ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

কাশ্মীর ইস্যুতে মামলার প্রস্তুতি শাহ ফয়সালের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩২, ৬ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১১:৫৭, ৬ আগস্ট ২০১৯

কাশ্মীরের জনগণের বিশেষ মর্যাদা তুলে নিয়েছে ভারতের পার্লামেন্ট। গতকাল সোমবার কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টে আইনি পরীক্ষার মুখে পড়তে চলেছে।

প্রাক্তন আইএএস শাহ ফয়সালের তৈরি নতুন রাজনৈতিক দল জম্মু-কাশ্মীর পিপল্‌স মুভমেন্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে।

দলের নেত্রী শেহলা রশিদ বলেন, আমরা এ দিনের রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাব।

বস্তুত ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ রায় দেয়, ৩৭০ অনুচ্ছেদ আর অস্থায়ী নয়। দীর্ঘ সময় সংবিধানের অংশ হিসেবে থাকায় তা প্রায় স্থায়ী অনুচ্ছেদের মর্যাদা পেয়েছে। এই রায়কে ভিত্তি করেও মামলার কৌশল সাজানো হতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ।

মোদি সরকারের যুক্তি, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদেই রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তিনি যে কোনও সময় এই অনুচ্ছেদ রদ করে দিতে পারেন। কারণ এই অনুচ্ছেদ অস্থায়ী। তাই ৩৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক নির্দেশিকা জারি করেছেন। সংবিধানের ৩৬৭ অনুচ্ছেদে অন্য অনুচ্ছেদগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা বলা হয়।

রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকায় সেই ৩৬৭ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংবিধান সভাকে ‘জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা’ বলতে হবে। সরকারের ব্যাখ্যা, জম্মু-কাশ্মীরে এখন বিধানসভা নেই। বিধানসভার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতি ওই নির্দেশিকা জারি করেছেন। একইসঙ্গে রাজ্যসভাতেও প্রস্তাব আনা হয়েছে যে, সংসদ রাষ্ট্রপতির কাছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সুপারিশ করছে। শেহলার মতে, এই পদক্ষেপ সংবিধান নিয়ে ধোঁকাবাজি।

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদকে কাজে লাগিয়েই ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ রয়েছে। তিনি তা খোলসা করতে রাজি হননি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভে পাশ হলেও কয়েক কিলোমিটার দূরে গণতন্ত্রের আর একটি স্তম্ভে এর পরীক্ষা হবে।

বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জবাব দিয়েছেন, কিছু বেসরকারি সংস্থা আদালতে যাবে জানি। কিন্তু আমরা সব বাধা কাটিয়ে ফেলব।

মানছেন না সংবিধান বিশেষজ্ঞ লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পি ডি টি আচারিয়া। তার মতে, সংবিধানের এই নির্দেশিকা ‘নাল অ্যান্ড ভয়েড’ বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল আনা। দুই-তৃতীয়াংশর সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই বিল পাশ করিয়ে, ৫০ শতাংশ রাজ্যের অনুমোদন নিয়ে সংবিধান সংশোধন হতো। তারপরে রাষ্ট্রপতি কোনও নির্দেশিকা জারি করতে পারতেন। বিল ছাড়া রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা অকার্যকর।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ সমরাদিত্য পাল বলেন, ৩৭০(৩) ধারা যে সাময়িক, তা সংবিধানেই বলা রয়েছে। দেশের রাষ্ট্রপতি কি কোনও নির্দেশ জারি করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করতে পারেন? সমরাদিত্যবাবু বলেন, সংবিধানেই বলা রয়েছে, তিনি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা করতে পারেন। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি তার সেই ক্ষমতা ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওই অনুচ্ছেদ বাতিল হলে তা নিয়ে আদালতে মামলা করা যায়? সমরাদিত্যবাবু বলেন, মামলা করা যায়। আদালত তা বিচার করে দেখবে।

প্রবীণ আইনজীবী মুকুল রোহতগি অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদেই স্পষ্ট বলা রয়েছে রাষ্ট্রপতি যে কোনও সময়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে দিতে পারেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ অস্থায়ী ছিল। ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকার মাধ্যমে ৩৫এ অনুচ্ছেদ নিয়ে আসা হয়েছিল। এবার আর একটি রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা জারি করে আগের নির্দেশিকা খারিজ করে দেওয়া হল।

তিনি এর মধ্যে কোনও ভুল না দেখলেও প্রবীণ আইনজীবী অমরেন্দ্র শরণের যুক্তি, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার আগে বিধানসভায় আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল। এভাবে তা পাশ করানো যায় না। বিধানসভা থেকে এই প্রস্তাব সংসদে আনার প্রয়োজন ছিল। আদালতে চ্যালেঞ্জ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ জারি করা বা খারিজ করে দেওয়ারও ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে।

পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমেই জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল। সেই ৩৭০ রদ হলে জম্মু-কাশ্মীর কীভাবে ভারতের অংশ থাকবে?

প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভের মতে, ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ করে দেওয়া হয়নি। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যে সব ব্যবস্থা ছিল, সেগুলো রদ করা হয়েছে। যেমন ওই ধারায় বলা ছিল, রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকার মাধ্যমে ৩৭০ অনুচ্ছেদের ব্যবস্থা তৈরি হবে। তাই ১৯৫৪-র রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকার মাধ্যমে ৩৫এ অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এবার নতুন নির্দেশিকা এনে পুরনো নির্দেশিকা বাতিল করে দেওয়া হল।

৩৫এ অনুচ্ছেদেই বলা ছিল, জম্মু-কাশ্মীরের বাইরের কেউ সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি পাবেন না। জমিজমা কিনতে পারবেন না। কিন্তু একইরকম নিয়ম উত্তরাখণ্ড, হিমাচল থেকে অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের মতো রাজ্যগুলোতেও রয়েছে। সেখানেও বাইরের কেউ জমি কিনতে পারেন না। অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের নাগাল্যান্ড, মিজোরামের অনেক অংশে যেতে আলাদা অনুমতি নিতে হয়। মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবের প্রশ্ন ‘এর পর কি বিজেপি শাসিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জন্যও বিশেষ নিয়ম তুলে দেবে?’

তার মতে, অস্থায়ী হলেও রাজ্যের বাসিন্দাদের ইচ্ছে ছাড়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা যায় না। তাই সংসদে ৩৭০ রদ করার প্রস্তাব পাশের পরে রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা জারি হলেও আদালত তা খারিজ করতে পারে।

সূত্র: আনন্দবাজার


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি