০১৮
গরমে ঠাণ্ডা থাকতে নানাভাবে চেষ্টা করছি আমরা। জলবায়ু গবেষকরা বলছেন, ২০০১ সাল থেকে পরবর্তী সতের বছরের মধ্যে ২০১৬ ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম সময় আর এতে প্রমাণ হয় যে, পৃথিবী ক্রমশই আরো উষ্ণ হয়ে উঠছে।
এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দালানের ছাদে থাকে এতে কোনও আশ্চর্যের বিষয় নেই। তবে এতে বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আইইএ বলছে যা ২০৫০ সাল নাগাদ তিনগুণে পৌঁছুবে।
মানে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানে মিলিতভাবে যে পরিমাণ বিদ্যুতের ব্যবহার হয় ২০৫০ সালে গিয়ে কেবল এয়ার কন্ডিশনিং-এর কাজেই সেই পরিমাণ বিদ্যুতের দরকার হবে।
সঙ্গত কারণেই বিজ্ঞানীরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্যে আরো কার্যকর পন্থা খুঁজে বের করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
এই যেমন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা `ন্যানো-ফোটোনিকস` নামের একটি উপাদান দিয়ে নতুন এক ধরনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এই উপাদানটি খুব পাতলা এবং তীব্র প্রতিফলনশীল। যা কি-না সরাসরি সূর্যের আলোতেও তাপ বিকিরণ করতে পারে।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই উপাদানের তৈরি প্যানেলের নিচ দিয়ে কোনও পাইপের মাধ্যমে যদি ঠাণ্ডা পানি প্রবাহিত করা যায়, তবে সেই পানির তাপমাত্রা বাইরের প্রকৃতির তুলনায় অন্তত কয়েক ডিগ্রি পর্যন্ত শীতল থাকে। আর এটি কোনও ধরনের বিদ্যুতের ব্যবহার ছাড়াই সম্ভব।
এখন এই `স্কাইকুল সিস্টেমটিকে বাণিজ্যিকভাবে প্রসারের কথা ভাবছেন গবেষকরা। ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার সৌর শক্তি কেন্দ্রের ড্যানি পার্কার এই পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ভবিষ্যতের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি বর্তমানের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ সুবিধা দেবে।
পার্কার এবং তার সহযোগীরা মিলে এয়ার কন্ডিশনিং এবং হিটিং সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করছেন বেশ কিছুদিন। ২০১৬ সালের দিকে তারা তাদের গবেষণায় দেখতে পান, পানির বাষ্পীভবনের ফলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যদি প্রচলিত এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তবে বাতাসকে আরো বেশি শীতল রাখতে সাহায্য করে।
এর মানে হল প্রচলিত শীতাতপ পদ্ধতি বাইরে থেকে আসা বাতাসকে ঠাণ্ডা করার ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকর হয় না।
তারা হিসেব করে দেখেছেন, নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করলে ইউরোপের আবহাওয়ায় শীতাতপ পদ্ধতি অনেকক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কার্যকর হবে।
প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান স্যামসাং উদ্ভাবন করেছে `বায়ু-মুক্ত` পদ্ধতি। যা কি-না খুব ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা বাতাস একটি কক্ষে ঢুকিয়ে দেবে যতক্ষণ না কাঙ্খিত তাপমাত্রায় পৌছায়। এতে করে ভীষণ বেগে চলা পাখার সাহায্য ছাড়াই কাজ হয়। আর এটি প্রচলিত এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের চাইতে অন্তত ৩২ শতাংশ বেশি কার্যকর বলেই প্রতিষ্ঠানটির দাবি।
এ মুহূর্তে বাজারে উন্নত প্রযুক্তির অনেক কার্যকর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রই রয়েছে, যেগুলো ইনভার্টারস নামে একধরনের সহজ একটি যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। যা বাতাসের স্বাভাবিক তাপমাত্রা অনুধাবন করতে পারে সেন্সরের মাধ্যমে এবং সে অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি ক্রমাগত কিন্তু খুব অল্প বিদ্যুৎ খরচে চলতে থাকে।
তবে বেশিরভাগ মানুষই এই ইনভার্টারস ডিভাইস সমৃদ্ধ এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম কিনতে আগ্রহী নন, এমনটাই মনে করেন ড্যানি পার্কার। যেমন এই ধরনের প্রযুক্তি চীনে খুব বেশি বিক্রি হবে না, বলছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এনার্জি বিশেষজ্ঞ লেইন স্টাফল।
কেননা স্টাফলের মতে চীনে বিদ্যুতের দাম কম। সুতরাং বেশি দাম দিয়ে সেখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী শীতলীকরণ যন্ত্র তেমন বাজার পাবে না।
`স্মার্ট এসি কন্ট্রোল` নামে অ্যাপ ভিত্তিক একটি প্রযুক্তি এনেছে টাডো নামের একটি কোম্পানি। যেটি ঘরে কোনও মানুষ না থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শীতাতপ যন্ত্রকে বন্ধ করে দেয়। যা শতকরা ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক বলে প্রতিষ্ঠানটির দাবি।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আইইএ-এর ব্রেইন মাদারওয়ে বলছেন, এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের চাহিদা বাড়ছে কেবল গরম বাড়ছে বলে নয়। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার কারণেও এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত, চীন এবং ইন্দোনেশিয়া তার প্রমাণ।
ভারতের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, অতিরিক্ত এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহারের ফলে দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়িয়ে দিয়েছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন আর সেই সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যবহার হ্রাস করেই উষ্ণায়নের হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: বিবিসি
একে//
আরও পড়ুন