মাংসের কেজি ৭৫ লাখ বলিভার
দরদাম করে পঁচা মাংস কিনে খাচ্ছেন ভেনিজুয়েলার বাসিন্দারা
প্রকাশিত : ১১:২২, ২৮ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১১:৪৬, ২৮ আগস্ট ২০১৮
চরম মুদ্রাস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট ভেনেজুয়েলা। চার দিকে শুধু সংকট আর সংকট। এক দিকে খাবারের অভাব, অন্য দিকে বিদ্যুৎ নেই। প্রায় ৯ মাস ধরে বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা খেলায় ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংস পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে।
খাদ্য সংকটের কারণে এসব মাংস ফেলে না দিয়ে বাজারে তুলছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও কিনছেন। কেনার আগে নাক বাড়িয়ে শুঁকে শুঁকে কিনছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন- একেবারেই বেশি পচা, না একটু-আধটু পচা! খাওয়া যাবে তো!
পঁচা মাংস খেতে পেরেও সন্তোষ অনেকের মধ্যে। চড়া মুল্যের বাজারে মাংস তো খাওয়া যাচ্ছে! কারণ অপ্রতুল হলেও বাজারে ভালো মাংসের কেজি ৭৫ লাখ বলিভার।
ভেনিজুয়েলার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মারাকাইবোর বাসিন্দারা গা গুলিয়ে ওঠা পচা-দুর্গন্ধময় মাংস দরদাম করেই কিনছেন। পচা হওয়ায় একটু সস্তাতেই মিলছে গরু, ছাগল ও মুরগির মাংস।
ভেনিজুয়েলার তেল মজুদের অর্ধেকের বেশি আসে মারাকাইবো শহর থেকে। অর্থ মন্দা শুরুর পর থেকে শহরের শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করে। প্রায় ৯ মাস ধরে ১৫ লাখ বাসিন্দার এ শহরে বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে। গত দুই মাসে তা চরমে রূপ নিয়েছে। ১০ আগস্ট থেকে শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন পুরোপুরি নষ্ট।
এর পর থেকে পুরো অন্ধকারে মারাকাইবোবাসী। শহরের বড় বড় মার্কেটের ফ্রিজে থাকা মাংস পচে যাচ্ছে। বিক্রেতারা কম মূল্যে তা বাজারে তুলছেন। মাংস বিক্রেতা জোহেল প্রিয়েতো বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় মাংস থেকে গন্ধ ছুটছে। পচে গলে যাওয়ার আগেই বিক্রি করতে পারলে অন্তত কেনা দামটা পাওয়া যেত।’
পচা এসব মাংস গরিবরা কম দামে কিনছেন। মাংস খেতে পেয়ে অনেক গরিব বাসিন্দা প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদও জানাচ্ছেন।
তিন সন্তানের বাবা ইয়েদিস লুনা বলেন, ‘গন্ধ একটু বিদঘুটে। তবে ভিনেগার ও লেবুর রস ছিটিয়ে তা কমিয়ে আনা হচ্ছে। ধন্যবাদ মিস্টার মাদুরো, অনেক দিন পর আমরা মাংস খেতে পারছি।’
গত বছর লুনা ও তার সন্তানদের ছেড়ে কলাম্বিয়া পাড়ি জমান তার স্ত্রী। লুনা আরও বলেন, ‘আমি ও আমার ৬, ৯ ও ১০ বছরের সন্তান রান্না মাংস খেয়েছি। আমার সন্তানদের অসুস্থতা নিয়ে ভয়ে ছিলাম। কারণ তারা বয়সে ছোট। শুধু ছোট ছেলেটার একটু ডায়রিয়া হয়েছিল।’
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলছে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল মজুদের দেশ ভেনিজুয়েলা। তেলের দরপতনের পর সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও খাবার পানি ও বিদ্যুতের মতো মৌলিক সেবা ছিল বিলাসিতার শামিল। অর্থনৈতিক সংকটের পর থেকে এসব বিলাসিতায়ও টান পড়ে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এ সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দায়ী করেছেন।
সূত্র: এপি।
/ এআর /
আরও পড়ুন