ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রহস্যে ঘেরা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল

প্রকাশিত : ১৮:৫৩, ১৮ মে ২০১৯

এই বিশাল পৃথিবীতে বিশ্ময়কর এক রহস্যের নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। প্রায় ৬০০ বছরের সে রহস্য যেন শেষ হচ্ছে না। ফলে মানুষের জিজ্ঞাসা ও বিস্ময়ের কোন কমতি নেই। এই রহস্যময় ট্রায়াঙ্গেল যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে যে ধাঁধার সৃষ্টি করছে তার কোন সমাধানই যেন জানা নেই বিজ্ঞানীদের। লোম হর্ষক বিভিন্ন ঘটনা এবং এ্যাভেঞ্চারাস গল্পই জন্ম দিয়েছে এ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল।

 মিয়ামি, বারমুডা এবং পুয়ের্তো রিকো দ্বারা বেষ্টিত বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল আটলান্টিক মহাসাগরের একটি পৌরাণিক অংশ যেখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়। প্রায় ৫ লক্ষ বর্গ কিমি এই ত্রিভূজ বলয় একের পর এক ঘটনার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। আটলান্টিক মহাসাগরের তিন প্রান্ত দিয়ে সীমাবদ্ধ ত্রিভূজাকৃতির একটি বিশেষ এলাকা যেখানে বহু জাহাজ ও বিমান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়। যার নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। তবে এর কুখ্যাতির জন্য একে `শয়তানের ত্রিভূজ`-ও বলা হয়। তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা আর এক প্রান্তে পুয়ের্তো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ অবস্থিত।

অনেকে মনে করেন ওই সব অন্তর্ধানের কারণ নিছক দুর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হলো কোন অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি। এই অঞ্চলের রহস্যের মূল কারণ হলো এখানে কোনও জাহাজ বা বিমান একবার প্রবেশ করার পরই তার বেতার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, দিক নির্দেশক কম্পাস ভুল দিক নির্দেশ করতে থাকে। একসময় জাহাজটি বা উড়োজাহাজটি অদৃশ্য হয়ে যায়। যে জাহাজ বা বিমান একবার এর মধ্যে ঢুকেছে, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পঞ্চদশ শতকে ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন ইউরোপ থেকে আমেরিকায় যান, তখনই তিনি সাগরের এই অদ্ভুত এলাকাটিকে লক্ষ করেছিলেন। ১৪৯২ সালের ১১  অক্টোবর এই জায়গাটি নিয়ে তিনি অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, তার জাহাজের নাবিকেরা  দূর থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অঞ্চলের দিকে আলোর নাচানাচি আর আকাশে ধোঁয়া দেখেছিল।

বিভিন্ন সংকলন থেকে জানা যায়, যখনই কোন বিমান বা জাহাজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এ  গিয়েছে , তখনই সেগুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যায় কিংবা সেখান থেকে যদি ফিরেও আসে, তবুও মুখোমুখি হয় অদ্ভুত সব ঘটনার। ব্ল্যাক হোলের মত সবকিছু নিজের কাছে টেনে নিতে চায় বলে সবার কাছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এক রহস্যের নাম। কিছু ঘটনার কারণে এই রহস্য যেন আরও গভীর হয়ে উঠেছে।

মারি সেলেস্ত  নামের একটি মালবাহী জাহাজ ১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক বন্দর থেকে রওনা হয়। অনেক দিন হয়ে যাওয়ার পরও জাহাজটি যখন গন্তব্যে পৌঁছায়নি, তখন শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অনেক চেষ্টার পর জাহাজটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় খুঁজে পাওয়া গেল ভাসমান অবস্থায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো জাহাজে সব মালপত্র, খাবার দাবার সবকিছু একদম অক্ষত ছিল, শুধু ১১ জন কর্মী উধাও।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, মার্কিন সরকার ব্রিটিশদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএস সাইক্লোপস নামক একটি জাহাজ পাঠায়। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জাহাজটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছে এসে কোন চিহ্ন না রেখেই উধাও হয়ে যায় এর সঙ্গে থাকা ৩০৬ জন ক্রু নিয়ে। ঠিক একইভাবে একই জায়গা থেকে ১৯৪১ সালে গায়েব হয়ে যায় ইউএসএস প্রটিয়াস ও ইউএসএস নিরিয়াস নামের দুটি জাহাজ।

তবে জাহাজের ঘটনাগুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো, মেরিন সালফার কুইন নামক জাহাজটির  নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি। ১৫ হাজার টন গলিত সালফার আর ৩৯ জন ক্রু নিয়ে ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে রওনা হয় জাহাজটি। ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখে জাহাজটি যখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থান করছিল তখন হঠাৎ রেডিও ট্রানস্মিশন অফ হয়ে যায়। ৬০০ ফুটের সে জাহাজটি তার ক্রদের নিয়ে হারিয়ে গেল।

 

এমএস/ এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি