ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

জানা গেলো সেই মসজিদে হামলার আসল কারণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৯, ১৫ আগস্ট ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জনে পৌঁছেছে। নিহত লোকজনের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশি। হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ চারজনকে আটক করেছে নিউজিল্যান্ড পুলিশ। 

বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে একটি গাড়ি থেকে। নিউজিল্যান্ডের কোথাও কোনো মসজিদে মুসলিমদের যেতে নিষেধ করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে মসজিদগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছিল। শহরজুড়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।নিহতদের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশি রয়েছে। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ।


তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মধুরহাইল্লা গ্রামে বলে জানা গেছে। এ হামলায় ড. সামাদের স্ত্রীও নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দিন বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন। তার তিন ছেলে রয়েছে। তিনি নিউজিল্যান্ডে সিটিজেনশিপ নিয়ে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। আরেক ছেলে বাংলাদেশেই থাকেন।নিহত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদের সহকর্মী কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ পাঁচ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। ক্রাইস্টচার্চের হামলার ঘটনায় ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ ও তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে ভয়াবহ হামলা থেকে ভাগ্যজোরে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এই হামলা চালিয়েছে নিজেকে ব্রেন্টন টেরেন্ট বলে পরিচয় দেয়া এই হামলাকারী ২৮ বছর বয়সী এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক।অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রাফটন শহরের অধিবাসী সে। হামলার আগে সে টুইটারে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ শিরোনামে ৭৩ পৃষ্ঠার দীর্ঘ একটি মেনোফেস্টো প্রকাশ করে।নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলেও দাবি করা ব্রেন্টন টেরেন্ট কেন এই হামলা চালিয়েছেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা। অস্ট্রেলিয়ার কিছু গণমাধ্যম বলছে, ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল সুইডেনের স্টকহোম শহরে জঙ্গিদের ট্রাক চাপায় হতাহতের ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই নাকি টেরেন্ট এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।এই ধারণার পেছনে হামলাকারীর রাইফেল লেখা কিছু শব্দ যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে নিউজ ডট কম এইউ, টাইমস নাও এর মতো মিডিয়াগুলো।

টেরেন্টে যে রাইফেল নিয়ে এই হামলা চালান, সেটার গায়ে কিছু শব্দ লেখা ছিল। হামলার ভিডিওতে যে শব্দগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেগুলো হলো, ‘ To take revenge for Ebba Akerlund’।এবা আকারলাউন্ড নামের ১২ বছরের সুইডিশ মেয়েটি ছিল শ্রবণ প্রতিবন্ধী। স্কুল থেকে ফেরার পথে সে স্টকহোমের সেই ট্রাকচাপায় সে প্রাণ হারায়। এবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই ক্রাইস্টচার্চে হামলা করে টেরেন্টে। তার রাইফেলের লেখা এবং তার টুইটার অ্যাকাউন্টের বক্তব্য থেকে এই ধারণা করছে গণমাধ্যম।প্রতিশোধাত্মক এই ঘটনা ইতিমধ্যেই শান্তিকামী মানুষের মনে ভিন্ন এক শংকা জাগিয়ে দিয়েছে। এভাবে যদি প্রতিটি ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়া শুরু হয়; তবে সারাব পৃথিবী একসময় নরকে পরিণত হবে।নিজেকে ব্রেনটন ট্যারেন্ট বলে পরিচয় দেয়া এক হামলাকারী নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়ে একটি ম্যানিফেস্টোতে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি ওই হামলা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।


কোথাও কোথাও বলা হয়েছে ৩৭ পাতার ম্যানিফেস্টো আবার কোথাও বলা হয়েছে ৭৩ পাতার। নিজেই ওই ম্যানোফেস্টো অনলাইনে প্রকাশ করেছেন ব্রেনটন ট্যারেন্ট। এর পুরোটাতেই ইসলামপন্থি জঙ্গি এবং অভিবাসীদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন তিনি। অপরদিকে, শ্বেতাঙ্গদের প্রশংসা করা হয়েছে।পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার জুম্মার নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লিদের ওপর হামলা চালানো হয়। মুসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়।হামলা চালানোর সময় সামাজিক মাধ্যমে লাইভে ছিলেন ওই হামলাকারী। ১৭ মিনিট ধরে ওই হামলার লাইভ ভিডিও প্রচারিত হয়। ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান-বংশোদ্ভূত ওই হামলাকারী নিজেকে সাধারণ শ্বেতাঙ্গ নাগরিক বলে উল্লেখ করেছেন।নিজের লেখা ওই ম্যানোফেস্টোতে ব্রেনটন জানিয়েছেন, তিনি একটি নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজের পরিবারের লোকজনের ভবিষ্যত নিশ্চিতের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপের মাটিতে সরাসরি অভিবাসীদের সংখ্যা কমাতেই তিনি এই হামলা চালিয়েছেন। এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে তিনি অভিবাসী ও ইসলামপন্থি জঙ্গিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, এই হামলা চালানো হয়েছে তাদের এটা দেখানোর জন্য যে, আমাদের দেশ কখনওই তাদের হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন শ্বেতাঙ্গও বেঁচে আছেন ততক্ষণ আমাদের দেশ আমাদেরই। 

তারা কখনোই আমাদের ভূমি দখল করতে পারবে না। তারা কখনোই আমাদের লোকজনের জায়গা দখল করতে পারবে না। দু’বছর ধরেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন ব্রেনটন। তিনমাস আগেই ক্রাইস্টচার্চে হামলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে নিউজিল্যান্ডই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার ওই বক্তব্যে তিনি ইসলামপন্থি জঙ্গি ও অভিবাসীদের ‘হামলাকারী’ উল্লেখ বলেন, নিউজিল্যান্ডে হামলার মাধ্যমে তিনি সবার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই ‘হামলাকারী’রা আমাদের দেশে থাকবে পৃথিবীর কোথাও আমাদের জন্য নিরাপদ হবে না। এমনকি বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলও না। শ্বেতাঙ্গদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শ্বেতাঙ্গ শিশুদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিদেশি ‘হামলাকারী’দের হাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন ব্রেনটন।ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে নিহত ৪৯জনের মধ্যেও অন্তত দুজন শিশু বলে জানা গেছে। নৃশংস এই হামলার পর ধর্মের নামে মানুষ হত্যা বন্ধের দাবি তুলেছেন শান্তিকামী মানুষ।

 

টিআর/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি