ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

আসাম পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছে ভারতের রাজনীতিকরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪০, ৩১ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ২১:৫৯, ৩১ আগস্ট ২০১৯

১৯ লাখেরও বেশি মানুষের বাদ পড়ার পর নাগরিকত্বের এ তালিকা নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ভারতজুড়ে বহু হিন্দু আসামের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রশংসা করে বলেছেন, অন্য রাজ্যগুলো যা করার 'সাহস' পায়নি, আসাম সরকার সেটাই করে দেখিয়েছে।

কিন্তু এই প্রক্রিয়ার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো। তারা বলেছে, নরেন্দ্র মোদির সরকার বহু পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ও লাখ লাখ মানুষকে রাতারাতি রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত করেছে।

বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, এই তালিকা মানুষের মধ্যে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে।

প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই তালিকার সবচেয়ে সরব সমালোচকদের একজন। তিনি আশঙ্কা করছেন, এই প্রশ্নে 'রক্তগঙ্গা' বয়ে যাবে এবং এই প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা পরিহাস।

এমনকি রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজিপি নেতারাও বহু প্রকৃত নাগরিকের নাম ওই তালিকা থেকে বাদ পড়ার কথা বলছেন। রাজ্যের মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বাস শর্মা বলেন, ‘তারা ১৯৭১ সালের আগে শরণার্থী হিসেবে এলেও কর্তৃপক্ষ তাদের শরণার্থী সনদ নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেনি।’

এর আগেও এনআরসি’র উপর তার আস্থা নেই বলে জানিয়েছিলেন বিজেপির এই নেতা।

আরেক বিজেপি নেতা এমএলএ শিলাদিত্য দেব এক দণ্ড বাড়িয়ে বলেন, নাগরিকপঞ্জি ‘হিন্দুদের বের করার এবং মুসলমানদের সাহায্য করার চক্রান্ত’।

কিন্তু স্থানীয় ভারতীয় কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, তারা 'মুসলমানদের লক্ষবস্তুতে' পরিণত করছেন না। তবে এনআরসির প্রধান প্রতীক হাজেলা বিবিসির কাছে স্বীকার করেছেন যে, যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তারা 'ভিন্ন ধর্ম ও গোষ্ঠীর মানুষ'।

যদিও স্থানীয়ভাবে আসামের আদি বাসিন্দা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ অসমীয়ারা এই প্রক্রিয়াকে জোরালোভাবে সমর্থন করছেন। 

উল্লেখ্য, অসমীয়াদের মধ্যে নানা ধরনের জাতি ও ভাষা গোষ্ঠী এবং উপজাতি রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলোর সবার ভাষা অসমীয়া হলেও তাদের ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বড় অংশ হিন্দু এবং মুসলমান।

এদের মধ্যে স্থানীয় হিন্দুরা বিপুলভাবে এনআরসির সমর্থক। কিন্তু স্থানীয় মুসলমানরা এ নিয়ে কিছুটা নীরব। কারণ তাদের ভয় এ নিয়ে মুখ খুললে তাদেরও বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে।

আর তাদের এই আশঙ্কার মূলে রয়েছে আসামের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার প্রধানের বক্তব্য যেখানে তিনি খোলাখুলিভাবে বলেছেন যে, তিনি মুসলমান অভিবাসীদের চেয়ে হিন্দু অভিবাসীদের প্রাধান্য দেবেন।

এনআরসি প্রক্রিয়াটি কেমন ছিল?
নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রক্রিয়া থেকে চমকে যাওয়ার মতো ফলাফল দেখতে পাওয়া গেছে। কেননা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, বর্তমান রাজনৈতিক নেতা এমনকি কিছু সরকারি কর্মকর্তাও ওই তালিকায় তাদের নাম খুঁজে পাননি।

সামান্য বানান ভুলের জন্য আবেদনকারীদের দলিলপত্র খারিজ করে দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, কোন পরিবারের এক সদস্যের নাম তালিকায় রয়েছে, কিন্তু বাদ পড়েছেন অন্য সদস্য।

এমনিতেই ভারতের আসাম রাজ্যটি নিয়মিতভাবে বন্যার শিকার হয়। যে কারণে নষ্ট হয়ে গেছে বহু পরিবারের সরকারি কাগজপত্র। দলিলপত্র সংরক্ষণের দুর্বলতা, অশিক্ষা এবং অর্থ না থাকায় মামলা করতে পারেনি বহু পরিবার।

এসব পরিবার ও আন্দোলনকারীরা বলছে, এই অনিশ্চয়তার চাপ নিতে না পেরে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে।

আসামের প্রতিষ্ঠান সিটিজেন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস-এর নেতা জামির আলী বলছেন, 'মানসিক আঘাত ও চাপ' সইতে না পেরে আসামে ৫১ ব্যক্তির আত্মহত্যার তথ্য তাদের হাতে রয়েছে। বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের পর। যে সময়ে নাগরিক তালিকার প্রথম খসড়াটি প্রকাশিত হয়েছিল।

এদিকে, বর্তমান পরিস্থিতে গণবহিষ্কারের ঘটনা ঘটবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনও পরিষ্কার না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যে বহিষ্কার ঘটবে, তার সম্ভাবনাও কম।

এনআরসি তালিকা থেকে যারা বাদ পড়লেন তাদের নাগরিকত্বও সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে না। এর বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য তারা ১২০ দিন সময় পাবেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বহুবার বলেছেন যে, আসামের অবৈধ মুসলমান অভিবাসীদের রাজ্য থেকে বহিষ্কার করা হবে।

তবে সৌতিক বিশ্বাস নামে বিবিসির এক সাংবাদিক বলছেন, এসব মানুষকে যে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না, তা প্রায় নিশ্চিত। তিনি বলছেন, এর পরিবর্তে ভারত রোহিঙ্গাদের মতো 'নতুন একদল রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক তৈরি করে ফেলতে পারে' এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

ভারতের এ অঞ্চলটির নিরাপত্তা বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ শেষাদ্রি চারি বলছেন, বাংলাদেশ বরাবরই এই ইস্যুটিকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবেচনা করে এবং বলে যে, এটা দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক কোন বিষয় নয়।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তেরই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ভারত পাঠাতে চাইলেও একজন অবৈধ অভিবাসীকেও বাংলাদেশ গ্রহণ করবেন না’। সূত্র- বিবিসি। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি