ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা উদ্ধিগ্ন,ক্ষুব্ধ

প্রকাশিত : ২১:২২, ৮ জুন ২০১৯ | আপডেট: ০০:২২, ৯ জুন ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে গত বৃহস্পতিবার আশিকুল আলম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রেই এমন সন্ত্রাসী হামলা চেষ্টার অভিযোগে নাফিস ও আকায়েদ নামে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর একে নিয়ে উদ্ধিগ্ন ও ক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এসব ঘটণায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়ও। এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরী হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সে দেশের বাংলাদেশী নাগরিকরা আরো সচেতনতা বাড়ালে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক, তারেক শামসুর রেহমান বলেন,‘এসব ঘটনার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে একটি খারাপ ধারণা তৈরী হচ্ছে। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী গোষ্ঠী বাংলাদেশের উপর নজরদারী বাড়িয়েছে। এসব ঘটনার কারণে তাদের আরো এসব বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ’

কেন এমন ঘটনা বাড়ছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ যারা এসবের সঙ্গে জড়াচ্ছে তারা বিভ্রান্তিতে পড়ে এসব করছে। এর জন্য আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যারা সিনিয়র সিটিজেন আছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানেরা কোথায় যায়,কার সঙ্গে মিশে এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

 অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত বিশিষ্ট কূটনৈতিক ব্যাক্তিত্ব হুমায়ূন কবির বলেন, ‘এসব ঘটনা কোন ভাবেই ইতিবাচক নয়। এর মাধ্যমে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে  এর জন্য যেটা বেশি দরকার সেটা হলো সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ধরনের ফাঁদে যেন কেউ  পা না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখাটা বেশি জরুরী।

এর কারণে কেমন প্রভাব পড়বে বাংলাদেশি কমিনিউটির উপর-এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘আমি মনে করছি,এটা ব্যাক্তিগত একটা বিষয়,এজন্য এ ঘটনার জন্যই ওই যুবকই দায়ী। আমাদের বাংলাদেশী বংশোদ্রুত অনেকে ভালো অবস্থায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। পুলিশ বিভাগেও রয়েছে অনেকে। তাই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়তো কিছুটা হবে। কিন্তু  বেশি যে বিষয়টি দরকার সেটি হলো সচেতনতা বাড়ানো।   

বিভিন্ন তথ্য থেকে দেখা যায়, কিছু পশ্চিমা দেশে অবস্থানকালেই বাংলাদেশি অধিকাংশ যুবক জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে । বাংলাদেশে থাকাকালে যাদের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং উগ্রতার বিস্তার রোধে উন্নত রাষ্ট্রগুলোরও ব্যর্থতা রয়েছে।

জানা যায়,বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া  আশিকুলক আলমকে পরদিন শুক্রবার  যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে তাকে হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ আনার পাশাপাশি জামিন আবেদনও নাকচ করে দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন দেশটির আদালত। আগামি ২১ জুন নতুন শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই যুবক নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যাকসন হাইটসে থাকেন। বেশ কিছুদিন নজদারিতে ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আশিকুলের যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড রয়েছে।

আটক আশিকুল তার বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। তার আটকের পর প্রশাসন তাদের বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে। আশিকুলকে আদালতে হাজিরের সময় তার বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন। তবে, অনেক চেষ্টার পরও গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেননি তারা।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, আশিকুল আলাপচারিতায় টাইমস স্কয়ারে গ্রেনেড নিক্ষেপের ইচ্ছা প্রকাশের পর বেশ কিছু দিন ধরে নজরদারিতে ছিলেন। ছদ্মবেশে একজন গোয়েন্দা তার পিছু নিয়েছিল।

ওই গোয়েন্দার সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার বিষয়ে আলোচনা করেন আশিকুল। সিরিয়াল নম্বর নষ্ট করা আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে চান তিনি। সেই মোতাবেক আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল তাকে। এরপর এফবিআই এজেন্ট ও নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট টেররিজম টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে।

স্থানীয় বাংলাদেশি সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি বলেন, গ্রেফতার আশিকুল বেশ কয়েক মাস ধরেই হামলার পরিকল্পনা করে আসছিল। এ লক্ষ্যে সে বছরের শুরুতে দুটি অস্ত্র কিনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে আশিকুল থাকতেন। কিন্তু লিফ্ট কিংবা করিডোরে কারো সঙ্গে দেখা কথা বলতেন না তিনি। আশিকুল পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরিও করতেন। তার বাবা ভ্যান্ডল ম্যানেজমন্টের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় বাংলাদেশিদের মাঝে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার পাশাপাশি ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।  আশিকুলকে গ্রেফতার করতে এফবিআই বাড়িটি ঘিরে ফেললে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। 

এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ম্যানহাটনে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে নিজের গায়ে থাকা বোমা ফাটাতে গিয়ে নিজের হাত ও তলপেট পুড়ে ফেলে বাংলাদেশি বংশদ্ভুত আকায়েদ (২৭)।  আকায়েদের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের অপরাধ সংগঠিত করার অভিযোগ আনে সেদেশের প্রশাসন। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালত তাকে দোষি সাব্যস্ত করেন।

এ ছাড়া সাত বছর আগে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেফতার করে এফবিআই।

কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস (২১) নামের ওই বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালে সে মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত নাফিসকে  ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

পরে সে দোষ স্বীকার করে দেশটির বিচার বিভাগের কাছে এক চিঠি দিয়েছিল। তদন্তকারীরা বলেন, নাফিস বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে। এরপর একটি গাড়িতে প্রায় এক হাজার পাউন্ড নকল বিস্ফোরক ভরে ব্যাংকের সদর দরজার সামনে গিয়ে বোমাটি ফাটানোর চেষ্টা করে। নাফিস ভেবেছিল, সত্যিকারের বোমা ফাটাচ্ছে সে। একটি মোবাইলের মাধ্যমে বোমাটি বিস্ফোরণের চেষ্টা করে।

এর আগেও বিভিন্ন সময় বিদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাইফুল হক সুজন, আতাউল হক সবুজ, সাইফুল্লাহ ওজাকিসহ আরও কিছুসংখ্যক বাংলাদেশির নাম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

তবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারে তথ্য রাখেন দেশের এমন একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, গত অর্ধযুগে বিদেশে যেসব বাংলাদেশি নাগরিকের উগ্রপন্থায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেশে থাকাকালীন জঙ্গি তৎপরতার কোনো রেকর্ড ছিল না। তারা বিদেশে গিয়েই `সেলফ মোটিভেটেড` বা কারও মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছে।

 আই/এনএম/

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি