ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

যে কারণে ভারতের নির্বাচনে মমতা-মায়াবতী গুরুত্বপূর্ণ

প্রকাশিত : ১২:৪৪, ৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ১২:৪৮, ৭ মে ২০১৯

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার নির্বাচন গতকাল (সোমবার) শেষ হয়েছে। আরও দুই ধাপের নির্বাচন বাকি রয়েছে। মোট সাত ধাপে নির্বাচন শেষে আগামী ২৩ মে নির্বাচনের ভোট গণনা করা হবে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে হিসাব নিকাশ, কে হতে চলছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

প্রধানমন্ত্রীর দৌঁড়ে নরেন্দ্র মোদী ও  রাহুল গান্ধী ছাড়াও দুই নারী প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী এগিয়ে রয়েছেন।  

এবারের লোকসভা নির্বাচনে মমতার বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই জিততে চলেছে তার দল তৃণমূল। তাই বিজেপি, কংগ্রেসের পর আসন সংখ্যায় তার দল হবে তৃতীয়।

২০১৪ সালে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সেরা পারফরম্যান্স করেছিল। সে সময় তারা মোট ভোটের ১৭ শতাংশ পেয়েছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময়ে বিজেপির ভোট শেয়ার ১০ শতাংশ কমে যায়।

কিন্তু চাপ সরায়নি তারা।

বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের বোঝাপড়ার ব্যর্থতার ফলে বিজেপি বিরোধীশূন্যতার পরিস্থিতি কাজে লাগাতে থাকে। ২০১৬ সাল থেকে প্রায় প্রতিটি উপনির্বাচনে বিজেপি কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের থেকে এগিয়ে থাকে এবং রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে অবতীর্ণ হয়।

অন্য বিরোধীদের থেকে বিজেপি ভাল ফল করায় পালে হাওয়া পায় আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের মত সংগঠনগুলিও। আগে এদের এ রাজ্যে তেমন কোনো উপস্থিতি না থাকলেও, এবার গলা তুলতে থাকে তারা।

তাই প্রশ্ন উঠেছে এবারের লড়াইটা কি সত্যিই তৃণমূল বনাম বিজেপির? ব্যাপারটা দৃশ্যত তেমনই, যদিও কংগ্রেস এবং সিপিএম, দুজনেই এ লড়াইয়ে শামিল।

তৃণমূলের সমালোচকরা বলছেন, ২০১৮সালের মে মাসের রক্তক্ষয়ী পঞ্চায়েত ভোটের পর অবস্থা পাল্টেছে। ওই ভোটে ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল শাসক দল।

অভিযোগ ছিল, ভোটারদের ভোট দিতেই দেয়া হয়নি।

সমালোচকদের মতে, এর ফলে অনেকেই তৃণমূল থেকে বিজেপির দিকে মুখ ফেরাবেন। তবে পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূল থেকে যে ভোট বিজেপির দিকে গেছে, তা আসন সংখ্যার দিক থেকে যথেষ্ট কিনা তা যেমন দেখার রয়েছে, তেমনই দেখতে হবে, তৃণমূলের হারানো ভোট সবই কি বিজেপির দিকে গেছে, না তার ভাগ পেয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও?

এমনিতেও বিজেপিতে ক্ষমতার কেন্দ্র অনেক এবং এখানকার আসনগুলোও হারাচ্ছে তারা। দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তৃণমূল সরকার।

এদিকে নিজের জনপ্রিয়তা অনেকটাই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েক বছর ধরে তার রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে কেন্দ্রের দিকে আক্রমণ শানানো এবং ফেডারেলিজমের পক্ষে সওয়ালকে ঘিরেই।

বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধীশূন্য অবস্থার যেমন ফায়দা তুলেছিলেন জ্যোতি বসু, ঠিক তেমনভাবেই বিজেপির বহুধাবিভক্তি থেকে ফায়দা তুলবেন মমতা। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম দু’দফার পরে বামফ্রন্ট তাদের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি সুসংহত করেছিল।

এবার মমতা-শাসনের দ্বিতীয় দফা চলছে। মুসলিম ভোট ছাড়াও গরিব মানুষের জন্য  দুইটাকা কেজি চাল এবং স্কুলছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে বাইসাইকেলের প্রকল্পও তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

এদিকে কংগ্রেস আর সিপিএম দুপক্ষই সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। তাদের অধিকাংশ কর্মীই ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অনেকে আবার যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।

এছাড়া উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী মনে করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে উত্তর প্রদেশ। কারণ, উত্তরপ্রদেশ এখনো লোকসভায় আসনের দিক থেকে শীর্ষে।

তাই তিনি তার দলীয় সমর্থকদের বলেছেন, সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। হটাতে হবে বিজেপিকে। বহুজন সমাজ পার্টি নেতা সুধীন্দ্র ভাদোরিয়া দাবি তুলেছেন মায়াবতীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার।

ভারতে জনসংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। জনমত সমীক্ষায় বিজেপির আসন কমছে উত্তরপ্রদেশে। এই রাজ্যে রয়েছে লোকসভার ৮০টি আসন।

একসময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ণায়ক শক্তি ছিল এই উত্তরপ্রদেশ এবং পাশের বিহার। কংগ্রেসের ঘাঁটিও ছিল এই উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে জনপ্রিয়তা কমে কংগ্রেসের।

উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় আসে মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। আর বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং নিতীশ কুমারের জনতা দল (সংযুক্ত)।

গত নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে প্রথম ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সম্প্রতি সেই উত্তর প্রদেশের এবার লোকসভার নির্বাচন নিয়ে জনমত সমীক্ষা করে ইন্ডিয়া টিভি এবং সিএনএক্স।  সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে।

সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, ৭৩টি আসন থেকে এবার বিজেপির আসন ৪৪টি কমে দাঁড়াতে পারে ২৯টি আসন।

এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৭১টি আসন। আর ২টি আসন পেয়েছিল বিজেপির জোটসঙ্গী ‘আপনা দল’। সব মিলিয়ে ছিল ৭৩টি আসন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশ। এই দুই প্রদেশের কর্ণধার মনে করা হয় এই দুই নেত্রীকে। কাজেই ভারতের এই লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দোপাধ্যয় ও মায়াবতীকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি