ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রাস্তায় নামবেন কাশ্মীরিরা, তবে…

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩০, ৮ আগস্ট ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে সেখানে ছিল ৩৭০ ধারা। সোমবার তা প্রত্যাহার করে নরেন্দ্র মোদি সরকার। এই ধারা বাতিলের পর উদ্বিগ্ন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ।

ভারতের এমন একতরফা সিদ্ধান্ত মানছে না কাশ্মীরের মানুষ। তারা ভারতকে আর বিশ্বাস করে না। তাদের মনে হচ্ছে, সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। কারণ এই ধারা থাকায় তাদের জন্য একটা আস্থার জায়গা ছিল।

অঞ্চলটির বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে সেখানকার মানুষ মনে করছেন তারা স্বাধীনতা হারিয়েছেন। এমনটাও কেউ বলছেন, যে চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীরের ভারত-ভুক্তি হয়েছিল, সেটাই তো এখন আর রইল না।

কাশ্মীর রোববার রাত থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, কারফিউ চলছে, দোকান, স্কুল কলেজ সব বন্ধ। বন্ধ মোবাইল আর ল্যান্ডলাইন ফোন, ইন্টারনেট পরিষেবা, এমনকি কেবল টিভিও।

বিবিসির সংবাদদাতা জুবেইর আহমেদ বেশ কয়েকদিন চেষ্টার পরে কোনওক্রমে সেখানকার পরিস্থিতি আর মানুষের কথা রেকর্ড করে দিল্লিতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি জানাচ্ছেন, রাজধানী শ্রীনগরে নিরাপত্তা বাহিনী গাড়িতে চড়ে মাইকে বলতে বলতে যাচ্ছে যে কারফিউ জারি রয়েছে, কেউ যেন বাড়ির বাইরে না বের হন।

রাস্তাঘাট শুনশান কদিন ধরেই। প্রতিটা রাস্তায়, গলির মুখে নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা।

জুবেইর আহমেদ বলছিলেন, শ্রীনগর বা তার আশপাশের এলাকায় আমরা যেখানেই যাচ্ছি, সেখানে মানুষজন প্রায় চোখেই পড়ছে না। যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি, তারা সবাই সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

‘বেশিরভাগ নেতাই আটক হয়ে রয়েছেন, তারা ছাড়া পাওয়ার পরে যেভাবে নির্দেশ দেবেন, সেইভাবে প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন মানুষ, এমনটাই বলছেন তারা।’

দিল্লির মানবাধিকার সংগঠন রাইটস এন্ড রিস্কস অ্যনালিসিস গ্রুপের প্রধান সুহাস চাকমা বলছিলেন, এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় মানুষদের সমর্থন পাবে না বুঝেই সরকার গোটা রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে দিয়েছে।

সুহাস চাকমা বলেন, সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে স্থানীয় মানুষের সমর্থন নেই। সেজন্যই যে কোনও রকম প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য এক রকম একনায়কতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে সেখানে। কিন্তু হাতি মারা গেলে কি লুকিয়ে রাখা যায়?।

বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে বিবিসি। আবার কিছু এলাকায় বিক্ষোভ চলছে, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেইসব খবর যাচাই করার উপায় নেই।

কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষ এখনও খুব ভাল করে জানেনই না, সংবিধানের যে ধারা দুটির মাধ্যমে তাদের রাজ্যটিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

তাদের কানে যেটুকু এসেছে, তাতেই তাদের মনে হয়েছে, যে স্বাধীনতা তারা ভোগ করতেন, সেটা হারালেন তারা। বারামুলার এক বয়স্ক লোক বিবিসিকে জানান, ওই ধারা দুটি আমাদের কাছে স্বাধীনতার মতো ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে আমি যেন স্বাধীনতা হারালাম। আমি এখন আর স্বাধীন নই।

আরেক যুবকের কথায়, ভারত সরকারের যা ভাল মনে হয়েছে তা করুক। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরকে পুরোপুরি বন্ধ কেন করে দিল সরকার! তার মানেই এখানকার মানুষের বিরুদ্ধে কোনও পরিকল্পনা এটা। ৩৭০ আর ৩৫এ - এই দুটি ধারার মাধ্যমেই তো কাশ্মীরের ভারতভুক্তি হয়েছিল। সে দুটি তুলে দেওয়ার অর্থ বিয়েটাই তো ভেঙ্গে গেল।

অন্যদিকে, বাইরে থেকে ওই রাজ্যে কাজে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ কোনওভাবে সেখান থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন, বাস স্টেশনে তারা বেশ কয়েকদিন ইতিমধ্যেই কাটিয়ে দিয়েছেন। কোনও খাবার নেই, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না তারা।

একজন বলছিলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে বলা হচ্ছে তাড়াতাড়ি চলে যেতে। অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে।

আরেকজন বলছিলেন, আমি বিহার থেকে এসেছি কাশ্মীরে রঙ মিস্ত্রির কাজ করতে। আগের দিন থেকে চেষ্টা করছি বাস ধরার। কিন্তু গাড়ি পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার লোক ফিরতে চাইছে।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি