ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বিবিসির বিশ্লেষণ

যে কারণে বর্মী সেনা প্রধানকে নিষিদ্ধ করল ফেসবুক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৪, ২৯ আগস্ট ২০১৮

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানসহ কয়েকজন পদস্থ সেনা কর্মকর্তা এখন আর ফেসবুকে নেই। ফেসবুক এ সব সেনা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দিয়েছে রাখাইনে `গণহত্যা` ও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংসতায় তাদের ভূমিকার বিষয়টি জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে উঠে আসার পর।

আর এটাই প্রথমবারের মতো ফেসবুক কোনও দেশের সামরিক বা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করলো।

সব মিলিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কিত আঠারটি অ্যাকাউন্ট ও বায়ান্নটি পেজ সরিয়ে ফেলে ফেসবুক। অথচ এদের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি বিশ লাখ।

মিয়ানমারে ফেসবুকই সব চেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় এক কোটি আশি লাখ।

তবে জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছ, বেশিরভাগ ব্যবহারকারী মনে করেন ফেসবুকই ইন্টারনেট কিন্তু `এটাই ঘৃণা ছড়ানোর একটি কার্যকর মাধ্যম` হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে।

রয়টার্সের একটি রিপোর্টে গত বছর বলা হয়েছে, তারা অন্তত এক হাজার পোস্ট, কমেন্টস ও ছবি পেয়েছে ফেসবুকে যেখানে রোহিঙ্গা ও মুসলিমদের আক্রমণ করা হয়েছে। এ সব কমেন্টে রোহিঙ্গাদের `কুকুর`, `ধর্ষক` হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অনেকের কমেন্টে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি পাওয়া যায় এমনকি একটি পেজে `সব মুসলিমকে মেরে ফেলার` কথাও বলা হয়। এমনকি বিবিসির ফেসবুক পোস্টগুলোতেও অনেকে রোহিঙ্গা বিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য লিখেছেন।

জাতিসংঘের রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত খবরেও রোহিঙ্গা বিরোধী এমন অনেক মন্তব্য এসেছে। একজন লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গারা বাঙ্গালি..তারা আগ্রাসনকারী’।

জানা যায়, সেনা প্রধান জেনারেল মিন আং লিয়ানের দুটি অ্যাকাউন্ট ছিল ফেসবুকে। এএফপি বলছে, একটি অ্যাকাউন্টে অনুসারী ছিল তের লাখ আর অন্যটি অনুসরণ করছিলেন ২৮ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী।

মিয়ানমারের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেনাপ্রধান খুবই প্রভাবশালী। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনিও রোহিঙ্গাদের `বাঙ্গালী` হিসেবে চিত্রিত করেন এবং বলেন যে রোহিঙ্গা শব্দটি একটি বানানো শব্দ।

ফেসবুক বলছে, নিষিদ্ধ অন্য পেজগুলোর মতো সেনাপ্রধানের পেজও জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনাকে উস্কে দিয়েছে।

মিয়ানমারর নিউজ সাইট মিয়ানমার টাইমসের মতে দেশটির প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলো নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই। অ্যাকাউন্টগুলো পুনরায় চালুর বিষয়ে ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনার কথাও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালেই মিয়ানমারে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ফেসবুক ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই বছর মার্চেই জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তার মুখেও বিষয়টি উঠে আসে। জাতিসংঘ রিপোর্ট বলছে, ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে ফেসবুকের ব্যবস্থা নেওয়ার গতি ধীর ও অকার্যকর। এতে বৈষম্য ও সহিংসতায় ফেসবুক পোস্ট ও ম্যাসেজ কিভাবে ভূমিকা রেখেছে তার স্বাধীন ও বিস্তারিত তদন্তের কথাও বলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ফেসবুক নিজেও তাদের ধীরগতির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। যদিও একইসঙ্গে তারা হেট স্পিচ চিহ্নিত করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেছে। একইসঙ্গে তারা স্বীকার করেছে, মিয়ানমারে অনেকেই নিউজের জন্য ফেসবুকের ওপরই নির্ভর করে থাকেন।

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি