ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ছেলের দেহ আগলে বন্ধ ঘরে বৃদ্ধা মা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৮, ৩ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৯:১৫, ৩ আগস্ট ২০১৯

বন্ধ ঘর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ আসছে। এলাকার লোকজন এ জন্য পুলিশে খবর দিল। পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে দেখে, একটি ঘুপচি ঘরে খাটের উপরে পাশাপাশি শুয়ে আছেন বৃদ্ধা মা ও ছেলে। যুবকের দেহটি ফুলে তাতে পচন ধরে গিয়েছে। এম আর বাঙুর হাসপাতালে ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করা হয়। সত্তরোর্ধ্ব তার বৃদ্ধা মাকেও ওই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছিল।

জন্ডিসে ভুগে বেশ কয়েক দিন আগেই মৃত্যু হয়েছিল ছেলের সোমনাথ কুণ্ডুর। মৃত যুবক সোমনাথের মা উত্তমা কুণ্ডু শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ছেলের দেহ ফুলে গিয়ে পচন ধরলেও হুঁশ ফেরেনি মায়ের। ছেলের পচাগলা দেহ পাশে নিয়েই বিছানায় শুয়ে ছিলেন টানা বেশ কয়েক দিন। শুক্রবার রাতে প্রতিবেশীদের থেকে খবর পেয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁদের উদ্ধার করে নেতাজি নগর থানার পুলিশ।

দুই এক দিন ধরেই নেতাজিনগর থানা এলাকার রামগড়ের একটি বাড়ির একতলা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। বাড়ির মালকিন জানান, দুদিন আগে দুর্গন্ধ পেলেও তেমন একটা সন্দেহ হয়নি তার।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় চার বছর আগে থেকে ছেলে সোমনাথকে নিয়ে ওই বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকতে শুরু করেন উত্তমা কুণ্ডু। স্বামী আগেই গত হয়েছেন। একমাত্র ছেলে বছর উনচল্লিশের সোমনাথকে নিয়ে সেখানে থাকতেন উত্তমা দেবী। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও বেশ সুসম্পর্কই ছিল সোমনাথের। শেষবার তাকে প্রায় সাত দিন আগে পাড়ায় দেখা গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। এরপর থেকেই টানা দরজা বন্ধ। বাইরে দেখা যায়নি মা ও ছেলের কাউকেই। এরপরই ঘরের ভেতর থেকে পচা দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করলে সন্দেহ জাগে প্রতিবেশীদের মনে। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় বাসিন্দারাই খবর দেন পুলিশে।

‌খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় নেতাজিনগর থানার পুলিশ। বারবার দরজা খুলতে বলা হলেও ভিতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ মেলেনি। এরপরই দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে পুলিশ। দেখা যায় ছোট্ট ঘরের বিছানায় পাশাপাশি পড়ে রয়েছেন মা ও সন্তান। ছেলে সোমনাথের দেহ রীতিমতো পচন ধরেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুজনকে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় এমআর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে ছেলের সোমনাথ কুন্ডুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মা উত্তমা কুণ্ডুকে হাসপাতালে ভর্তি করে শুরু হয় চিকিৎসা।

পুলিশ জানিয়েছে, উত্তম দেবী শারীরিক ভাবে এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে তিনি উঠে দরজা খোলার মতো শারীরিক পরিস্থিতিতেও ছিলেন না। বিগত দু-তিন দিন ধরে তিনি খাবারও খেতে পারেননি বলে অনুমান পুলিশের। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি তিনি মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন বলে অনুমান তদন্তকারী আধিকারিকদের। ছেলে সোমনাথ বিগত কয়েক দিন ধরে জন্ডিসে ভুগছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে ছেলে মারা যাওয়ার পরেও কেন তাঁর সৎকার না করে কেন দেহ আগলে এতদিন পড়েছিলেন মা উত্তম দেবী, তার খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি