‘চুমু থেরাপি’র মাধ্যমে চিকিৎসা, অবশেষে শ্রীঘরে
প্রকাশিত : ২৩:৫০, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৫১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
‘চুমু ওষুধ` ব্যবহার করে রোগ নিরাময়! এমনই অবাক করা কাণ্ড দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছেন এক স্বঘোষিত ‘গডম্যান`৷ যাবতীয় অসুখ সারাতে তিনি নানা ভঙ্গিতে চুম্বন করতেন৷ বহু নারীকে বোকা বানিয়ে দিব্বি চলছিল তার কারবার৷ তবে শেষ রক্ষা হয়নি৷
জীবনে সমস্যার কি শেষ আছে! কেউ শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন, কেউ সাংসারিক অশান্তি থেকে নিস্কৃতি চান, কারো স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত, কেউ নেশাগ্রস্ত, কেউ আবার যৌন সমস্যায় জেরবার৷ বেশ কিছু সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ায় সঙ্কোচ থাকে৷ সামাজিক সচেতনতার অভাবে ঠিক সেখানেই থাবা বসায় তথাকথিত ‘ধর্মগুরু` বা ‘বাবারা`৷ এমনই এক ‘বাবা`র সন্ধান মিলেছে ভারতের আসামে৷ যাবতীয় সমস্যার সমাধানে তার একটাই ওষুধ আর তা হলো ‘চুমু`৷ লোকমুখে তার নাম ‘কিসিং বাবা`৷ তবে দেরিতে হলেও সেই ভন্ডের ঠাঁই হয়েছে জেলে৷ কিন্তু হতভাগ্য দেশে এক ‘বাবা` জেলে গেলে আর এক ‘বাবা` আবির্ভূত হয়৷
আসামের মোরিগাঁও থেকে রামপ্রকাশ চৌহান নামে বছর তিরিশের এক ভন্ড ‘বাবা`কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ভোরালটুপ গ্রামের বাসিন্দা তিনি৷ তার এক অদ্ভুত দাবি৷ তার কাছে নাকি ভগবান বিষ্ণুর দেওয়া অলৌকিক শক্তি আছে! শরণাপন্ন মহিলাদের গলা জড়িয়ে তিনি চুমু খেতেন৷ এ কারণেই তার নাম হয়ে যায় ‘চুমু বাবা`৷ তার দাবি ছিল, তার ‘চমৎকারী চুম্বন` ভীষণ শক্তিশালী৷ তা দিয়ে নাকি তাবৎ অসুখ নিমেষে ভালো করে দিতে পারেন৷
একবিংশ শতকে পৌঁছেও মোরিগাঁও এমন এক জায়গা, যেখানে যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষ ‘কালো জাদু`তে বিশ্বাস করে আসছে৷ আর সেই সুযোগ নিয়ে নিজেকে ‘বিষ্ণুর অবতার` দাবি করে মানবরূপী শয়তান রামপ্রকাশ সেখানে গত তিন মাস ধরে রমরমা কারবার ফেঁদে বসেছিলেন৷ রামপ্রকাশের মা-ও ছেলের ‘অলৌকিক` শক্তির প্রচার করতেন৷ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পু্লিশ৷ তার আশ্রমে যথারীতি ভক্তের ঢল নেমেছিল৷ নারী-পুরুষ সকলেই রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে আসতেন৷
তবে ‘বাবা`র বেশি পছন্দ শিষ্যাদের৷ শর্ত একটাই– যে-কোনো সমস্যা নিয়ে ‘বাবা`র কাছে যেতে পারবেন শুধু মহিলারাই৷ ভিন্ন রোগে ভিন্ন চুমু৷ কাউকে স্রেফ ফ্রেঞ্চ কিস, কাউকে আবার লিপলক কিস৷ ধর্মান্ধ মানুষজন ‘বাবা`র ক্ষমতায় নাকি এমন অভিভূত যে, ক্রমে বাবার মাহাত্ম ও দৈব শক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তের গ্রামগুলিতে৷ তার বাড়ির সামনেই তৈরি হয়ে যায় ‘চুমু বাবা`র মন্দির৷ খবর পেয়ে ছুটে এলেন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা৷ ব্যাপক প্রচার হলো৷ তারপর এক এক করে মহিলারা আসছেন, আর ‘বাবা` তাদের জাপটে ধরে চুমু খাচ্ছেন৷
গত কয়েক বছরে আশারাম বাপু থেকে বাবা রাম রহিম৷ হালে বাবা দাতি মহারাজ থেকে ওম বাবা৷ এরা সবাই গেরুয়াধারী৷ সবারই সহজ শিকার নারী৷ ধর্মের আড়ালে লালসার শিকার হয়েছেন শত শত মহিলা৷
কথা হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের আজীবন সদস্য শ্যামল চ্যাটার্জির সঙ্গে৷ তাঁর কথায়, ‘‘ বাবা-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে৷ এ নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন৷ কিন্তু বেশকিছু ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে৷ প্রশাসনের দায়িত্ব অস্বীকার করা চলে না৷ প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঠিকঠাক হলে শুরুতেই বিনাশ হয় এই ‘বাবা`রা৷ ভারতে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে এই ‘বাবা`দের প্রচার চলছেই৷ প্রচারমাধ্যমকেও আটকানো উচিত৷ সিনেমা, টিভি সিরিয়াল ও সোশ্যাল সাইটে দিব্যশক্তির প্রচার চলছে৷ শুধু আইন করে এদের রুখে দেওয়ার কথা বলা হলে, এক বাবা যাবেন, আর এক বাবা আসবেন৷``
দীর্ঘদিন সামাজিক কুসংস্কার ও জনসচেতনতা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে শ্যামল চ্যাটার্জি বললেন, ‘‘আরো একটি দিক হলো, সমাজের উচ্চপদস্থ ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা৷ ধরুন, এপিজে আবদুল কালামকে যদি কোনো ‘বাবা`র পায়ের কাছে বসে থাকতে দেখা যায়, তাহলে সেই বাবা সম্পর্কে একটা আস্থা বা বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে৷ সাধারণ মানুষ মনে করে, সমাজের গন্যমান্য ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা যাদের শরণাপন্ন, তাঁরা নিশ্চয়ই মহান৷ বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এমন ভন্ড ‘বাবা`দের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানমনস্করা প্রচারে নামলে সাধারণ মানুষ বলে, ‘বাবা`দের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কারণ, উচ্চ পদস্থ মানুষরা কী বোকা?`` ডয়েচে ভেলে
এসি
আরও পড়ুন