ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

দিল্লী কবে নিরাপদ হবে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১৭, ২৪ আগস্ট ২০১৮

ভারতের রাজধানী দিল্লীতে এমনিতেই নারী সুরক্ষা তলানিতে৷ দিনেদুপুরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্রনেতার ওপর হামলা৷ সামগ্রিক আইন-‌শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে মতপার্থক্যের অবকাশ নেই৷ কিন্তু সমস্যাটা ঠিক কোথায়?‌ দিল্লির শাসনভার কার হাতে, তা নিয়ে বিবাদ মোটামুটি মিটলেও দিল্লি পূর্ণরাজ্য হবে কিনা অথবা পুলিশের পরিচালন ভার কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে লড়াইয়ের শেষ নেই৷ নিত্যদিন শিশুকন্যা ধর্ষণের খবর বেরোচ্ছে৷ নারী সুরক্ষায় দেশের সবচেয়ে তলানিতে থাকা রাজ্য দিল্লী।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় অনেক বেশি, কার্যত হু হু করে বাড়ছে দিল্লির জনসংখ্যা৷ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে দিল্লির জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬০ লক্ষ‌ ৭০ হাজার৷ ২০১৪-তে তা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৮০ হাজার৷ ফলে ধরে নেওয়া যেতে পারে বর্তমানে দিল্লির জনসংখ্যা প্রায় দু-‌কোটি৷ জেনে রাখা ভালো, দিল্লি পুলিশের অন্তত ৪০ শতাংশ পুলিশকর্মীকে সর্বদা ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতেই ব্যস্ত থাকতে হয়৷ দিল্লিতে মোট পুলিশকর্মীর সংখ্যা ৭৭,৯৬৫জন৷ দিল্লি পুলিশে পদ শূন্য আছে ৬৬,০০০৷ সম্প্রতি ৩৬০০জন পুলিশকর্মী নেওয়ার অনুমোদন মিলেছে, যা ফাঁকা পদের মাত্র ৬ শতাংশ! ‌তাহলে সহজেই অনুমেয় কেন দিল্লির আইন-‌শৃঙ্খলা তলানিতে ঠেকেছে৷

কিছুদিন আগে দিল্লির একটি সরকারি বিদ্যালয়ে এক ছ`‌বছরের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পর সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে৷ তিনি নিজে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‌‘‌গত কয়েক বছর ধরে দিল্লিতে শিশুকন্যা ও মহিলাদের ওপর জঘন্যতম অপরাধের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর৷`‌`‌ তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও দিল্লির উপ-‌রাজ্যপাল অমিল বাইজালের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন৷ বলেছেন, ‘‌‘‌এর জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার৷ কারণ, বার বার বলা সত্ত্বেও কার্যত হাত গুটিয়ে বসে আছে দিল্লি পুলিশ৷ দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে৷ আমাদের হাতে দেওয়া হোক৷`‌`‌ তবে কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপালেও দিল্লি সরকার যে চুপ করে বসে নেই, তা জানাতে ভোলেননি কেজরিওয়াল৷ বলেছেন, ‘‌‘পরিস্থিতি বিচার করে গোটা দিল্লিজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ ‌আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েকমাসের মধ্যে প্রায় ৩০-‌৪০ শতাংশ ঘটনা কমে যাবে৷ তবে এমন ঘটনা বন্ধ করতে হলে আইন-‌শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে৷ সেখানে বড়সড় খামতি৷`‌`‌

ভারতের রাজধানীতে সাধারণ মানুষের প্রাণও নিরাপদ নয়৷ সীমান্তে নাশকতার ঘটনা আখছার৷ রাজধানী শহর সুরক্ষিত কি?‌ মোটেই তা নয়৷

সম্প্রতি ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে এক সরেজমিন সমীক্ষায় রাজধানীর বড় রেল স্টেশনগুলির নিরাপত্তায় মারাত্মক ফাঁকফোকর ধরা পড়েছে৷ নয়া দিল্লি, পুরোনো দিল্লি, নিজামুদ্দিন এবং আনন্দ বিহারের মতো স্টেশন, যেখানে বিপুল জনসমাগম হয়, সেখানে ভারী মালপত্র নিয়ে যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা৷ সেই মালপত্র পরীক্ষা করা, উপযুক্ত স্ক্যানিং পদ্ধতি নেই, যাত্রী সুরক্ষায় যা অত্যন্ত জরুরি৷ পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‌‘‌সুরক্ষা ব্যবস্থায় চরম উদাসীনতা ধরা পড়েছে৷ জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে যদি এমন কোনো একটি মালপত্রের ভিতর বিস্ফোরক রেখে ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে এই স্টেশনগুলিতে বহু মানুষ প্রাণ হারাতে পারে৷`‌`‌

ডয়চে ভেলে কথা বলেছে দিল্লির পুরোনো বাসিন্দা, প্রাক্তন বাঙালি আমলা সুগত হাজরার সঙ্গে৷ তিনি বললেন, ‘‌‌‘‌‌দিল্লিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই বহিরাগত৷ আশেপাশের রাজ্যগুলি থেকে এখানে যারা আসে, তাদের বেশিরভাগেরই চালচুলো নেই৷ তারা ঘরসংসার ছেড়ে আসে৷ দিল্লি শহরে এসে বেশি পয়সা রোজগার করে৷ ফলে মনোরঞ্জন চায়৷ তারপর পথেঘাটে কাউকে পছন্দ হলেই তাদের সঙ্গে জোরজবরদস্তি করতে চায়৷ শুধু এই ধরনের লোক নয়, আরও একটি দিক হলো গোটা উত্তর ভারতে বাড়ির মেয়েদের দ্বিতীয় নাগরিক মনে করেন পুরুষরা৷ তাই নিজেদের বাড়িতে তো বটেই, পথেঘাটেও মহিলাদের সম্মান করে না তারা৷ এছাড়া মনে রাখতে হবে, দিল্লিতে কর্মরত পুলিশকর্মীরা এসেছেন উত্তর ভারতের এমন সমাজ থেকেই৷ ফলে স্বাভাবিক ভাবে তাঁদের মধ্যেও মহিলাদের সম্পর্কে ধারণা তেমনই৷`‌`‌

ঠিক কী ধরনের অপরাধ ও অপরাধী রয়েছে দিল্লিতে ?‌ একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে৷ দিনকয়েক আগে দিল্লি পুলিশের হাতে এসেছে ‘‌অপরাধ জগতের গডমাদার`৷ সঙ্গম বিহার এলাকার বাসিন্দা ৬২ বছরের সেই মহিলা চুক্তিতে হত্যা করতে অভ্যস্ত৷ অনেকটা সিনেমার মতোই৷ ২০১৭ সালে এক ২১ বছরের যুবককে হত্যার ঘটনার পর থেকে গত ৮ মাস ধরে গা-‌ঢাকা দিয়েছিল বসিরন নামের ওই মহিলা৷ নিজের ৮ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো অপরাধ জগতে রাজত্ব চালাতো বসিরন৷


দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় বসু ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‌‘সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩৬০০ জন মানুষ দিল্লির স্থায়ী বাসিন্দা হচ্ছে৷ গত তিন বছর ধরে লাগাতার সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ কয়েকদিন আগেই সংসদ ভবন থেকে ঢিলছোঁড়া দূরে জেএনইউ-‌র ছাত্রনেতা উমর খালিদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র-হ আক্রমণ চালালো দু্ষ্কৃতীরা৷ ১০দিন পরে হলেও পুলিশ সিসিটিভি-র সূত্র ধরেই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে৷ ফলে কেজরিওয়াল যে উদ্যোগ নিয়েছেন এবং যে দাবি করছেন, তার সারবত্তা আছে, সেটা পরীক্ষিত সত্য৷`‌`‌

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে কেন্দ্রকে জানিয়েছে, নয়াদিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন এলাকা, যার মধ্যে সংসদ ভবন, নর্থব্লক, সাউথব্লক, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও সরকারি কর্মচারীদের আবাসন রয়েছে, সেইসব এলাকার দায়িত্ব নিক কেন্দ্র৷ কিন্তু দিল্লির বাকি ৯০ শতাংশ এলাকা রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিক৷ তাতে মোটেও রাজি হচ্ছে না ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার৷ এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক চক্রান্ত৷`‌`‌ সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, চাপান-‌উতোর তো চলছেই, কিন্তু, কবে মেয়েরা নিরাপদে বাইরে বেরোতে পারবে?‌ উত্তর নেই কারো কাছে৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি