এবার পশ্চিমবঙ্গকে ভাঙার দাবিতে সোচ্চার পাহাড়িরা
প্রকাশিত : ২৩:৪৮, ৬ আগস্ট ২০১৯
লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সংখ্যারিষ্ঠতার জেরে রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। সাবেক জম্মু ও কাশ্মীর এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একটি জম্মু-কাশ্মীর, অপরটি লাদাখ- দুটিই এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের পর প্রাদেশিকতা মাথাচাড়া দিতে পারে এই আশঙ্কা করছিলেন বিরোধী শিবিরের অনেকেই। সেই আশঙ্কাকে একপ্রকার সত্যি করে ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব হল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার গুরুংপন্থীরা। গুরুংদের দাবিকে সমর্থন করেছে জিএনএলএফও। এমনকী তৃণমূলপন্থী মোর্চা নেতা বিনয় তামাংও এ দাবিকে সমর্থন করছেন।
দার্জিলিং'র রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি, জম্মু-কাশ্মীরের ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গকে ভেঙে পৃথক গোর্খাল্যান্ড তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে নবগঠিত গোর্খাল্যান্ডকে বিধানসভা-সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দিতে হবে।
সোমবার কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং গোটা রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোপন আস্তানা থেকে বিজেপি সরকারকে এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা প্রেরণ করেন পলাতক মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। তিনি বলেন, “কেন্দ্র সরকারকে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি দার্জিলিং সমস্যার সমাধানও এইভাবে হবে। দার্জিলিংকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করলে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ হবে।”
তার দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন গত লোকসভা নির্বাচনে বিমল গুরুংদের জোট শরিক জিএনএনএলএফ–এর মুখপাত্র তথা বিধায়ক নীরজ জিম্বাও। তিনি বলেন, দার্জিলিংয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি। বিজেপি সরকার এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে রাজনৈতিক মতাদর্শে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করলেও এই ইস্যুতে গুরুংদের দাবিকে সমর্থন করছেন তৃণমূলপন্থী গোর্খা নেতা তথা জিটিএ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিনয় তামাংও। তিনিও ফেসবুকে তার নিজস্ব পেজে দার্জিলিংকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি জানিয়েছেন। তবে তিনি বিজেপিকে দ্রুত এ নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছেন।
বিমল গুরুংপন্থী নেতা রোশন গিরি দেশটির সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, “আমরা অনেক বছর ধরে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানিয়ে আসছি। বিজেপির ইস্তেহারেও সেকথা উল্লেখ রয়েছে। বিমল গুরুং ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা মনে করি এটাই সঠিক সময় গোর্খাল্যান্ডকে বিধানসভা-সমেত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার। আমরা এই দাবিতে দ্রুত আন্দোলনে নামছি।”
এদিকে পরোক্ষভাবে হলেও এই প্রস্তাবকে সমর্থন করছেন বিজেপি সাংসদ রাজু সিং বিস্তও। তিনি বলছেন, বিজেপি গোর্খাদের সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আশা করি ২০২৪-এর আগেই তা পালন হবে।
যদিও, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব পুরোটাই কেন্দ্রের হাতে বলে দায় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। যার ফলে, দার্জিলিং ইস্যুতে বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে বিরোধীরা।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব বলেন, “বিজেপিকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। দল হিসেবে এক রকম এবং সরকার হিসেবে অন্যরকম বিবৃতি ও পদক্ষেপ মানুষ মেনে নেবে না। দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাকে কোনওরকমভাবে কাটা ছেঁড়া করার চেষ্টা করা হলে, শেষ রক্ত দিয়ে তা প্রতিরোধ করব।” -সংবাদ প্রতিদিন।
এনএস/কেআই
আরও পড়ুন