এবছর পদার্থে নোবেল বিজয়ীদের খুঁটিনাটি
প্রকাশিত : ২০:৫৭, ২ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ২১:০১, ২ অক্টোবর ২০১৮
মানবজাতি ও সভ্যতার প্রতি অনবদ্য অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি বছর পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে নোবেল পুরস্কার কমিটি। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রতি বছর রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি, পদার্থবিদ্যা এবং চিকিৎসা; এই ৫টি বিষয়ে অনন্য কাজ করা ব্যক্তিদের পুরস্কার দিয়ে আসছে এই কমিটি। ১৯৬৮ সালে এর সাথে যুক্ত হয় অর্থনীতি। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করে কমিটি।
যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থবিজ্ঞানী আর্থার আশকিন, ফরাসি পদার্থবিদ জেরার্ড ম্যুর এবং কানাডার ডনা স্ট্রিকল্যান্ড। লেজার রশ্মি নিয়ে যুগান্তকারী উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরুপ তাঁদেরকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি। এই তিন ব্যক্তির বিস্তারিত জেনে নিন এই প্রতিবেদনে।
আর্থার আশকিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ১৯৯২ সালের ২ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আর্থার আশকিন। বাবা ইসাডোর রাশিয়ান বংশোদ্ভুত এবং মা অ্যানা আশকিন ইউক্রেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে থিতু হন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন আর্থার আশকিন। এরপর কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পড়াশুনা করেন তিনি। সেখান থেকেই অর্জন করেন ডক্টরেট ডিগ্রী।
ছাত্রজীবনের সময় থেকেই কলাম্বিয়া র্যাডিয়েশন ল্যাবে কাজ শুরু করেন আর্থার। তবে তার আনুষ্ঠানিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৫২ সালে বেল ল্যাবে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মাইক্রোওয়েভ নিয়ে গবেষণা করেন আর্থার। পরের বছর থেকে লেজার রশ্মি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি।
১৯৮৬ সালে অপটিক্যাল টুইজার আবিষ্কারের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন আর্থার আশকিন। এর আগে ১৯৬০ সালে বেল ল্যাব থেকে পিজো ইলেকট্রিক ক্রিস্টালে ফটোরিফ্র্যাক্টিভ এর ক্রিয়া আবিষ্কারের সহ-আবিষ্কারকও ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর বেল ল্যাবে কাজ করার পর ১৯৯২ সালে এখান থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর যোগ দেন লুসেন্ট টেকনোলজিতে। এখন অবশ্য ব্রুকলিনে নিজের বাসার ল্যাবেই গবেষণা করে যাচ্ছেন এই নোবেল বিজয়ী।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পদার্থবিজ্ঞানে তিন জন নোবেল বিজয়ীর সাথে কাজ করেছেন আর্থার। এদের মধ্যে ‘কুলিং অ্যান্ড ট্র্যাপিং অ্যাটম’ নিয়ে গবষণার জন্য ১৯৯৭ সালে নোবেল জয়ী স্টিভেন চু এর কাজের মূল অংশের কাজ ছিলো আর্থারেরই করা। এখন পর্যন্ত মোট ৪৭টি আবিষ্কারের পেটেন্ট আছেন আর্থার আশকিনের দখলে।
পুরস্কারঃ জোসেফ এফ কেইথলি অ্যাওয়ার্ড (২০০৩), হার্ভে প্রাইজ (২০০৪), ফ্রেডরিক ইভস মেডাল এবং নোবেল পুরস্কার (২০১৮)
জেরার্ড আলবার্ট ম্যুর
জেরার্ড আলবার্ট ম্যুর ১৯৪৪ সালের ২২ জুন ফ্রান্সের আলবার্টভিলে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রিনোবেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। আর ১৯৭৩ সালে অর্জন করেন ডক্টরেট ডিগ্রী।
ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় কেটেছে জেরার্ডের। নিউইয়র্কের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনা করেছেন ৩০ বছরেরও বেশি সময়। ফলিত পদার্থবিদ্যা এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে আসছেন তিনি। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে আলট্রাফাস্ট অপটিক্যাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।
চিরপড পালস অ্যামপ্লিফিকেশন (সিপিএ) আবিষ্কারের জন্য চলতি বছরে ছাত্রী ডোনা স্ট্রিকল্যাণ্ডের সাথে নোবেল পুরস্কার পান এই পদার্থবিজ্ঞানী। রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সময় ডোনাকে সাথে নিয়ে এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন তিনি।
এছাড়াও চক্ষু চিকিতসাবিদ্যায় তার কর্ণিয়ায় ল্যাসিক প্রযুক্তি আবিষ্কার ৯০ এর দশকে তাকে নিয়ে যায় অনন্য এক উচ্চতায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্তত ৫০ লক্ষ রোগীর চোখ ভালো করা গেছে।
পুরস্কারঃ জেরার্ড আলবার্ট ম্যুরের অর্জিত অনেক পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
- আর ডব্লিউ উড পুরস্কার (১৯৯৫)
- এজারটন পুরস্কার (১৯৯৭)
- মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদক রাসেল অ্যাওয়ার্ড (২০০২)
- কোয়ান্টাম ইলেকট্রনিক পুরস্কার (২০০৪)
- উইল ই ল্যাম্ব অ্যাওয়ার্ড (২০০৫)
- চার্লস হার্ড টাউনস অ্যাওয়ার্ড (২০০৭)
- ফ্রেডরিক ইভস মেডাল (২০১৬)
ডনা স্ট্রিকল্যান্ড
ডনা স্ট্রিকল্যান্ড ১৯৫৯ সালের ২৭ মে কানাডার অন্টারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। এখানকারই ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে প্রকৌশল পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। আর ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
ডনা স্ট্রিকল্যান্ড পৃথিবীর তৃতীয় তম নারী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষক জেরার্ড আলবার্ট ম্যুরের তত্ত্বাবধানে লেজার রশ্মি নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। তার সাথে মিলে চিরপড পালস অ্যামপ্লিফিকেশন (সিপিএ) আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
লেজার রশ্মি নিয়ে তার প্রথম গবেষণা পত্র প্রকাশ পায় ১৯৮৫ সালে। “কমপ্রেশন অব অ্যামপ্লিফাইড চিরপড অপটিক্যাল পালস” শিরোনামের ঐ গবেষণাপত্রটি তাকে প্রথমবারের মতো আলোচনায় নিয়ে আসে।
অধ্যাপনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অপটিক্যাল সোসাইটির প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট (২০১১) এবং পরে প্রেসিডেন্ট (২০১৩) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত অপটিক্স লেটার নামক একটি জার্নালের সম্পাদনাও করেন ডনা স্ট্রিকল্যান্ড।
ইনটেন্স লেজার ম্যাটার ইন্টার্যাকশন, নন-লিনিয়ার অপটিক্স এবং শর্ট-পালস, ইনটেন্স লেজার সিস্টেমে ব্যাপক পাণ্ডিত্য আছে এই কানাডিয়ান পদার্থবিজ্ঞানীর। এর স্বীকৃতিস্বরুপ নোবেল পুরস্কার ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অপটিক্যাল সোসাইটির ফেলো অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), কনট্রেল স্কলার পুরস্কার (২০০০), প্রিমিয়ার্স রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৯) এবং আলফ্রেড রিসার্চ ফেলোশিপ পুরস্কার (১৯৯৮) অর্জন করে ডনা।
//এস এইচ এস//
আরও পড়ুন